প্রসঙ্গ কথা ভারতবর্ষে গোমূত্রপানকারী সবথেকে নিম্নমানের একজন হিন্দু ব্যক্তির কাছে যদি বলা হয়, তোমাদের দেশে এবার হিন্দু রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন না করে একজন মুসলিম ব্যক্তিকে রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করা হচ্ছে, তুমি কি এ ব্যাপারে সন্তুষ্ট? বা তোমাদের দেশে (ভারতবর্ষে) মুসলিম একজন ব্যক্তিকে রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আজীবনের জন্য মেনে নিতে পারবে কী? নিশ্চয় এ প্রশ্নের উত্তরে সে গোমূত্রপানকারী নিম্নমানের হিন্দু ব্যক্তি মনে হয় বলবেন- “মুসলিম শাসক তাও আবার ভারত বর্ষের, না! তা কখনই হতে পারেন না।” শুধুমাত্র গোমূত্রপানকারী একজন হিন্দু নয়, কোনো মদ্যপানকারী ব্যক্তিও মনে হয়, তার ধর্মের অনুসারী ব্যক্তি ব্যতিত অন্য ধর্মের অনুসারীকে তাদের শাসক হিসেবে স্বানন্দে গ্রহণ করবেন না। অথচ আমরা মুসলমানরা ভোটের ব্যাপারে, নির্বাচনের ব্যাপারে, কি সুন্দর স্লোগান দিয়ে থাকি- “আমার ভোট আমি দেবো, যাকে খুশি তাকে দেবো।” হুজুর, আমাদের কওমী আলেম (দেওবন্দ হাটহাজারী), আহলে হাদীস, প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত, এই তিনটি ইসলামী দলের আলেমগণের কাছে রাজনীতি ও ভোটের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তারা উত্তর বিভিন্ন রকম দেন। কেউ বলেন- “রাজনীতি ও ভোট প্রথা হারাম।” কেউ বলেন- “গণতন্ত্র হারাম।” কেউ বলেন- “ভোটের ব্যাপারে ওটা তোমার স্বাধীনতা।” মোট কথা উপরোল্লিখিত তিনটি ইসলামী দলের আলেম সম্প্রদায় রাজনীতি ও ভোটের ব্যাপারে একটি সাদামাটা উত্তর দিয়ে থাকেন, আমরা সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক দল-সংগঠন। কাজেই রাজনীতি ও ভোটের ব্যাপারে আপনার যাকে ভালো লাগে আপনি তাকে সমর্থন দিন। হুজুর, দুঃখের বিষয় হলো, গোমূত্রপানকারী একজন নিম্নমানের হিন্দুকেও যদি তাদের জাতীয় নেতা, রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচন করার ব্যাপারে যদি জিজ্ঞাসা করা হয়, তখন তার উত্তর আর আমাদের হুজুর সম্প্রদায়ের উত্তর সম্পূর্ণ ভিন্ন রকম হয়ে থাকে। কিন্তু এর কারণ কী? কেনো আমাদের এক শ্রেণির হুজুর সম্প্রদায় রাজনীতি ও ভোটের ব্যাপারে মুখ খোলেন না, এসব বিষয় নিয়ে মূলতঃ আমার এ গ্রন্থ রচনা করা। সম্মানিত হুজুরবৃন্দ, আমরা সকলেই জানি, পরিবহনের ড্রাইভার প্রয়োজন হয়, বিমানের পাইলটেরও প্রয়োজন হয়। পরিবহণ অথবা বিমান রিমোট কন্ট্রোল হয়ে থাকলেও রিমোট পরিচালনার জন্য ড্রাইভারের প্রয়োজন থাকে। পৃথিবীতে যখন মাত্র দুই জন মানুষ ছিলেন, তখনও দুই জনের মধ্যে একজন ড্রাইভার ছিলেন। মানুষের ড্রাইভার হলো নেতা, রাষ্ট্রের ড্রাইভার হলো রাষ্ট্র প্রধান। পৃথিবী নামক এই পরিবহনের শুরু থেকে ড্রাইভার ছিল, কিয়ামতের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত ড্রাইভার থাকবে। বাস্তবতা হলো আমরা সকলেই জানি, পৃথিবী নামক এই পরিবহন ড্রাইভার ব্যতীত পৃথিবীর মানুষ সুশৃংখলভাবে চলতে পারবে না। “উট অথবা মেষ পালের রাখাল যদি না থাকে, পশুগুলো হারিয়ে যাওয়া এবং সেখানে বিশৃংখলা হওয়াটাই স্বাভাবিক। অথচ মানুষ নামক এই প্রাণীর ড্রাইভার, মানুষের রাখালের দায়িত্ব কর্তব্য কত নাজুক এবং গুরুত্বপূর্ণ। তারপরও আমাদের হুজুর সম্প্রদায় আজও সঠিকভাবে ঠিক করতে পারলেন না পৃথিবী নামক এই পরিবহনের ‘ড্রাইভার’ কে হবেন? আমরা আজও সিদ্ধান্ত নিতে পারলাম না, সৎ, যোগ্য, আল্লাহভীরু ঈমানদার, পরহেজগার শ্রেণির মানুষ এ পৃথিবীবাসির ড্রাইভার হবেন, না অন্যরা মুসলমানদের ড্রাইভার হবেন? ১৯৯২ সাল থেকে আমি এই বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা করি। