"বসুধারা" বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা: আগে বলা হত জনপদ। এখন পাড়া। এর নানা স্তর। ধোঁয়া যেমন, নানা বায়ুস্তর ঘুরে পাক খায় এবং নিজেই বায়ু হয়ে ওঠে একসময়। আর আগেকার বায়ুর অভিব্যক্তিতে ঘটিয়ে দেয় রকমফের—সেই প্রক্রিয়ায় আবহমানকালের জীবনধারা পাক খেতে থাকে জনপদের নানা স্তর ছুঁয়ে, ভেদ করে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জীবনের বাইরেকার রং পাল্টায়। বদলে যায় চাকচিক্য। কিন্তু আসলে কিছুই কি বদলায়? বিত্ত ও কৌলীন্যমণ্ডিত গৃহস্থপাড়ার পাশাপাশি চিরকাল গড়ে ওঠে নিম্নপ্রবণ জনপদ। যেমন এই কাহিনীর ‘মাথুরের গড়’ পাড়ার পাশাপাশি উদ্বাস্তু কলােনি, ফটিকবিল বস্তি। উচ্চবিত্ত, নিম্নবিত্ত ও বিত্তহীনের ক্রমবসবাস ঘিরে যুগে যুগে রচিত হয় পাপ, পুণ্য, বিশ্বাস, সংস্কার, দ্বন্দ্ব, শােষণ, ঈর্ষা ও দ্বেষের ইতিহাস। মাথুরের গড়ের মল্লিনাথ ডাক্তার উদার ও সর্বজনমান্য। কিন্তু শেষ পর্যন্ত গহিন সংস্কার তাকে আত্মক্ষয়ী করে। তার আত্মবিপর্যয়ের সাক্ষী হয়ে থাকেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, যিনি ধর্ম ও সংস্কারের শিকড় খুঁজতে খুঁজতে একদিন আবিষ্কার করেন দুয়ারে দাড়িয়ে থাকা প্রেমকে—যে থাকে, যাকে হাতড়ে মরতে হয় সারা জীবন, আবার যাকে বুকে করে ভেসে যেতে থাকে খিলপাটনি গাঁয়ের রাধিকা আর শমসের, যে-প্রেমের হাত ধরে সংস্কার টপকে মানবতার জয় প্রতিষ্ঠা করেন চিররুগ্ন অধ্যাপক তৃণাঙ্কুর। এই উপন্যাসে নীলিমা ও নীলােফা দুই বিস্ময়। বয়স এবং সমস্ত সামাজিক বিন্যাসের পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও এই দুই চরিত্রের মধ্যে গড়ে উঠেছে গাঢ় সম্পর্ক। এই উপন্যাসে মা বাবার পরিচয়ের লজ্জায় আত্মঘাতী দেবােপমের পাশে আছে অন্য ধরনের মানুষ অনুপম, অরূপ, প্রণবেশ, শেফালির মা। এখানেই একটি কুড়িয়ে পাওয়া বাচ্চাকে বুকে তুলে নেয় হরিচরণ ও তার পাঁচ সন্তানের জননী তুলসী। জিনি নামের বউটির মৃত্যুকে ঘিরে একটি গণপ্রতিবাদ হয়। আর ফটিকবিল বস্তিতে এক অন্ধ বালক ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখে মানুষের অতীত, বর্তমান এবং হয়তােবা ভবিষ্যৎ জীবন অসংখ্য ঘটনা নিয়ে আবর্তিত হতে থাকে। জীনকে কখনও লাগে প্রশান্ত ও অসীম। কখনও লাগে অশান্ত ও খণ্ডিত। তবু জীবন থামে না। কোন অলক্ষ্য থেকে নিয়ত নির্মিত হতে থাকে মিলন-বিচ্ছেদ, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি, ভালবাসা-বেদনা। তার ওপরই বর্ষিত হয় চিরন্তন অমৃতের ‘বসুধারা।
Tilottama Majumder জন্ম: ১১ জানুয়ারি ১৯৬৬, উত্তরবঙ্গ। কালচিনি চা-বাগানে ইউনিয়ন একাডেমি স্কুলে পড়াশোনা। ১৯৮৫-তে স্নাতক স্তরে পড়তে আসেন কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজে। ১৯৯৩ থেকে লিখছেন। পরিবারের সকলেই সাহিত্যচর্চা করেন। আনন্দ পাবলিশার্সে সম্পাদনাকর্মের সঙ্গে যুক্ত। প্রথম উপন্যাস: মানুষশাবকের কথা। ‘বসুধারা’ উপন্যাসের জন্য পেয়েছেন আনন্দ পুরস্কার। অন্যান্য উপন্যাসের মধ্যে আছে রাজপাট, একতারা, চাঁদের গায়ে চাঁদ ইত্যাদি। ভালবাসেন গান ও ভ্রমণ।