ফোকগান, আধ্যাত্বিক গান বা পল্লী অঞ্চলের সাধারণ মানুষের জীবনধারা আবর্তিত করে নির্মিত গান আমাদের কম নয়। তবু তৃষ্ণা মিটে না আমাদের। উল্লেখিত ধারারগান সবই যে আমাদের মর্মমূল স্পর্শ করে উদ্ভাসিত একথাও দ্বিধাহীন বলা যায় না। আইয়ুব আলী গীতিকার। বেতার ও টেলিভিশনের তালিকাভুর্ক্ত। বেতার টেলিভিশনের গীতিকার শেষ কথা নয়। শেষ কথা তাঁর গানে প্রকৃতই প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অন্তর্গত ভাব বাঙময় হয়ে উঠেছে। গান তাঁর কাছে আরাধনা বা ব্রত জাগানিয়া বিষয়। ফলে তিনি পল্লীজনপদের খেটে খাওয়া মানুষের প্রেম-বিরহ, আশা-নিরাশা, সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা পোস্টমর্টেম করার ক্ষমতা সংরক্ষণ করেন। প্রতিটি গানেই সেই সক্ষমতা ঔজ্জ্বল্যের মহিমা দান করেছে। দু’একটি গানের অংশত তুলে ধরে বিষয়টি পরিষ্কার করা যেতে পারে। যেমন‘ পাওয়ার আশায় ঘর ছাড়িলাম/পাইলাম না তাও তারে/ফুল-চন্দন মালা গাঁথলাম/নিলো না আমারে।’ গ্রাম-জনপদের বিরহকাতর যুবকের এই যে মনোবেদনা তা চমৎকার ভাষারূপ পেয়েছে আইয়ুব আলীর গানে। গ্রামে নগরায়ণের হাওয়া পালতোলা নৌকার মতো ভেসে বেড়াচ্ছে। এটি যেমন বাস্তব তেমনি এও বাস্তব এখনো গ্রামের সাধারণ মানুষ গ্রামীণ সংস্কৃতির ভেতর নিজেদের জীবনচিত্র আবিষ্কার করতে চায়। আইয়ুব আলী সেই সাধারণ মানুষের চেতনার দোর-গোড়ায় অনুসন্ধানী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে গানের ভাঁজে ভাঁজে প্রায় হারিয়ে যাওয়া অনুষঙ্গের অস্তিত্ব আবিষ্কারের চেষ্টা করেছেন। চমৎকার তুলে এনেছেন মাটির স্পন্দিত রূপ। পল্লীবালার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে উতল যুবকের গোপন ভাবনা তাঁর গানে শিল্প হয়ে ধরা দিয়েছে। যেমন ‘মায়া ভরা চোখটি কইন্যার/মনটা উদাস করে/চিকন চাকন দেহের গড়ন/রূপের নেশা ধরে।’ আধ্যাত্ববাদ সাধারণের জীবনকে সব সময় তাড়িত করে। বিশেষ করে যে মানুষ স্রষ্টা আর সৃষ্টির অপার লীলা তরঙ্গে মন ভাসিয়ে রাখে সে মানুষ সংশ্লিষ্ট ভাবজগত থেকে বেরিয়ে আসতে চায় না। সুতরাং সংশয়হীন তার উচ্চারণ ‘ডাকতে ডাকতে হয়রান আমি/ঝরলো চোখের জল/গাছ লাগাইলাম যতন দিলাম/পাইলাম না তাও ফল।’ আইয়ুব আলীর চতুর্থ প্রকাশনা ‘আইয়ুব গীতি’ গ্রন্থ। গ্রন্থের প্রতিটি গান লোকায়ত জীবন-সংস্কৃতির ধারক ও বাহক। যারা ফোক বা লোকগানের ভেতর নিজের ভেতরকে উন্মোচিত করতে চান তাদের কাছে ‘আইয়ুব গীতি’ অপরিমেয় ভালোবাসায় আদৃত হবে এ বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। আসাদ উল্লাহ কবি ও প্রাবন্ধিক