ফ্ল্যাপে লিখা কথাঃ আজকালকার ছেলেমেয়েরা ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার আর ম্যানেজার হতে চায়। তারা বিজ্ঞান পড়ে কিন্তু বিজ্ঞানী হতে চায় না। একশত বছর পূর্বে আইনস্টাইনের দেওয়া সূত্র আজকের সবার কাছে পরিচিত হয়ে উঠেছে এবং তা বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। সূত্রটির নাম-‘থিওরি অফ রিলেটিভিটি।’ আইনস্টাইনের সেই আলোড়ন সৃষ্টিকারী সূত্রটির সম্পর্কে জানতে হলে গণিতের কথাও জানতে হয়। এই সময়ের জনপ্রিয় লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবাল বিজ্ঞানের এই জটিল ও কঠিন বিষয়কে নবম-দশম শ্রেণীর ছেলেমেয়েদের উপযোগী করে সহজ ও প্রাঞ্জল ভাষায় লিখেছেন। বইটি বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ে নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের আগ্রহ সৃষ্টি করে তাদের সৃজনশীলতা, কল্পনাশক্তি এবং বিজ্ঞানমনস্নকতার বৃদ্ধি ঘটাবে। বিজ্ঞানের সত্যিকারের কাহিনী যে বিজ্ঞানের কল্পকাহিনীর চেয়েও আরো রহস্যময় ও চমকপ্রদ-তা এই বইটি পাঠ করলে সহজেই বোঝা যাবে।
ভূমিকাঃ একটা দেশকে গড়ে তুলতে হলে যেমন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ম্যানেজার দরকার ঠিক সেরকম বিজ্ঞানীও দরকার। আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন স্বপ্ন দেখতাম বড় হয়ে বিজ্ঞানী হব। বড় হয়ে যখন বিজ্ঞান নিয়ে একটুআধটু কাজ করতে পেরেছি তখন মনে হয়েছে এর চাইতে মজা আর কী হতে পারে? পৃথিবীতে যতরকম আনন্দ আছে তার মাঝে সবচেয়ে বেশি আনন্দ হতে গবেষণাতে। যারা সেটা করেছে তারা সেটা জানে। আমার খুব মায়া হয় যখন দেখি আজকালকার ছেলেমেয়েরা আর বিজ্ঞানী হতে চায় না-তারা শুধু ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার আর ম্যানেজার হতে চায়। মাঝে মাঝে দুই-একজন যখন বিজ্ঞানী হতে চায়, তাদের বাবা-মায়েরা তখন জোর করে তাদের ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার আর ম্যানেজার তৈরি করে ফেলেন। তাই আমাদের দেশে এখন চমৎকার ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার আর ম্যানেজার আছে, কিন্তু বিজ্ঞানীর খুব অভাব! এই বইটা তাই লেখা হয়েছে বিজ্ঞানী তৈরি করার উদ্দেশ্যে। পৃথিবীর ইতিহাসে বিজ্ঞানের যত আবিষ্কার হয়েছে তার মাঝে অন্যতম হচ্ছে থিওরি অফ রিলেটিভিটি এবং সবচেয়ে চমকপ্রদ ব্যাপার হচ্ছে স্কুলের গণিত জানলেই এই থিওরিটি বোঝা সম্ভব। কাজেই তেরো-চৌদ্দ বছরের ছেলেমেয়েদের লক্ষ করে আমি এই বইটি লিখেছি। কেউ যেন মনে না করে খুব কঠিন একটা জিনিস একটু ছেলেমানুষি করে এখানে বলা হয়েছে। এখানে একেবারে সত্যিকারের থিওরি অফ রিলেটিভিটির কথা বলা হয়েছে, কেউ যদি এটা পড়ে তার সবকিছু বোঝে, সে বুকে থাবা দিয়ে বলতে পারবে, “আমি থিওরি অফ রিলেটিভিটি জানি!” কেউ যদি থিওরি অফ রিলেটিভিটি জানে শুধুমাত্র তা হলেই সে প্রথমবার অনুভব করতে পারবে আমাদের চারপাশের জগৎ কত রহস্যময়। তার চাইতে বড় কথা, সে বুঝবে এই রহস্যের একটি পৃষ্ঠা তার জন্যে উন্মোচিত হয়েছে-সামনে আরো না জানি আরো কত পৃষ্ঠা উন্মোচিত হবার জন্য অপেক্ষা করছে। এই বইটা পড়ে একটা ছেলে বা মেয়েও যদি ঠিক করে “আমি বড় হয়ে বিজ্ঞানী হব”, আমি তা হলে মনে করব আমার পরিশ্রমটা সার্থক হয়েছে!
