ফ্ল্যাপ স্বাধীনতোত্তর আমাদের সামরিক বাহিনীর অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-সংঘাত, অভ্যুত্থান-পাল্টা অভ্যুত্থান ইত্যাদি নিয়ে অবসরপ্রাপ্ত সেনা-কর্মকর্তাদের কেউ কেউ ইতোমধ্যে স্মৃতিচারণমূলক গ্রন্থ লিখেছেন। কিন্তু সে-সব গ্রন্থের সঙ্গে মেজর জেনারেল (অবঃ) মইনুল হোসেন চৌধুরীর এ- বইটির তফাত হলো পূর্বোক্ত গ্রন্থগুলোর যাঁরা লেখক তাঁদের প্রায় সকলেই ঘটনাপ্রবাহের হয় ভিকটিম নয় বেনিফিসিয়ারি। তাঁদের সে অবস্থানগত দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন স্বাভাবিকভাবেই তাঁদের রচনায়, কমবেশি, ঘটেছে। অন্যপক্ষে একজন দায়িত্বশীল, কর্তব্যনিষ্ঠ, আইনানুগ ও শৃঙ্খলাপরায়ণ সেনা-কর্মকর্তা হিসেবে লেখক শেষদিন পর্যন্ত পক্ষপাতহীনভাবে তাঁর পেশাগত দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট থেকেছেন। আর এই দায়িত্ব পালনের সূত্রেই খুব কাছ থেকে সবকিছুকে দেখার, উপলব্ধি করবার সুযোগ তাঁর হয়েছে। সময়ের উচিত দূরত্বে দাঁড়িয়ে নির্মোহ ও বস্তুনিষ্ঠভাবে সে দিনগুলোর স্মৃতিচারণ করেছেন লেখক তাঁর এক জেনারেলের নীরব সাক্ষ্য : স্বাধীনতার প্রথম দশক প্রন্থটিতে। একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে জাতীয় স্বার্থ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েও লেখক ঘটনার মূল্যায়নে তাঁর দৃষ্টিকে দেখেছেন অনাচ্ছন্ন, দায়বদ্ধ থেকেছেন ইতিহাসের প্রতি। একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে জাতীয় স্বার্থ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েও লেখক ঘটনার মূল্যায়নে তাঁর দৃষ্টিকে দেখেছেন অনাচ্ছন্ন, দায়বদ্ধ থেকেছেন ইতিহাসের প্রতি। এসব বৈশিষ্ট্যের কারণেই রচনাটি যখন ধারাবাহিকভাবে একটি দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত হচ্ছিল তখনই তা সবার আগ্রহ ও মনোযোগ আকর্ষণ করে। স্বাধীনতা-পরবর্তী দেশের রাজনৈতিক-সামাজিক চালচিত্র বুঝতেও বইটি পাঠকদের সহায়তা করবে বলে আমাদের ধারণা।
Title
এক জেনারেলের নীরব সাক্ষ্য স্বাধীনতার প্রথম দশক (১৯৭১-১৯৮১)
১৯৪৩ সালে সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৬২ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন এবং ১৯৬৪ সালে নিয়মিত কমিশন লাভ করে পদাতিক ব্যাটালিয়নে নিয়োজিত হন। ১৯৬৫ সালে তিনি পাক-ভারত যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন এবং আজাদ কাশ্মীর সেনাবাহিনীতে নিয়োজিত ছিলেন। ১৯৭০ সালে তিনি মেজর হিসেবে পদোন্নতি পান। ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে জয়দেবপুর হইতে ২য় ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহে সক্রিয় ভূমিকা নেন। মুক্তিযুদ্ধে তিনি ১ম ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের অধিনায়ক হিসেবে সম্মুখ সমরে নেতৃত্ব দেন। মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অনন্য সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাঁকে বীর-বিক্রম খেতাবে ভূষিত করেন। ১৯৭২-৭৩ সালে তিনি ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক, রাষ্ট্রপতির সামরিক সচিব, ঢাকাস্থ ৪৬ ব্রিগেড ও লগ এরিয়ার অধিনায়ক এবং এডজুটেন্ট জেনারেল হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৫ সালের শেষদিকে তাকে লন্ডনের বাংলাদেশ হাইকমিশনে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা করা হয়। ১৯৭৭ সালে তাকে সেনাবাহিনীর এডজুটেন্ট জেনারেল হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। ১৯৭৮ সালে ব্রিগেডিয়ার পদে এবং ১৯৮০ সালে মাত্ৰ ৩৭ বছর বয়সে তিনি মেজর জেনারেল হিসেবে পদোন্নতি পান । ১৯৮২ সালে জেনারেল মইনকে প্রেষণে ফিলিপাইনে বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ করা হয়। পরে তিনি যথাক্রমে ইন্দােনেশিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত/হাইকমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া তিনি লাওস, নিউজিল্যান্ড, ফিজি ও পাপুয়া নিউগিনিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত/হাইকমিশনার হিসেবে সমন্বতীর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৮৯ থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত ব্যাংককে অবস্থিত এশীয়-প্ৰশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলসমূহের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশনে (ESCAP) বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ছিলেন। থাইল্যান্ডে রাষ্ট্রদূত সেনাবাহিনীর স্পেশাল ওয়ার ফেয়ার এয়ারবোর্ন উইং প্রদান করে। ১৯৯৭ সালে তিনি অস্ট্রেলিয়ার ক্যানবেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেলো মনোনীত হন। ১৯৯৮-এ তিনি অবসরগ্রহণ করেন।