অমর একুশে গ্রন্থমেলাকে কেন্দ্র করে ‘দ্বীপজ প্রকাশনি’ হতে সংস্করণের অপেক্ষমান গল্পকার, চিত্রশিল্পী, সমাজসেবক, সংগঠক, প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি- বাংলাদেশ সাহিত্য সংসদ এবং দ্বীপজ পত্রিকার সম্পাদক চৌধুরী সাব্বির আলম’র গল্পগ্রন্থ ‘সন্তানের বাবা কে’ গল্পকারের গল্পের সাথে পূর্বেই পরিচিত আমি, বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত গল্প একবার হাতে নিলে শেষ অবধি গল্পের মনমুগদ্ধকর বয়ান টেনে নিয়ে যায় শেষ অবধি। এই গ্রন্থে সন্নেবেশিত গল্প পড়লাম এবং ভিন্ন ভিন্ন মেজাজের গল্প রস আস্ম্যাদনে সিক্ত হলাম। বেশ কিছু গল্প দিয়ে গ্রন্থটি প্রকাশিত হচ্ছে। ছোট গল্পের আঙ্গিক, ভাব, ভাষাশৈলি, বিষয় নির্বাচন, বাক্য বিন্যাস সর্বপরি ভাষার মাধুর্যতার দিক থেকে গল্পকারের নতুন ভাব প্রকাশ পেয়েছে। মেসার্স জাহানারা এন্টারপ্রাইজ, জাহানারা মেটাল এ্যাণ্ড প্রিন্টিং প্রেসে’র পরিচালক, সাবেক ব্যুরোচীফ- ঢাকা মহানগর উত্তর ‘ক্রাইম লাইন’ পত্রিকা। সংগঠক, সম্পাদক, প্রকাশক, শিক্ষকতার সাথেও লেখক চৌধুরী সাব্বির আলম সম্পৃক্ত। এতোগুলো সৃষ্টিশীল কাজের সাথে নিজেকে যুক্ত রাখতে পারাকে, অসাধ্যকে সাধ্যের মধ্যে আনার সাধনা হিসেবে উল্লেখ করতে চাই। চলমান সময় এতো বড় স্বপ্নের ক্যানভাস অঙ্কনকে সাধুবাদ জানই। একজন মানুষের সাফল্যের চাবিকাঠি হচ্ছে মানুষ যতোই ছোট হোক না কেন, স্বপ্ন হতে হবে পৃথিবীর সমান বিস্তৃত যা আলোচিত গল্পকারের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোটগল্প কিংবা মানিক বন্দোপাধ্যায় এর ছোটগল্প বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ উদাহরণ হলেও অনেকেই ছোটগল্প লিখবার ক্ষেত্রে মুন্সিয়ানার পরিচয় দেখিয়েছেন নিজ নিজ কলাকৌশলে তাদের নাম এই সল্প পরিসরে নাই বা বললাম। চৌধুরী সাব্বির আলম’র প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য কয়েকটি গ্রন্থের নাম- ‘রাতের তারা’ কাব্যগ্রন্থ ‘ক্ষনিকের ভালোবাসা’ গল্পগ্রন্থ, ‘শোনো আমি আসছি’ ‘এলোমেলো সুতো’ উপন্যাস। এছাড়াও নিয়মিতভাবে দৈনিক কাগজসহ দেশের অন্যান্য কাগজে লিখছেন। গ্রাম-গঞ্জের বহুল প্রচারিত শব্দ এখন শহরের আটপৌড়ে জীবন যাপনের সাথে মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। ‘গাইতে গাইতে গায়েন, বাজাইতে বাজাইতে বায়েন’ তার সাথে আমি যোগ করতে চাই ‘লেখতে লেখতে লেখক’। লেখক দু’হাত ভরে লিখবেন, তার লেখার শিল্পমান নির্ণয় কালের উপর ছেড়ে দেয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। লেখার গুণগত মান নিয়ে আমার মতে কেবলমাত্র আত্মস্বীকৃত ব্যক্তিরাই হৈ চৈ করে। মূল কথা হলো প্রকাশিতব্য পাণ্ডুলিপিতে প্রেম-বিরহ, সমাজ-সংস্কৃতি এবং শিক্ষামূলক বিষয়সহ বাস্তববাদী কাহিনী বেশির ভাগ গল্পে ফুটে ওঠেছে গল্প পাঠে চলমান তরুণ-তরুণী ও বয়-বৃদ্ধদের আংশিক ছাপ পাওয়া যায়। লেখক পাঠক মহলে উপস্থাপনের চেষ্ঠা করছেন সততাকে। প্রেম-বিরহকে সর্বজনীন দৃষ্টি-ভঙ্গীর লক্ষ্য রেখে রুখে দাঁড়িয়েছেন আবার কখনো মনোজগতের মুখোমুখি হয়েছেন নিরবে নিভৃতে। কল্পনা এবং বাস্তবতার সংমিশ্রণে চৌধুরী সাব্বির আলম’র গল্প এক নতুন মাত্রার উপস্থাপন। চিন্তার জগতটা যদি নাসার বিজ্ঞানিরা প্রতিদিন মেরামত করে, তাহলে লেখকের হাত দিয়ে আরো চিন্তাশীল ছোটগল্প পেতে পারি আমরা। তবে গ্রন্থিত গল্পও কালের ইতিহাসে টিকে থাকতে পারে। বহুমাত্রিক এই গল্পকারকে নিয়ে শেষ কথাটি বলবার জন্য আরেকটু অপেক্ষা করতে হবে। তারুণ্য যার মাঝে লুকিয়ে থাকে পারতবিহীন আয়নার মতো, তাকে বুঝতে ও তার বিষয়ে বিশ্লেষণ করতে সময়েরও প্রয়োজন। তারুণ্যের অহংকার এই তরুণ লেখক ঠিক যেন পাহাড়ি বারুদ যুক্ত এক জীবন্ত পাথর। যা মুখে নয়, কলমের কান্না ও প্রতিভার সমৃদ্ধে তা প্রকাশ পায়। পরিশেষে বলবো, ‘সন্তানের বাবা কে’ গ্রন্থটি বিভিন্ন উৎসবে উপহার দেওয়ার উপযোগী একটি গ্রন্থ। যা লক্ষ বা কোটি কোটি টাকায় হিসেব মিলানো যায় না, তেমনি অমূল্য সম্ভার। গ্রন্থটি অমর একুশে গ্রন্থমেলায় পাঠক প্রিয়তায় কমতি থাকবে বলে মনে করি না। গ্রন্থটি ঠিকই পাঠক মহলে পৌঁছে পাঠকের হৃদয় ছুঁয়ে যাবে, সকলের মুখে মুখে ধ্বনিত হবে ‘সন্তানের বাবা কে’ -চৌধুরী সাব্বির আলম’র জন্য সেই প্রত্যাশা করছি। প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যমণ্ডিত মনোমুগ্ধকর ভোলা জেলার কৃতি সন্তান বহুল অপরিচিত মুখে আলোচিত সম্পাদক, প্রকাশক, চিত্রশিল্পি, ভ্রমণপিপাসু, ক্ষুদ্র শিক্ষাবিদ, সমাজ সেবক, চির-তরুণ জ্ঞানবুদ্ধিতে বুদ্ধিদাতা লেখক হওয়ার চেষ্টায় সদা জাগ্রত থাকা চৌধুরী সাব্বির আলম’র জীবন হোক আলোক বর্তিকা। তাই আমার লেখা কাব্যচরণ দিয়ে শেষ করছি- ভোলার কোলে সাগর কন্যা / আলতা পরা গাঁয়ে / চাঁদ সুরুজে খাচ্ছে চুমু / মেঘনা নদীর পায়ে।