”জোড়া উপন্যাস” বইয়ের প্রথম ফ্ল্যাপ এর লেখা: কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা’র উপন্যাস ‘জন্মজাতি ও ‘মৈনপাহাড়'। জোড়া উপন্যাস। জোড়া উপন্যাস সাহিত্যের এক অভিনব প্রকরণ। একের ভেতর দুই। দুইয়ের ভেতর এক। কবি-ঔপন্যাসিক মুহম্মদ নূরুল হুদা তাঁর জন্ম আঁতুড়ঘর দরিয়ানগর-দইজ্জার সঙ্গে মৈনপাহাড়-পরস্পর বিপরীত সাযুজ্যের এক নিবিড় ঐক্য গড়ে তুলেছেন উপন্যাস জোড়ায়। নব্বই দশকের শুরুতে মুহম্মদ নূরুল হুদার ‘জন্মজাতি ও ‘মৈনপাহাড়’ প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে বিদগ্ধ পাঠক ও * লেখকেরা বিস্মিত হয়েছিলেন। বাংলা ভাষার উপন্যাসে। জাদুবাস্তবতা ও উত্তরাধুনিক প্রান্তমুক্ততার প্রথম জাতক হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করলেন কবি ও ঔপন্যাসিক মুহম্মদ নূরুল হুদা। রমণীদাস, ফিরুজাবিবি, নবি বলী, ইয়াজুজ মাজুজ, কিশাের-এইসব মনুষ্য চরিত্রের সঙ্গে কক্সবাজার, মহেশখালি, দইজ্জা, লইট্টামাছ, সাম্পান, আদিনাথ মন্দির, আদিনাথ পাহাড়ের চূড়া, রহস্যঘেরা পাহাড়ের পথ একে অপরের সঙ্গে জড়িয়ে বিচিত্র আখ্যানে অনবদ্য কাব্যিক গতিতে এগিয়ে গেছে জোড়া উপন্যাসের উপাখ্যান ‘জন্মজাতি’ ও ‘মৈনপাহাড়। হাজার বছর ধরে পাহাড় ও দরিয়া মানবজাতির সঙ্গে মিলনে ও বিরহের যে নিখুঁত উত্থানপতনের সংসার রচনা করে চলেছে, সেই সংসারের প্যাচালী মুহম্মদ নূরুল হুদা অনুভবের রক্ততিলকে ইতিহাস চেতনার নিরীক্ষায় বর্ণনা করেছেন গভীর ধ্যানমগ্নতায়। জোড়া উপন্যাস পাঠ করতে করতে মনে হয় হাঁটছি একই সঙ্গে দরিয়ার প্রবল ঢেউয়ের মাথায় ও মৈনপাহাড়ের চূড়ায় পা রেখে। কবির ভেতরের গদ্যর আরতি অপূর্ব ও তীক্ষ দক্ষতায় কেমন করে নির্বাণ লাভ করে, উপন্যাস দুটিতে তার প্রমাণ রাখলেন কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। কবিতা, গান, লােকগীতি, প্রবচন, গল্প-একই সুতােয় গেঁথে গেঁথে জোড়া উপন্যাসকে দিয়েছেন চিত্তলােকের অনবদ্য মহিমা। ঔপন্যাসিকের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে জোড়া উপন্যাসের পথ বেয়ে শীঘ্রই তৃতীয় ও চতুর্থ মাত্রায় উপনীত হতে পারে উপন্যাসের পর্ব। আমি বিশ্বাস করি- জাতিস্মর চেতনার প্রতীক কবি-কথাকার মুহম্মদ নূরুল হুদা যথাশীঘ্রই তার কথা রাখবেন।
মুহম্মদ নূরুল হুদা ১৯৪৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মোহাম্মদ সেকান্দর ও মাতা আঞ্জুমান আরা বেগম। মূলত কবি তিনি। তবে কথাসাহিত্য, মননশীল প্রবন্ধ ও অনুবাদসহ সাহিত্যের প্রায় সব শাখাতেই তিনি বিচরণশীল। অতিপ্রজ ও সব্যসাচী এই লেখকের স্বরচিত, অনূদিত ও সম্পাদিত গ্রন্থসংখ্যা শতাধিক। মুহম্মদ নূরুল হুদার প্রাপ্ত পুরস্কারগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য আলাওল সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৩), যশোর সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৩), আবুল হাসান কবিতা পুরস্কার (১৯৮৩), বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৮), কক্সবাজার পদক (১৯৮৯), হুমায়ুন কাদির স্মৃতি পুরস্কার (১৯৯৪), আহসান হাবীব কবিতা পুরস্কার (১৯৯৫), যুক্তরাষ্ট্রের আই.এস.সি ঘোষিত পয়েট অব ইন্টারন্যাশনাল মেরিট ও পয়েট অব দ্য ইয়ার (১৯৯৫), কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ কর্তৃক প্রদত্ত নজরুল জন্মশতবার্ষিকী সম্মাননা (১৯৯৯), জীবনানন্দ জন্মশতবার্ষিকী সম্মাননা (১৯৯৯), সুকান্ত পুরস্কার (২০০৪), একুশ-উনিশে ভাষা গৌরব শীর্ষক ত্রিপুরা রাজ্য সরকার কর্তৃক প্রদত্ত সম্মাননা (২১শে ফেব্রুয়ারি ২০১২) ইত্যাদি। ১৯৯৭ সালে তিনি তুরস্কের রাষ্ট্রপতি সুলেমান ডেমিরিল কর্তৃক বিশেষ রাষ্ট্রীয় সম্মানে ভূষিত হন। ২০১৫ সালে তিনি বাংলাদেশের অন্যতম সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা একুশে পদক লাভ করেন। কর্মজীবন শুরু হয়েছিল ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যের অধ্যাপনা দিয়ে। তারপর বাংলা একাডেমিতে চাকরি বদল। এখানেই বিকশিত তাঁর সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ সময়। তিনি নজরুল ইনস্টিটিউটের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ও জাতীয় পর্যায়ে নজরুল জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন কমিটির সদস্য-সচিব। বাংলা একাডেমির পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বাংলাদেশের লেখকদের সবচেয়ে প্রতিনিধিত্বশীল প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাবের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও বর্তমান সভাপতি। তিনি আন্তর্জাতিক লেখক দিবসের প্রবক্তা। সাহিত্য-সাধনার পাশাপাশি সাহিত্য-সংগঠক হিসেবেও তিনি সর্বমহলে সমাদৃত।