বই পরিচিতঃ এ বইয়ে খ্রিস্টপূর্ব ৪০০০ থেকে শুরু করে বর্তমান সময় পর্যন্ত গ্রিক জাতির ইতিহাস আইজাক আসিমভের তীক্ষ্ণ লেখনিতে অত্যন্ত দারুণভাবে ফুটে উঠেছে। ট্রয় থেকে শুরু করে অটোমান সাম্রাজ্য, একিলিস থেকে শুরু করে আলেক্সান্ডার– গ্রিক সভ্যতা সংশ্লিষ্ট সব কাহিনীই এ বইয়ে পাওয়া যাবে। সভ্যতার অগ্রগতির পথে গ্রিক জাতির ইতিহাসকে লেখক রোমাঞ্চকরভাবে তুলে ধরেছেন। গ্রিক জাতির অগ্রযাত্রাকে দেখিয়েছেন রোমাঞ্চকর অভিযানরূপে, যা তাদের একটির পর একটি বাধা পেরিয়ে পৃথিবীর ইতিহাসে নিজেদের নাম স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখতে সক্ষম করেছে। ইতিহাসে আর কোনো জাতিই পৃথিবীতে গ্রিকদের মতো ঐতিহ্য রেখে যায়নি। এটা খুবই কম বিশ্বাসযোগ্য মনে হয় যে এড্রিয়ান সাগরের পাথুরে দ্বীপমালা আর উপদ্বীপে অবস্থানকারী এত বিচ্ছিন্ন এক জনগোষ্ঠী এত কিছু অর্জন করেছে; কিন্তু যুদ্ধবাজী বা রাজনীতি, শিল্প বা খেলাধুলা, সাহিত্য বা দর্শন- যেখানেই তাদের হাতের স্পর্শ লেগেছে, সেখানেই সোনা ফলেছে। তারা মানব চৈতন্যে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে; তাদের আদর্শ, তাদের বীরেরা হয়ে গেছে আমাদের নিজেদের। এই বইটির কাহিনী শুরু হয়েছে চার হাজার বছরেরও বেশি সময় আগে, যখন বলকান উপদ্বীপের আধা-সভ্য গোত্রসমূহ প্রাচীন মিনোয়ান ক্রিটের উন্নত সংস্কৃতির সংস্পর্শে এসেছিল আর মহা-অভিযাত্রা শুরু করেছিল হারকিউলিসের থাম থেকে শুরু করে হিমালয় পর্যন্ত অভিযানে গ্রিক সেনাদলকে পাঠিয়ে এবং গ্রিক শাসকদের পারস্য, মিশর আর সিসিলির সিংহাসনে বসিয়ে, যে অভিযাত্রা পরিচালিত হয়েছিল এথেন্সকে সভ্যতার সেরা নিদর্শন আর স্পার্টাকে নিঃস্বার্থ বীরত্বের প্রতীক বানাতে। বিজয়ের চূড়ান্ত পরিণতি পৌঁছেছিল এথেন্সের স্বর্ণযুগে, কিন্তু তা গল্পের শেষ থেকে অনেক দূরে। কেননা গ্রিস রোমান সাম্রাজ্যে আর চূড়ান্তভাবে, কনস্ট্যান্টিনোপলে, শিক্ষক হিসেবে ভূমিকা চালিয়ে গিয়েছিল, প্রাচীন পৃথিবীর শেষ সংরক্ষণকর্তারূপে। যতক্ষণ পর্যন্ত না ১৪৫৩ সালে প্রজ্ঞা আর শিক্ষার মহান কেন্দ্রটি অবশেষে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। বিশদভাবে পরিপূর্ণ আর ইতিহাসের অগ্রসরতার বোধে সাহসী এই বইটি নিশ্চিতভাবেই গ্রিস নামের গৌরবকে নিয়ে লেখকের নিজস্ব অত্যুৎসাহ আর অনুরক্ততাকে পাঠকের মধ্যে সংক্রামিত না করে পারে না। গ্রিক বীরদের দুঃসাহসিক অভিযান নিয়ে রচিত বইটি আশা করি সবাইকেই রোমাঞ্চিত করবে।
