"দুষ্টু ছেলের দল"বইটির প্রথমের কিছু অংশ: পেয়ারা গাছের বিভিন্ন ডালে যে ছয়জন ছেলে বসে আছে তারা সবাই এ পাড়ার ছেলে নয়। সবচেয়ে উপরে যে ঝুলে আছে সে সূত্রাপুর থেকে এসেছে। তার নাম আরিফ কিন্তু সবাই তাকে আরিফারিফ বলে ডাকে। তাড়াতাড়ি কথা বলতে গেলে আরিফের একটা তােতলামাে এসে যায় তাই কবে নিজের নাম আরিফ বলতে গিয়ে আরিফারিফ বলে ফেলেছিল, সেই থেকে তার নাম আরিফারিফ হয়ে গেছে। আরিফ কখনাে স্থির হয়ে বসে থাকতে পারে না, তাই গাছে উঠেও ক্রমাগত নড়াচাড়া করছে। কখনাে দু'পায়ে একটা ডাল ধরে মাথা নিচু করে ঝুলে আছে, কখনাে নখ দিয়ে গাছের ছাল তুলে ফেলছে কখনাে একটা কাঠ পিপড়ে হাতের তালুতে নিয়ে সেটাকে ত্যক্ত বিরক্ত করে সময় কাটাচ্ছে। ছেলেটি এমনিতে চুপচাপ, একা থাকলে নিজের মনে কথা বলতে দেখা যায়। প্রথম প্রথম সেটা নিয়ে সবাই অবাক হতাে, আজ-কাল আর হয়। গাছের মাঝামাঝি যে দুজন আছে তার মাঝে একজনের চোখে চশমা, সে হচ্ছে। টিপু। তাকে শুধু ছেলেরা নয় স্কুলের স্যারেরাও ডাকেন সাইন্টিস। শব্দটা এক সময় সাইন্টিষ্ট ছিল দীর্ঘদিন ব্যবহারে ছােট হয়ে আসছে। সে এই এলাকার ছেলে, তাদের। পাড়ার যে কোন ছেলেকে জিজ্ঞেস করলে তারা সবাই এক বাক্যে স্বীকার করবে টিপুর ল্যাবরেটরির মতাে ল্যাবরেটরি পাওয়া কঠিন। তাদের বাসার পুরনাে রান্নাঘরের ঝুল কালি পরিষ্কার করে সেখানে এটি বসানাে হয়েছে। সেখানে পুরনাে, টায়ার থেকে শুরু করে একটা গরুর মাথার খুলি পর্যন্ত আছে। সব সময়ই সে কিছু কিছু আবিষ্কার করছে, গত সপ্তাহেই সে গােলাপ ফুলের পাপড়ি দিয়ে লিটমাস পেপার তৈরি করেছে। শক্ত এসিড না হলে সেটা ভাল কাজ করে না কিন্তু তবুও তাে আবিষ্কার! টিপুর রকেট আবিষ্কারের কথা অনেকে জানে, তার রকেটটা উপরের দিকে না উঠে কেন নিচেই ঘুরতে শুরু করেছিল সেটা এখনাে কেউ জানে না, তখন রকেট থেকে পালাতে গিয়ে টিপুর মাথা ফেটে গিয়েছিল। টিপুর আব্বা তখন তার পুরাে ল্যাবরেটরি নালায় ফেলে দিতে চেয়েছিলেন অনেক কষ্টে রক্ষা হয়েছে। সেই থেকে টিপু তার রকেট বা বােমা জাতীয় জিনিষের উপর গবেষণা করতে পারে না। | টিপুর পাশে যে বসে আছে তার নাম কণা। ছােটখাট গাট্টা-গােট্টা ছেলে, ফুটবল খেলার সময় ব্যাকে খেলে, কার সাধ্যি আছে তাকে কাটিয়ে বল নিয়ে যায়? সাইজে
বাংলাদেশের কিশোর-কিশোরী পাঠকদের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় নাম মুহম্মদ জাফর ইকবাল। তিনি মূলত এ দেশের একজন বিখ্যাত লেখক, পদার্থবিদ এবং শিক্ষাবিদ। কিশোর সাহিত্য, শিশুতোষ গ্রন্থ, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী, গণিত বিষয়ক বই এর জন্য খুব অল্প সময়েই জনপ্রিয়তা লাভ করেন তিনি। মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৯৫২ সালের ২৩ ডিসেম্বর সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন। মুক্তিযোদ্ধা বাবা ফয়জুর রহমানের চাকরির সুবাদে দেশের বিভিন্ন জেলাতেই তিনি পড়াশোনা করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করে পিএইচডি ডিগ্রী অজর্নের উদ্দেশ্যে স্কলারশিপ নিয়ে পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ে। পিএইচডি সম্পন্ন করে ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজিতে পোস্ট-ডক্টরাল গবেষণা সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে বিখ্যাত বেল কমিউনিকেশনস রিসার্চ ল্যাবেও গবেষক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৯৪ সালে দেশে ফিরে এসে তিনি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে যোগ দেন। মুহম্মদ জাফর ইকবাল এর বই সবসময়ই এ দেশের কিশোর-কিশোরীদের কাছে বিশেষ আবেদন নিয়ে হাজির হয়েছে। কিশোর সাহিত্য, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী, বিজ্ঞান ও গণিত বিষয়ক অজস্র গ্রন্থ দিয়ে তিনি আলোকিত করে তুলেছেন এদেশের অগণিত কিশোর-কিশোরীর মনোজগত। মুহম্মদ জাফর ইকবাল এর বই সমূহ, যেমন- দীপু নাম্বার টু, আমার বন্ধু রাশেদ, আমি তপু, শান্তা পরিবার, দস্যি ক’জন ইত্যাদি ব্যাপক পাঠকপ্রিয়তা পায়। তার বেশ কিছু গল্প পরবর্তীতে নাটক ও চলচ্চিত্র হিসেবে টিভি পর্দায় স্থান করে নিয়েছে। তিনি একজন বিশিষ্ট কলামিস্টও। বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডও তাঁর ছত্রছায়ায় গড়ে উঠেছে। মুহম্মদ জাফর ইকবাল এর বই সমগ্র সকল বইপড়ুয়াকেই আকৃষ্ট করে। সাহিত্যে অসামান্য অবদানের জন্য তিনি বহুবার পুরষ্কৃত হয়েছেন। বাংলা একাডেমি পুরষ্কার (২০০৪) এবং শ্রেষ্ঠ নাট্যকার হিসেবে মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার (২০০৫) সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও, কাজী মাহবুবুল্লা জেবুন্নেছা পদক (২০০২), শেলটেক সাহিত্য পদক (২০০৩), ইউরো শিশুসাহিত্য পদকসহ (২০০৪) অগণিত পুরষ্কার অর্জন করেছেন গুণী এই সাহিত্যিক।