বইয়ে লেখা ফ্ল্যাপ: পুঁজিবাদী বিশ্বব্যবস্থায় নারীকে খাঁচার ভেতর বন্দি রেখে পিতৃতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গিতেই নারীর অধিকার, নারীর ক্ষমতায়ন ও নারীর স্বাধীনতা প্রভৃতি বিষয়গুলো মূল্যায়িত হয়। সাথে সংস্কৃতির একটি বড় অনুষঙ্গ যুক্ত হয়, সেটি হলো ভাষা। সে ভাষার ক্ষেত্রেও পুরুষাধিপত্য প্রতিষ্ঠার ষোলোকলা পূর্ণ করে তৈরি করে লিঙ্গ বিভাজিত ভাষায় এক বলয়। নারীর বিরুদ্ধে কিংবা পুরুষের পক্ষে ভাষার এই অবস্থান দেখা যায় কথ্য ও লেখ্য- দু’ভাবেই। পুরুষতান্ত্রিক ভাষার নেতিবাচক (গালিশব্দ) ব্যবহারের মাধ্যমে নারীর সৃষ্টিশীলতা ও মনোজগতকে ভেঙেচুরে গুড়িয়ে দেয় দেবদূত পুরুষরা। তাই ভাষা যখন আধিপত্যশীল একটি গোষ্ঠীর বলয়ে আবদ্ধ হয়ে যায় তখন স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে-ভাষা কি লিঙ্গ নিরপেক্ষ? ভাষা কেনইবা আধিপত্যবাদের কবলে পতিত? ভাষাগত এই বৈষ্যমের প্রেক্ষাপট নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে এ গ্রন্থে।
ব্যাপক অর্থে ভাষা হলো যোগাযোগের একটি বড় মাধ্যম যে মাধ্যমটি সকল জনগোষ্ঠী দ্বারা অনুশীলিত। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে লিঙ্গীয় প্রত্যাশাগুলো পুরুষাধিপত্যের ক্ষমতা কাঠামোর ঘেরাটোপে বন্দী। লিঙ্গগত বিভাজনে অসম আচরণ, লৈঙ্গিক রাজনীতির পাশাপাশি নারীকে অপেক্ষাকৃত নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা হয়। বাস্তবে আমাদের সমাজে আধিপত্যশীল ক্ষমতা-কাঠামো টিকিয়ে রাখতে পুরুষেরা সমাজের প্রায় সকল স্তরে লিঙ্গীয় রাজনীতি বজায় রাখে। আমাদের ভাষায় জেন্ডার ভিত্তিক নিরপেক্ষতার বিষয়টিও অনুপস্থিত। তবে বর্তমান সময়ে নারী ও পুরুষের প্রতি ভাষার আলাদা দৃষ্টিভঙ্গি এবং ব্যবহার, শব্দচয়নে পুরুষের প্রতি ভাষার প্রবল পক্ষপাতিত্ব এবং নারীর প্রতি ভাষার উদাসীনতার বিষয়টিও আলোচনায় উঠে এসেছে প্রবলভাবে। এ গ্রন্থে নারীর অধস্তনতা বা নেতিবাচক দিক তুলে ধরার পাশাপাশি সমাজের লৈঙ্গিক রাজনীতি কিভাবে ভাষাকে পক্ষপাতিত্ব করে নারীকে অবদমন করছে- সেই অন্ধকারের ছবির স্বরূপ সন্ধান করছেন লেখক।
এ গ্রন্থের পাঁচটি অধ্যায়ে মোট চৌদ্দটি প্রবন্ধ অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। জেন্ডার, নারী, লৈঙ্গিক রাজনীতি, ভাষিক নিপীড়ন ও লিঙ্গ নিরপেক্ষ ভাষা নিয়ে যারা গবেষণা ও লেখালেখি করছেন, এ গ্রন্থটি তাদের বেশ কাজে লাগবে।
বিষয়সূচি প্রসঙ্গ-কথা /সেলিনা হোসেন প্রাককথন: ‘ভাষা, নারী ও পুরুষপুরাণ’ প্রসঙ্গে
অধ্যায়- এক :: পুরুষতন্ত্র ও নারী পুরুষতন্ত্র: অস্তিত্বের আবডালে পুষে রাখা এক বোধ পুরুষপুুরাণ: দেবদূত পুরুষ ও বৃত্তের মায়াবতীরা
অধ্যায়- দুই :: ভাষা ও নারী লৈঙ্গিক রাজনীতি ও ভাষার পক্ষপাতিত্ব নারীর উপর ভাষিক আধিপত্য ও লিঙ্গ নিরপেক্ষ ভাষা প্রসঙ্গ ভাষিক নিপীড়ন ও নারী
অধ্যায়- তিন :: গালিশব্দ ও নারী নারীর ভাষা ও গালি শব্দের সমাজতত্ত্ব গালির পা?: নেতিবাচক শব্দে নারী ও শব্দের শৈলী গালিশব্দ ও নারী: বাংলা অভিধানে ব্যবহৃত সø্যাং বা অকথ্য ভাষা
অধ্যায়- চার :: লোকসাহিত্যে নারী বাংলা লোকছড়ায় নারীচিত্র: একটি নারীবাদী পাঠ অধস্তন নারী: বাংলা প্রবাদ-প্রবচনে ব্যবহৃত শব্দাবলী পুথি সাহিত্যে নারী চরিত্রের স্বরূপ: একটি লোকায়ত বিশ্লেষণ
অধ্যায়- পাঁচ :: সাহিত্যে নারী দেহকাব্যে নারীচিত্র ভাট কবিতায় নারী বাংলা মেয়েলী গীত: সমাজচিত্রে নারী
"হাসান ইকবাল জন্ম ১ ফেব্রুয়ারি ১৯৮০। শৈশব, কৈশোর ও বেড়ে ওঠা নেত্রকোনায়। কবিতার পাশাপাশি জেন্ডার, সমাজভাষা, ফোকলোর ও মুক্তিযুদ্ধ এ কয়টি ভিন্নধারায় গবেষণামূলক প্রবন্ধ লেখায় অনিঃশেষ আগ্রহ। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর করেছেন সমাজবিজ্ঞান বিষয়ে। বর্তমানে একটি আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থায় ‘যোগাযোগ ও প্রকাশনা’ বিভাগে কাজ করছেন। অন্যান্য বই: নেত্রকোনার প্রবাদ-প্রবচন ও লোকছড়া (প্রবন্ধ), রাঁচী গ্রন্থনিকেতন, ঢাকা, ২০১৪ ভাষা, নারী ও পুরুষপুরাণ (প্রবন্ধ), অবসর প্রকাশনা সংস্হা, ঢাকা, ২০১৬ ভাটকবিতার মুক্তিযুদ্ধ (প্রবন্ধ), অয়ন প্রকাশন, ঢাকা, ২০১৬ দেহকাব্যের ভাষা (প্রবন্ধ) চৈতন্য প্রকাশন, সিলেট, ২০১৬ ভাটকবিতার নারী (প্রবন্ধ), প্রতিভা প্রকাশ, ঢাকা, ২০১৮ হুলো, মিনি ও পুষি (সম্পাদিত শিশুতোষ গল্পগ্রন্হ) অয়ন প্রকাশন, ঢাকা, ২০১৯ অর্থির নীল ঘুড়ি (শিশুতোষ গল্পগ্রন্হ) য়ারোয়া বুক কর্ণার, ঢাকা, ২০১৯ পুরষ্কার ও সম্মাননা: UNESCO Excellent Writer Award 2015 কালি ও কলম তরুণ কবি ও লেখক পুরষ্কার ২০১৬ "