‘স’তে সেন্টু' বইয়ের ফ্ল্যাপের কথাঃ পরের দিন ক্লাশে গিয়ে ডেস্কে ব্যাগটা রেখে যখন বের হয়ে আসছি তখন হঠাৎ লক্ষ্য করলাম একটা ছেলে হুইল চেয়ারে করে আমাদের ক্লাশে ঢুকছে। হুইল চেয়ারটা এমনভাবে চালিয়ে আনছে যে দেখে আমার মনে হতে থাকে যে হাঁটা এক ধরনের ঝামেলা এবং হুইল চেয়ারে চলাফেরা করার কাজটা বুঝি খুবই সহজ। ক্লাশরুমের মাঝখানে এসে সে থেমে গেল এবং আমরা সবাই তখন তাকে ঘিরে দাঁড়ালাম। আমি ভেবেছিলাম দেখব ছেলেটার পা নেই কিন্তু দেখলাম তার দুটো পাই বেশ ভালোমতন আছে। সেই পায়ে সে রীতিমত চকচকে জুতো-মোজা পরে আছে। পা থাকার পরও সে কেন হাঁটতে পারে না, তাকে কেন হুইল চেয়ারে চলাফেরা করতে হয় আমি বুঝতে পারলাম না। প্রচ্ছদ ॥ ধ্রুব এষ বইয়ের কিছু অংশ যখন আমরা জানতে পারলাম যে আমাদের ক্লাশে নতুন একটা ছেলে ভর্তি হবে ক্লাশে ঢুকে সাচ্চুর সাথে দেখা হল, আমি সাচ্চুকে জিজ্ঞেস করলাম, “পড়েছিস?” সাচ্ছু বলল, “পড়েছি।” সে জীবনে কোনো গল্প বই পড়েনি। আমি তাই অনেকদিন থেকে তাকে একটা গল্প বই পড়ানোর চেষ্টা করছি। সেজন্যে কাল তাকে আমি একটা ফাটাফাটি সায়েন্স ফিকশান পড়তে দিয়েছিলাম, একবার পড়তে শুরু করলে সেটা শেষ না করে রাখা যায় না। সাচ্চু শেষ পর্যন্ত সেই বইটা পড়েছে শুনে আমি খুব খুশী হয়ে উঠলাম। জিজ্ঞেস করলাম, “একেবারে ফাটাফাটি একটা বই না ?” সাচ্ছু মাথা চুলকে বলল, “কাহিনীটা বুঝি নাই।” আমি প্রায় আর্তনাদ করে উঠলাম, “কাহিনীটা বুঝিস নাই?” “নাহ্!” খানিকক্ষণ মুখ কাঁচুমাচু করে থেকে বলল, “আমি আসলে প্রত্যেকটা লাইনে শুধু শেষ শব্দটা পড়েছি তো, সেই জন্যে কাহিনীটা পরিষ্কার হয় নাই।” আমি চিৎকার করে বললাম, “তুই প্রত্যেক লাইনের শুধু শেষ শব্দটা পড়েছিস? তুই কি পাগল না কি ছাগল।” সাচ্ছু মুখ শক্ত করে বলল, “কী হয় খালি শেষ শব্দ পড়লে? পুরা বই পড়ার আমার এতো সময় নাই।” * “সময় না থাকলে পড়িস না। তাই বলে খালি শেষ শব্দ পড়বি? তোর কী মাথায় গণ্ডগোল?” সাচ্ছু এবারে রেগে উঠল, “আমার ইচ্ছে হলে আমি যেভাবে খুশী সেভাবে পড়ব। ইচ্ছে হলে উল্টো দিক থেকে পড়ব, তোর সমস্যাটা কী?” লেখক পরিচিতিঃ মুহম্মদ জাফর ইকবাল জন্ম : ২৩ ডিসেম্বর ১৯৫২, সিলেট। বাবা মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ফয়জুর রহমান আহমদ এবং মা আয়েশা আখতার খাতুন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র, পিএইচডি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অফ ওয়াশিংটন থেকে। ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি এবং বেল কমিউনিকেশান্স রিসার্চে বিজ্ঞানী হিসেবে কাজ করে সুদীর্ঘ আঠার বছর পর দেশে ফিরে এসে অধ্যাপক হিসেবে যোগ দিয়েছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। স্ত্রী প্রফেসর ড. ইয়াসমীন হক, পুত্র নাবিল এবং কন্যা ইয়েশিম। আলোকচিত্র সুমন আহমেদ।
বাংলাদেশের কিশোর-কিশোরী পাঠকদের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় নাম মুহম্মদ জাফর ইকবাল। তিনি মূলত এ দেশের একজন বিখ্যাত লেখক, পদার্থবিদ এবং শিক্ষাবিদ। কিশোর সাহিত্য, শিশুতোষ গ্রন্থ, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী, গণিত বিষয়ক বই এর জন্য খুব অল্প সময়েই জনপ্রিয়তা লাভ করেন তিনি। মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৯৫২ সালের ২৩ ডিসেম্বর সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন। মুক্তিযোদ্ধা বাবা ফয়জুর রহমানের চাকরির সুবাদে দেশের বিভিন্ন জেলাতেই তিনি পড়াশোনা করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করে পিএইচডি ডিগ্রী অজর্নের উদ্দেশ্যে স্কলারশিপ নিয়ে পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ে। পিএইচডি সম্পন্ন করে ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজিতে পোস্ট-ডক্টরাল গবেষণা সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে বিখ্যাত বেল কমিউনিকেশনস রিসার্চ ল্যাবেও গবেষক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৯৪ সালে দেশে ফিরে এসে তিনি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে যোগ দেন। মুহম্মদ জাফর ইকবাল এর বই সবসময়ই এ দেশের কিশোর-কিশোরীদের কাছে বিশেষ আবেদন নিয়ে হাজির হয়েছে। কিশোর সাহিত্য, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী, বিজ্ঞান ও গণিত বিষয়ক অজস্র গ্রন্থ দিয়ে তিনি আলোকিত করে তুলেছেন এদেশের অগণিত কিশোর-কিশোরীর মনোজগত। মুহম্মদ জাফর ইকবাল এর বই সমূহ, যেমন- দীপু নাম্বার টু, আমার বন্ধু রাশেদ, আমি তপু, শান্তা পরিবার, দস্যি ক’জন ইত্যাদি ব্যাপক পাঠকপ্রিয়তা পায়। তার বেশ কিছু গল্প পরবর্তীতে নাটক ও চলচ্চিত্র হিসেবে টিভি পর্দায় স্থান করে নিয়েছে। তিনি একজন বিশিষ্ট কলামিস্টও। বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডও তাঁর ছত্রছায়ায় গড়ে উঠেছে। মুহম্মদ জাফর ইকবাল এর বই সমগ্র সকল বইপড়ুয়াকেই আকৃষ্ট করে। সাহিত্যে অসামান্য অবদানের জন্য তিনি বহুবার পুরষ্কৃত হয়েছেন। বাংলা একাডেমি পুরষ্কার (২০০৪) এবং শ্রেষ্ঠ নাট্যকার হিসেবে মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার (২০০৫) সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও, কাজী মাহবুবুল্লা জেবুন্নেছা পদক (২০০২), শেলটেক সাহিত্য পদক (২০০৩), ইউরো শিশুসাহিত্য পদকসহ (২০০৪) অগণিত পুরষ্কার অর্জন করেছেন গুণী এই সাহিত্যিক।