"শাপমােচন" বইয়ের কথা: শাপমােচন বইটা আমার হৃদয় স্পর্শ করেছিল। বইটা পড়তে পড়তে কখনও হেসেছি আবার আফসােসও হয়েছে কিছুটা। জীবনে কোন মাধুরীর ছােয়া না পাওয়ার আক্ষেপও বেড়েছে কিছুটা! আবার শেষ দিকে এসে না চাইলেও বুকটা হাহাকার করে উঠল, চোখের কোণায় জল জমে গেল। কিছু সম্পর্ককে নতুন করে চিনতে শিখলাম, নতুন করে ভালােবাসার এক অনিন্দ্য সুন্দর সংজ্ঞা পেলাম। আমার মতাে আপনাকেও স্পর্শ করবে উপন্যাসটা। লেখনীর ধরন আর বর্ণনার ভাষায় যথেষ্ট এই বইয়ের দুই মলাটে আপনাকে আটতে রাখতে সক্ষম হবে। কাহিনী আবর্তিত হয়েছে মহেন্দ্র আর মাধুরীকে ঘিরে। বড়লােক বাবার একমাত্র কন্যা আর তিন ভাইয়ের একমাত্র আদরের বােন মাধুরী। রূপে, গুনে, মেধায় আর বাকপটুতায় অদ্বিতীয় মাধুরী। তার সাথে কথায় পেরে উঠবে এমন লােক পাওয়া দায়। এই অষ্টাদশী তরুণীকে জয় করার জন্য কতজনের কতরকম চেষ্টা। কিন্তু মাধুরীকে যে জয় করে নিয়েছে ষাট টাকার কেরানী’! কে সেই ভাগ্যবান? যার কাছে নিজেকে সমর্পণ করে দিয়েছে মাধুরী? মহেন্দ্র। মহেন্দ্র হলাে সেই ভাগ্যবান! ঠিক ভাগ্যবান বলাটা বােধহয় ঠিক না। কেন? প্রশ্নটা আপনাদের কাছেই রইল, বই পড়ার পর নিজেই উত্তরটা পেয়ে যাবেন। মহেন্দ্র, এক সময়ের ভদ্র ঘরের সন্তান হলেও দারিদ্রের করাল গ্রাসে আজ তাদের সেই আভিজাত্য ধুলােয় মিশে গেছে। তারপরও রয়েছে যথেষ্ট আত্ম-সম্মান আর শিল্প সাহিত্যের প্রতি অনুরাগ। মহেন্দ্রের পিতার মৃত্যুর পর আর বড় ভাই অন্ধ হওয়ার পর সংসারের ভার এসে পড়ে তার উপর। বাড়িতে অন্ধ দাদা, বৌদি আর নয়নের মনি খােকনের কথা চিন্তা করে কলকাতায় পাড়ি জমায় সে। একটা কাজের সুযােগ মিলবে সে আশায় আশ্রয় নেয় পিতৃবন্ধু উমেশ ভট্টাচার্যের বাড়িতে। এ বাড়ির-ই মেয়ে মাধুরী। মহেন্দ্রের বাবার পরম সহযােগীতায় একদিন উমেশ ভট্টাচার্য মৃত্যু দুয়ার থেকে ফেরত এসেছিল। অনেকদিন সেই বন্ধু কিংবা তার পরিবারের খোঁজ নেয়নি সে। একটা অপরাধ বােধ কাজ করে তার। ফলে মহেন্দ্রকে আদর যত্নের কোনাে ঘাটতি ছিল না তাদের। পিতৃঋণ শােধ করতে মাধুরী নিজেই মহেন্দ্রকে দেখাশুনার দায়িত্ব নেয়। সভ্য সমাজের উপযােগী করে গড়ে তােলে তাকে। মাধুরীর স্পর্শে নিজেকে নতুনভাবে আবিস্কার করে মহেন্দ্র। শৈল্পিক মন জেগে উঠে আবার। একদিকে যেমন চলতে থাকে সঙ্গীত আর সাহিত্যচর্চা তেমনি অন্যদিকে চলতে থাকে টাইপ রাইটিং আর চাকরি খোঁজা। ভদ্র সমাজে নিজ মেধা গুণেই সমাদৃত হতে থাকে সে। এভাবেই এক সময় মহেন্দ্রের মাঝে নিজেকে হারিয়ে ফেলে মাধুরী। ওদিকে একটা চাকরি পেয়ে মাধুরীদের বাসা ছেড়ে মেসে উঠে মহেন্দ্র। সেখানেও মাধুরীর ছােয়ায় আরাে আলােকিত হয়ে উঠে সে। একটা সময় মাধুরী থেকে পালিয়ে যেতে থাকে সে। যেন মহাকালের মাঝে হারিয়ে যেতে চায় সে। এক বিজয়াতে মহেন্দ্র তাদের বাড়িতে এসেছিল। এখন প্রত্যেকটি বিজয়ার দিনেই মহেন্দ্রকে চিঠি লেখে মাধুরী, কিন্তু কোনাে উত্তর আর আসে না। জানতে ইচ্ছে করে , কি সে কারণ? | ২০১৬ এর শেষটা এমন চমৎকার একটা বইয়ের মাধ্যমে শেষ হলাে। চাইলে আপনিও পড়তে পারেন জটিল প্রেম আর মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্বের এই উপন্যাসটি। কথা দিচ্ছি, পড়ার রেশটা লেগে থাকবে অনেকদিন। এমনকি সারাজীবনও মনে থাকতে পারে উপন্যাসটির কথা। মাশরাফি খলিল