নৃপেন চৌধুরী সুরের ভুবনে চির অম্লান শহর বড় হচ্ছে, মানুষের মধ্যে দেশ হচ্ছে বৃহৎ আঙিনা। রাজনীতির ঢামাঢোল। পরিবর্তনের নানামুখে বহু অঙ্গীকার। এই ছিল তো, এই ছিলো না। স্বাধীনতার পরপর বাংলাদেশের মানুষের স্বপ্নে নানা দোলাচল। মানুষের আনন্দ- বেদনা তখন সম্পর্ক থেকে সম্পর্কে ছড়িয়ে পড়ছে। শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির আকাশ বিস্তৃত হচ্ছে। এই সময়টাকে মূলত সুরেও ছন্দে টিকিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন নৃপেন চৌধুরী। গান তৈরি করছেন। কখনও সিনেমার গান, কখনও নাটকের গান। চমৎকার চমৎকার সব ভাবনা। শিল্পাঙ্গন তখন জমে ওঠছে। ঢাকায় যান সিনেমার সংগীতে কাজ করতে আর চট্টগ্রামে রয়ে যান নাটকের কাজ করতে। কত বড় বড় দিগন্ত বিস্তারি কাজের অনুরোধ তিনি হাতে ঠেলে দেন। বেছে বেছে কাজ করেছেন। ১৯৭৪ সালে 'মালকা বানু' সিনেমা মুক্তিপায়। এই সিনেমার সঙ্গীত পরিচালক ছিলেন নৃপেন চৌধুরী, করিম শাহাবুদ্দিন, সত্য সাহা ও আনোয়ার পারভেজ। নৃপেন চৌধুরীর গানে তখন লোকজ ধারা শুনতে পাওয়া যায়। যা সঙ্গীত প্রেমীদের কাছে মুগ্ধতার ভিন্নরূপ। বহু নাটকের মঞ্চায়নের সাথে তিনি যুক্ত ছিলেন। সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন। সুরেই তার ধ্যান-জ্ঞান। নিবিষ্ঠ চিত্তে কাজ করতেন। বৈষয়িক ভাবনা তাকে তেমন ভাবাতো না। ১৯৮২ সালে রাজনৈতিক অবস্থা ভালো নেই। সামরিক সরকারের নানা বিধি নিষেধের কারণে নাটক মঞ্চায়নের ভাটা পড়তে থাকে। ঐ বছরই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর ১৯৮৭ সালে মৃত্যুবরণ করেন। সঙ্গীতজ্ঞ নৃপেন চৌধুরীর ৪৮ বছরের জীবনের কীর্তিগুলোর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আমরা এই স্মারক গ্রন্থটি সাজিয়েছি। প্রথমে তার সুরারোপিত ও রচিত গান। পরে তাঁর সম্পর্কে লিখা কিছু গদ্য এখানে সন্নিবেশিত করা হয়েছে। নৃপেন চৌধুরীর মৃত্যুর পরপর লেখা কিছু সংবাদ, ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণমূলক লেখা, পারিবারিক ও নাটকের কিছু ছবি দেয়া হয়েছে। এখান থেকে হয়তো নৃপেন চৌধুরী সম্পর্কে মোটামুটি জানা-শোনা হয়ে যাবে। এরপরও পাঠক আপনার জানা থেকে আমাদের জানাতেও পারেন। তথ্য ও উপাত্তের ভুল, কিংবা বানান সংক্রান্ত ভুল আমাদের মার্জনা করবেন। আপনার পরামর্শে আমরা পরবর্তীতে সংস্কার করে নেব। নৃপেন চৌধুরীর জন্য এটুকুন আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি । সকলকে ভালোবাসা। মনিরুল মনির ১ ফেব্রুয়ারি ২০২১