বিংশ শতকের অন্যতম সেরা লেখক আইজ্যাক আসিমভ সাহিত্যজগতের এক উজ্জ্বল নাম। তিনি ১৯২০ সালের ২ জানুয়ারি সোভিয়েত রাশিয়ার পেত্রোভিচি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবে পরিবারের সাথে পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে ব্রুকলিনে শুরু করেন নতুন জীবন। ছোটবেলায়ই তাঁর বাবা তাকে লাগিয়ে দেন নিজেদের ক্যান্ডিশপে দোকানদারির কাজে। ছোট্ট আসিমভ পাঁচ বছর বয়সেই নিজে নিজে পড়তে শিখে যান। মাত্র ১৫ বছর বয়সে তিনি হাই স্কুল শেষ করেন এবং কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হন। এখান থেকেই তিনি ১৯৩৯ সালে ব্যাচেলর অব সায়েন্স এবং পরবর্তীতে এমএ ও পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৫৫ সালে বোস্টন ইউনিভার্সিটিতে তিনি বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। পরবর্তীতে অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি হলেও তিনি লেখালেখিতে মনোনিবেশ করতে নিয়মিত শিক্ষকতা করেননি। ১৯৫০ সালে বের হয় তাঁর প্রথম বই ‘পেবলস ইন দ্য স্কাই’, যা জয় করে নেয় সাধারণ পাঠকের মন। এরপর একের পর এক লেখা বের হতেই থাকে তাঁর। তাঁর সৃষ্ট সাহিত্যকর্মের মূল আধেয় হলো সায়েন্স ফিকশন, পপুলার সায়েন্স, রহস্য ইত্যাদি। সৃজনশীল মেধাসম্পন্ন এই লেখক ৫০০টিরও বেশি বই রচনা ও সম্পাদনা করেছেন। জনপ্রিয় লেখক আইজ্যাক আসিমভ এর বই সমূহ হলো, ‘আই,রোবট (১৯৫০)’, ‘ফাউন্ডেশন (১৯৪২)’, ‘দ্য এন্ড অব ইটারনিটি (১৯৫৫)’, ‘দ্য কেভস অব স্টিল (১৯৫৩)’, ফ্যান্টাস্টিক ভয়েজ (১৯৬৬)’ ইত্যাদি। তাঁর রচিত উপন্যাসই শুধু নয়, তুমুল জনপ্রিয় তাঁর ছোটগল্পগুলোও। আসিমভ এর রচনাগুলো থেকে নির্মিত হয়েছে বেশ কয়েকটি বড় বাজেটের চলচ্চিত্র, যার মাঝে আছে ‘আই,রোবট (২০০৪)’, ‘বাইসেন্টেনিয়াল ম্যান (১৯৯৯)’ ইত্যাদি। বিশ্বজোড়া প্রকাশিত আইজ্যাক আসিমভ এর বই সমগ্র জয় করে নিয়েছে সায়েন্স ফিকশন পাঠকদের মন। তাঁর বই থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে বিশ্বের নামিদামী পরিচালক তৈরি করেছেন চলচ্চিত্র, বানিয়েছেন সিরিজ। ১৯৮৭ সালে ‘সায়েন্স ফিকশন রাইটার্স অ্যাসোসিয়েশন অব আমেরিকা’ তাকে ‘গ্র্যান্ড মাস্টার অব সায়েন্স ফিকশন’ সম্মানে ভূষিত করে। তাঁর লেখা ‘ফাউন্ডেশন (ট্রিলজি)’ ১৯৬৬ সালে এনে দেয় ‘হুগো এওয়ার্ড’, ‘দ্য গডস দেমসেল্ভস’ এনে দেয় একইসাথে ‘হুগো’ ও ‘নেবুলা’ অ্যাওয়ার্ড। কল্পবিজ্ঞানের এই মহা কারিগর ১৯৯২ সালের ৬ এপ্রিল ব্রুকলিনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।