‘বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী : রিটিন’ বইয়ের ফ্ল্যাপের কথাঃ রিটিন ঘুরে তাকাল, প্রায় তার বয়সী একটা মেয়ে তার কাধ স্পর্শ করেছে। মেয়েটির মুখ ভাবলেশহীন, অন্তত সে নিজে এরকম একটা ভাব দেখানোর চেষ্টা করছে। রিটিন অবশ্যি এই ভাবলেশহীন মুখের পেছনে খুব সূক্ষ্ম এক ধরনের উত্তেজনা লক্ষ করল । রিটিন মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করল, “তুমি কি আমাকে কিছু বলবে?” প্রচ্ছদ » মেহেদী হক বইয়ের কিছু অংশঃ বিশাল হলঘরের মাঝখানে একটা গ্রানাইটের টেবিল। টেবিলের অন্যপাশে সোনালি চুলের মাঝবয়সী একজন মহিলা বসে তীক্ষ্ণ চোখে রিটিনের দিকে তাকিয়ে আছে। রিটিন খুব মনোযোগ দিয়ে তার হাতের নখগুলো পরীক্ষা করছে, তাকে দেখলে মনে হবে এই মুহূর্তে তার হাতের নখগুলো দেখা খুবই জরুরি। সোনালি চুলের মহিলা জোর করে মুখে একটা হাসি ফুটিয়ে। বলল, “তুমি কী করতে চাও?” রিটিন বলল, “আমি তোমাকে বলেছি। আমি লেখাপড়া করতে চাই। লেখাপড়া করে গবেষণা করতে চাই।” সোনালি চুলের মহিলা বলল, “আমি ঠিক বুঝতে পারছি না তুমি কেন আমাকে এটা বলছ! তুমি খুব ভালো করে জান কে কী করবে সেটি পূর্ব নির্ধারিত। গত একশ বছর থেকে মানুষকে জেনেটিক উপায়ে ডিজাইন করা হয়। যারা লেখাপড়া করবে তাদের সেভাবে ডিজাইন করতে হয়। তোমাকে করা হয়নি।” রিটিন তার হাতের আঙুল থেকে চোখ সরিয়ে সোনালি চুলের মহিলাটির দিকে তাকাল, বলল, “সেটা আমার দোষ নয়। আমাকে আমি ডিজাইন করিনি।” লেখক পরিচিতি মুহম্মদ জাফর ইকবাল জন্ম : ২৩ ডিসেম্বর ১৯৫২, সিলেট । বাবা মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ফয়জুর রহমান আহমদ এবং মা আয়েশা আখতার খাতুন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র, পিএইচডি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অফ ওয়াশিংটন থেকে । ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি এবং বেল কমিউনিকেশান্স রিসার্চে বিজ্ঞানী হিসেবে কাজ করে সুদীর্ঘ আঠার বছর পর দেশে ফিরে এসে অধ্যাপক হিসেবে যোগ দিয়েছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে । স্ত্রী প্রফেসর ড. ইয়াসমীন হক, পুত্র নাবিল এবং কন্যা ইয়েশিম।
বাংলাদেশের কিশোর-কিশোরী পাঠকদের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় নাম মুহম্মদ জাফর ইকবাল। তিনি মূলত এ দেশের একজন বিখ্যাত লেখক, পদার্থবিদ এবং শিক্ষাবিদ। কিশোর সাহিত্য, শিশুতোষ গ্রন্থ, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী, গণিত বিষয়ক বই এর জন্য খুব অল্প সময়েই জনপ্রিয়তা লাভ করেন তিনি। মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৯৫২ সালের ২৩ ডিসেম্বর সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন। মুক্তিযোদ্ধা বাবা ফয়জুর রহমানের চাকরির সুবাদে দেশের বিভিন্ন জেলাতেই তিনি পড়াশোনা করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করে পিএইচডি ডিগ্রী অজর্নের উদ্দেশ্যে স্কলারশিপ নিয়ে পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ে। পিএইচডি সম্পন্ন করে ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজিতে পোস্ট-ডক্টরাল গবেষণা সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে বিখ্যাত বেল কমিউনিকেশনস রিসার্চ ল্যাবেও গবেষক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৯৪ সালে দেশে ফিরে এসে তিনি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে যোগ দেন। মুহম্মদ জাফর ইকবাল এর বই সবসময়ই এ দেশের কিশোর-কিশোরীদের কাছে বিশেষ আবেদন নিয়ে হাজির হয়েছে। কিশোর সাহিত্য, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী, বিজ্ঞান ও গণিত বিষয়ক অজস্র গ্রন্থ দিয়ে তিনি আলোকিত করে তুলেছেন এদেশের অগণিত কিশোর-কিশোরীর মনোজগত। মুহম্মদ জাফর ইকবাল এর বই সমূহ, যেমন- দীপু নাম্বার টু, আমার বন্ধু রাশেদ, আমি তপু, শান্তা পরিবার, দস্যি ক’জন ইত্যাদি ব্যাপক পাঠকপ্রিয়তা পায়। তার বেশ কিছু গল্প পরবর্তীতে নাটক ও চলচ্চিত্র হিসেবে টিভি পর্দায় স্থান করে নিয়েছে। তিনি একজন বিশিষ্ট কলামিস্টও। বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডও তাঁর ছত্রছায়ায় গড়ে উঠেছে। মুহম্মদ জাফর ইকবাল এর বই সমগ্র সকল বইপড়ুয়াকেই আকৃষ্ট করে। সাহিত্যে অসামান্য অবদানের জন্য তিনি বহুবার পুরষ্কৃত হয়েছেন। বাংলা একাডেমি পুরষ্কার (২০০৪) এবং শ্রেষ্ঠ নাট্যকার হিসেবে মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার (২০০৫) সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও, কাজী মাহবুবুল্লা জেবুন্নেছা পদক (২০০২), শেলটেক সাহিত্য পদক (২০০৩), ইউরো শিশুসাহিত্য পদকসহ (২০০৪) অগণিত পুরষ্কার অর্জন করেছেন গুণী এই সাহিত্যিক।