মুহম্মদ জাফর ইকবাল ঢাকা ২৬ ডিসেম্বর ২০০৭
সূচিপত্রঃ ১. রিলেটিভিটির শুরু ২. আপেক্ষিক সময় ৩. দৈর্ঘ্য সংকোচন ৪. লরেন্টজের রূপান্তর ৫. লরেন্টজের রূপান্তরের ব্যবহার ৬. আপেক্ষিক ভর ৭. স্থানাংকের রূপান্তর ৮. প্রশ্ন এবং উত্তর
বাংলাদেশের কিশোর-কিশোরী পাঠকদের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় নাম মুহম্মদ জাফর ইকবাল। তিনি মূলত এ দেশের একজন বিখ্যাত লেখক, পদার্থবিদ এবং শিক্ষাবিদ। কিশোর সাহিত্য, শিশুতোষ গ্রন্থ, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী, গণিত বিষয়ক বই এর জন্য খুব অল্প সময়েই জনপ্রিয়তা লাভ করেন তিনি। মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৯৫২ সালের ২৩ ডিসেম্বর সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন। মুক্তিযোদ্ধা বাবা ফয়জুর রহমানের চাকরির সুবাদে দেশের বিভিন্ন জেলাতেই তিনি পড়াশোনা করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করে পিএইচডি ডিগ্রী অজর্নের উদ্দেশ্যে স্কলারশিপ নিয়ে পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ে। পিএইচডি সম্পন্ন করে ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজিতে পোস্ট-ডক্টরাল গবেষণা সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে বিখ্যাত বেল কমিউনিকেশনস রিসার্চ ল্যাবেও গবেষক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৯৪ সালে দেশে ফিরে এসে তিনি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে যোগ দেন। মুহম্মদ জাফর ইকবাল এর বই সবসময়ই এ দেশের কিশোর-কিশোরীদের কাছে বিশেষ আবেদন নিয়ে হাজির হয়েছে। কিশোর সাহিত্য, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী, বিজ্ঞান ও গণিত বিষয়ক অজস্র গ্রন্থ দিয়ে তিনি আলোকিত করে তুলেছেন এদেশের অগণিত কিশোর-কিশোরীর মনোজগত। মুহম্মদ জাফর ইকবাল এর বই সমূহ, যেমন- দীপু নাম্বার টু, আমার বন্ধু রাশেদ, আমি তপু, শান্তা পরিবার, দস্যি ক’জন ইত্যাদি ব্যাপক পাঠকপ্রিয়তা পায়। তার বেশ কিছু গল্প পরবর্তীতে নাটক ও চলচ্চিত্র হিসেবে টিভি পর্দায় স্থান করে নিয়েছে। তিনি একজন বিশিষ্ট কলামিস্টও। বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডও তাঁর ছত্রছায়ায় গড়ে উঠেছে। মুহম্মদ জাফর ইকবাল এর বই সমগ্র সকল বইপড়ুয়াকেই আকৃষ্ট করে। সাহিত্যে অসামান্য অবদানের জন্য তিনি বহুবার পুরষ্কৃত হয়েছেন। বাংলা একাডেমি পুরষ্কার (২০০৪) এবং শ্রেষ্ঠ নাট্যকার হিসেবে মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার (২০০৫) সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও, কাজী মাহবুবুল্লা জেবুন্নেছা পদক (২০০২), শেলটেক সাহিত্য পদক (২০০৩), ইউরো শিশুসাহিত্য পদকসহ (২০০৪) অগণিত পুরষ্কার অর্জন করেছেন গুণী এই সাহিত্যিক।