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য আমাদের মুসলিমদের মধ্যে, কওমী আলেম (দেওবন্দ হাটহাজারী), আহলে হাদীস, প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত, এই তিনটি ইসলামী দলের আলেমদের থেকে- “এ পৃথিবী নামক পরিবহনের ড্রাইভার”, ইসলামের দৃষ্টিতে কোন শ্রেণির মানুষ রাষ্ট্রের ড্রাইভার হলে, পরিবহনের যাত্রীগণ দুনিয়ার শান্তি ও আখেরাতে মুক্তি পাবে, তা আজও উপরোল্লিখিত তিনটি ইসলামী দলের আলেমদের নিকট থেকে জানতে পারিনি এবং এ ব্যাপারে তাদের কোনো দৃঢ়, শক্তিশালী বা উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে দেখা যায় না। সঙ্গত একারণেই ‘হু জু র’ নামক গ্রন্থটি রচনায় ব্রত হই। এর অর্থ মনে করুন, আমি আমার নিজেকে নিয়েই আত্মসমালোচনা করছি। প্রসঙ্গক্রমে এ গ্রন্থে কওমী আলেম (দেওবন্দ হাটহাজারী), আহলে হাদীস, প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত এই তিনটি ইসলামী দল ও তাদের আলেমদের প্রসঙ্গ চলে এসেছে এবং ব্যাপক সমালোচনাও করেছি। এই সমালোচনা মূলতঃ সমালোচনার উদ্দেশ্যে সমালোচনা নয়; বরং সমালোচনা করেছি সৎ নিয়তে, সৎ উদ্দেশ্যে, সংশোধনের উদ্দ্যেশে, আত্মশুদ্ধির জন্য সর্বপরি আল্লাহ্কে রাজি খুশি করার জন্যই এ ‘আত্মসমালোচনা’। তাছাড়া আমি কওমী আলেম (দেওবন্দ হাটহাজারী), আহলে হাদীস, প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত, এই সকল ইসলামী দলের হুজুরদের বিরোধীপক্ষের লোক হবো কেনো? আমিতো মুসলিম! আমিও তো তাদের মতোই একজন কালেমাধারী মুসলিম। অতএব, আমি কওমী আলেম (দেওবন্দ হাটহাজারী), আহলে হাদীস, প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত এই তিনটি ইসলামী দল বা মতের বিরোধীপক্ষ হিসেবে এ গ্রন্থ রচনা করিনি। আমি এ গ্রন্থ রচনা করেছি, পৃথিবী নামক পরিবহনের ড্রাইভারের দায়িত্ব আমাদের হুজুর সম্প্রদায় যদি নিতেন, তাহলে মনে হয়, মুসলিম জাতি প্রতিটি রাষ্ট্রে মুসলিম শাসক তথা সৎ, যোগ্য, আল্লাহভীরু, ঈমানদার, পরহেজগার ব্যক্তিদেরকে (ইসলামের দৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদেরকে) দেশের শাসক হিসেবে পেতো। তখন মুসলিম জাতি অন্য ড্রাইভার, তথা অন্য শাসকদের দ্বারা শাসিত ও নির্যাতিত হতো না। সুতরাং , এসব ভাবনা থেকে আমার এ গ্রন্থ রচনা। তারপরও সবিনয়ে অনুরোধ করে বলছি, সম্মানিত হুজুরবৃন্দ, কওমী আলেম (দেওবন্দ হাটহাজারী), আহলে হাদীস, প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত, এই তিনটি ইসলামী দলের আলেমদেরকে এ গ্রন্থে গঠনমূলকভাবে সমালোচনা করার চেষ্টা করেছি। যথাযথ সম্মান, আদব রক্ষা করে কথা বলার চেষ্টা করেছি। তারপরও যদি এই লেখনীর মধ্যে আলোচনা করতে গিয়ে কোথাও কোনো কিছু ভুল-ত্রুটি বা অতিরঞ্জিত কথা বলে থাকি, তবে দ্বীনি ভাই হিসেবে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে আমাকে ক্ষমা করে দিবেন। পাশাপাশি আমার ত্রুটিগুলি শুধরে দিলে আমিও নিজেকে ধন্য মনে করবো। আল্লাহর ওয়াস্তে, আমাকে কাফের, ফাসেক, জালেম, বেদাতী এ ধরণের কথা বলে, আমার বিরুদ্ধে ফতোয়াবাজী না করার বিনিত অনুরোধ রইল। যে কালেমায় স্বীকৃতি দেওয়ার কারণে একজন মানুষ মুসলমান হিসেবে পরিচয় দিতে পারে, আমিও সেই কালেমাধারী মুসলিম। “আমান্তুু বিল্লাহি ওমালায়িকাতিহী ওয়াকুতুবিহী ওয়ারাসূলিহী ওয়াল ইয়াউমিল আখিরি ওয়াল ক্বদরি খয়রিহী ওয়া সাররিহী মিনাল্লাহি তায়ালা ওয়াল বা’সি বা’দাল মাউত” -এর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করি। এই হিসেবে আমিও আপনাদের মতোই একজন মুসলিম। কাজেই আমাকে নিয়ে আল্লাহর ওয়াস্তে, আজেবাজে মন্তব্য অন্তত করবেন না। হতে পারেন আপনি ও আপনারা, আল্লাহ এবং মুহাম্মদ (দ.)-এঁর নিকট একটু বেশি প্রিয়, আমি না হয় একটু কম প্রিয়। তাই বলে আমাকে কাফের, মুশরিক, ফাসেক, জালেম, বেদাতী বলে ঐ নাফারমান বান্দাদের দলে অন্তর্ভূক্ত করবেন না। পরিশেষে করুনাময়ের দরবারে কামনা করি, আল্লাহ আমাদের সকলকেই সরল-সোজা-সঠিক পথে পরিচালিত হওয়ার তৌফিক দিন। -আমীন, ইয়া রব্বাল আলামীন। বিনয়াবনত - মোঃ মফিজুর রহমান আইডিয়াল মটর সাইকেল মার্ট উপজেলা মোড়, ঝিকরগাছা, যশোর।