ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটছে—মানবজাতি আজ নৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের দিকে ধাবমান। শোষণ-নিপীড়নের রক্তাক্ত নখর গেড়ে বসেছে গোটা মানবসমাজের দেহে। সর্বত্র বিশৃঙ্খলা, জবরদখল ও সহিংসতার ছড়াছড়ি। নিপীড়িত ও হতাশাগ্রস্ত প্রতিটি মানুষ আজ তাদের মুক্তিদাতার পথপানে চেয়ে আছে। কিন্তু দুঃখের কথা হলো, মুসলিম দেশগুলোর কর্ণধারগণই যখন ইসলামের পায়গাম শোনা ও মেনে নেওয়ার জন্য প্রস্তুত নয়, তখন অন্যদের কাছ থেকে কী আশা করা যেতে পারে? আজকের মুসলিম শাসকরাই মানবসমাজে ইসলামী বিধি-বিধান বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা। তারা নবিজির হাদিস পাঠ, নিজেকে তার উম্মত হিসেবে জাহির করা এবং তাঁকে ভালোবাসার দাবি করা সত্ত্বেও—নবিজির এই ‘শান্তি ও মুক্তির পায়গাম’ উপেক্ষা করে ‘কায়সার’ হয়ে বসে আছে! কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না, ইতিহাস নদীর স্রোতের মতোই বহমান। ইতিহাস তার নিজস্ব গতিতে এগিয়ে চলে আর ‘কায়সাররা’ নিজেদের সমস্ত গৌরব, প্রতিপত্তি ও অহঙ্কার সত্ত্বেও কুয়াশার অন্ধকারে হারিয়ে যায়। আজ আমাদের অবস্থা এমন, আমরা সবাই দুর্নীতি, অযোগ্যতা আর অসততায় নিমজ্জিত। ইসলামি বিশ্ব আজ দুর্নীতি ও অসততা থেকে মুক্ত নয়। খুন, লুটপাট ও ক্ষমতার অপব্যবহারের পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্যেও আমাদের আমানতদারি ও বিশ্বস্ততা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাণিজ্যিক বিশ্বে আমাদের বিশ্বাসযোগ্যতা একটি প্রশ্নচিহ্ন হিসেবে রয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আমাদের প্রতি আস্থা কোনোভাবেই পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছে না। অথচ আজ আমাদের কাছে নববি আদর্শের দাবি—আমরা যেন হেদায়েতের মূল উৎস কুরআন ও সুন্নাহ আঁকড়ে ধরি। অন্যদের বুদ্ধিবৃত্তিক গোলামী থেকে মুক্ত হই। দুর্নীতি ও অসততার গ্লানি থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করি। আইনের প্রয়োগ করি সকলের প্রতি সমানভাবে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে অন্যান্য জাতির থেকে এগিয়ে যাওয়াকে নিজেদের লক্ষ্য বানিয়ে নিই। সমস্ত জাহেলি কর্মকাণ্ড পদদলিত করে খোলাফায়ে রাশেদীনের যুগের মুসলিম সমাজ পুনরুজ্জীবিত করতে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাই। নববি আদর্শের আলোকে সমকালীন সংকট, প্রেক্ষাপট এবং জাতীয় ও রাষ্ট্রীয় অঙ্গনে নবিজির আদর্শগুলোর পয়গাম দিবে। নবিজির আদর্শের আলোকে আমাদের দুর্বলতা এবং অবনতির কারণ ও জাতীয় ত্রুটিগুলো তুলে ধরবে।