গবেষণাগ্রন্থ: শাহবাগের জনতা বাঙালি জাতির স্বাধিকার চেতনাবোধের অনবদ্য ইতিহাস সোপানাকারে নির্মিত। ’৭১ মানে কেবল ’৭১ নয়। ’৪৭, ’৫২, ’৬৫, ’৬৯, ’৭০ আমাদের অমোঘভাবে টেনে নিয়ে গেছে ১৯৭১ পর্যন্ত। ৩০ লাখ শহীদ আর ৪ লাখ নির্যাতিতা নারী আমাদের বিজয় সিঁড়ির উচ্চতা শিখরে নিয়েছিল। ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টে ইতিহাসের এই সিঁড়ি রক্তাক্ত হয়েছিল পুনরায়। তারপর জাতির ভাগ্যাকাশে বারবার গুমোট মেঘ। কিন্তু স্বাধীনতাহীনতায় কে বাঁচিতে চায়?
জাহানারা ইমাম একটি স্ফুলিঙ্গের বীজ বপন করে দিয়েছিলেন। সেই স্ফুলিঙ্গ ক্রমে ক্রমে উত্তাপ বাড়াল জনতার মাঝে। এক-একজন নাগরিক নয়, এক-একটা বারুদ কণা একযোগে বিস্ফোরিত হলো শাহবাগে। শাহবাগ ময়দান প্রকম্পিত হলো। সে কম্পন ভূকম্পনের চেয়ে শক্তিশালী ছিল জনতার পদচারণায়, স্লোগানে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে। অগ্নিশিখা হাতে সামনে ছিল তরুণ। এক নতুন প্রজন্ম।
শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরকে ঘিরে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা ব্যাপী অসংখ্য নিবন্ধের ভিড়ে শেরিফ আল সায়ার-এর আরো একটি নিবন্ধ ‘শাহবাগের জনতা’ লেখকেরই একটি অভিসন্দর্ভের ছায়া অবলম্বনে রচিত। লেখক আন্তর্জাতিক গবেষণার সূত্রছকে শাহবাগ অভ্যুত্থানকে ব্যবচ্ছেদ করেছেন। কিছু সাক্ষাৎকার সংযুক্তি এই নিবন্ধের অন্যতম উপাত্ত। শাহবাগে প্রজন্মের অবস্থান বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়, বরং বাংলাদেশের স্বাধিকার আন্দোলনের ঘটনাবহুল ধারাবাহিকতার গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। লেখক ইতিহাসের ধারাবাহিকতার ছন্দকে তার নিবন্ধে ব্যাহত হতে দেননি। লেখক ব্যক্তি আবেগ বিবর্জিত থেকে প্রত্যক্ষ সাক্ষীদের মতের, উপাত্তের ভিত্তিতে শাহবাগ আন্দোলনের কাঠামোকে দেখতে চেয়েছেন। নিবন্ধে যুক্ত দার্শনিক হ্যাবারমাসের তিনটি মূলস্তম্ভ শর্তে শাহবাগ আন্দোলনের খোলনলচে বিশ্লেষণ থেকে শাহবাগকে ভিন্ন গভীরতায় উপলব্ধি করবেন পাঠক।
শাহবাগের জেগে ওঠা, শাহবাগের রাজনীতি, শাহবাগের সীমাবদ্ধতা, শাহবাগের প্রত্যাশা, শাহবাগের ধর্ম, শাহবাগের আশঙ্কা, শাহবাগের সঙ্কট, শাহবাগের জটিলতা, শাহবাগের অনলাইন-অফলাইন মিডিয়াÑ এমন কিছু আলোচ্য বিষয়ে নির্মোহ থেকেও তির্যক দৃষ্টিভঙ্গি ও সরল উপস্থাপনাগত কারণে অসংখ্য প্রকাশনা থেকে এই প্রকাশনাটি পাঠকের কাছে শাহবাগ আন্দোলনের চরিত্র বিশ্লেষণে অন্যতম প্রাসঙ্গিক আলাপ হয়ে উঠবে। - আইরিন সুলতানা, ব্লগার ও লেখক
"জন্ম ১৯৮৭ সালের ৬ নভেম্বর ঢাকায়। গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুর জেলার বদরপুর গ্রামে। পড়াশোনা করেছেন ঢাকায়। এসএসসি এবং এইচএসসি’র পর ২০১০ সালে ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ (আইইউবি) থেকে ইলেকট্রনিক অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক এবং ২০১৩ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিকেশনে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। বর্তমানে জনপ্রিয় অনলাইন সংবাদমাধ্যম বাংলা ট্রিবিউনের গবেষণা বিভাগের ইনচার্জ হিসেবে কর্মরত আছেন।
লেখকের প্রকাশিত বই: কয়েকটি অপেক্ষার গল্প (প্রকাশকাল: ২০১২) শাহবাগের জনতা (প্রকাশকাল: ২০১৫) এই ঘরে কোনো খুনি নেই (প্রকাশকাল: ২০১৬)"