‘এই আমি’ বইটির ভূমিকা: ব্যক্তিগত রচনা শিরোনামে আমি এক ধরনের লেখা অনেক দিন থেকেই লিখছি। শুরু করেছিলাম ‘হোটেল গ্রেভার ইন’ দিয়ে। প্রকাশ করেছিল কাকলী প্রকাশনী।এই ধারার সর্বশেষ রচনা ‘এই আমি।’ এর প্রকাশকও কাকলী। যেখানে থেকে শুরু সেখানেই শেষ।চক্র সম্পন্ন হল। হুমায়ূন আহমেদ
‘আপনারে আমি খুঁজিয়া বেড়াই’ ফ্ল্যাপে লেখা কথা এক সময় আমি খুব ঘর-কুনো ধরনের ছিলাম। কোথাও যেতে ভাল লাগতো না। নিজের অতি পরিচিত জায়গা ছেড়ে দু’দিনের জন্যে বাইরে যাবার প্রয়োজন হলেও গায়ে জ্বর আসতো। সেই আমাকে সাত বছরের জন্যে দেশ ছেড়ে আমেরিকা যেতে হলো সাত বছর পার করে ফিরে আসার পর পরিচিত সবাই আমার কাছ থেকে শুধু আমেরিকার গল্প শুনতে চায়্ আমি গল্প শোনাই। যাই বলি তাই দেখি সবার ভাল লাগে। শেষ পর্যন্ত ঠিক করলাম গল্পগুলি লিখে ফেলব। লেখা হলো, ‘হোটেল গ্রেভার ইন।’ দীর্ঘদিন দেশে কাটানোর পর আবার তিন মাসের জন্যে আমেরিকা গেলাম। দেখি আগের আমেরিকা বদলে গেছে। কিংবা কে জানে হয়তো আমিই বদলে গেছি। নতুন চোখে দেখা আমেরিকা নিয়ে লিখলাম, ‘মে ফ্লাওয়ার।’ তারপর মনে হলো আমার নিজের জীবনটাওতো বেশ মজার। লিখে ফেললে কেমন হয়? ভাবতে ভাবতে লিখে ফেললাম, ‘অনন্ত অম্বরে’, ‘আমার আপন আঁধার’, ‘এই আমি।’ একইভাবে লেখা হলো ‘আমার ছেলেবেলা।’ প্রায়ই আমাকে প্রশ্ন করা হয়, ব্যক্তিগত রচনা হিসেবে আমি যা লিখছি সবই কি সত্যি? প্রতিবারই এই প্রশ্নের জবাবে হ্যাঁ বলেছি, আবারো বললাম। স্কেচ ধর্মী এইসব লেখা আমার পাঠকরা আনন্দের সঙ্গে গ্রহণ করেছেন, এই আমার জীবনের পরম পাওয়া।
সূচিপত্র * শোনা কথা * একজন অদ্ভুত বাবা * আমার মা * জোছনার ফুল * নানার বাড়ি দাদার বাড়ি * পারুল আপা * স্বপ্নলোকের চাবি * সাহিত্য বাসর * পদ্মপাতায় জল * আমার বন্ধু উনু * জগদলের দিন * শেষ পর্বে শঙ্খনদী * মে ফ্লাওয়ার * আমার আপন আধাঁর * হোটেল গ্রেভার ইন * বাংলাদেশ নাইট * প্রথম তুষারপাত * জননী * এই পরবাসে * ম্যারাথন কিস * লাস ভেগাস * শীলার জন্ম * পাখি * ক্যাম্পে * নামে কিবা আসে যায় * সমুদ্র দর্শন * কবি সাহেব * লেখালেখি খেলা * শ্বেতপদ্ম * শিল্পী সুলতান * লাউ মন্ত্র * মাসাউকি খাতাঁওরা * ইংলিশ ম্যান * হিজ মাস্টারস ভয়েজ * নুহাশ এবং সে * বটবৃক্ষ * ভাইভা * হোটেল আহমেদিয়া * এই আমি * চোখ * উৎসব * উমেশ * পেট্রিফায়েড ফরেস্ট * সে * নারিকেল মামা * পরীক্ষা * আমার বন্ধু সফিক * মিসির আলি ও অন্যান্য * বর্যাযাপন * ফ্রাংকেনস্টাইন * চান্নিপসর রাইত * লালচুল
‘আমার আপন আঁধার’ বইটির ভূমিকা: সবারই কিছু ব্যক্তিগত গল্প থাকে, আমারও আছে।একান্তই নিজের গল্প। হাঠাৎ হঠাৎ গল্পগুলি অন্যকে শোনাতে ইচ্ছা করে, কিন্তু বেশির ভাগ সময় করে না। মনে হয়- আমার আপন আঁধার অন্যকে জানিয়ে কি হবে? থাকুক না সেগুলি পুরানো ডাইরীতে। তাই হয়ত খাকতো। এক সন্ধ্যায় গুলতেকিন বলল, তুমি যে একবার জ্বীন দেখেছিলে সেই গল্পটা লিখে ফেল না কেন ? দারুণ ব্যাপার। ব্যাপার মোটেই দারুণ নয়। ১৯৭১ সনে যখন আমরা বরিশালের গোয়ারেখা নামের এক গ্রামে পালিয়ে ছিলাম তখন এক জ্বীন (?) আমাদের চোখের সামনে লাফালাফি করতে লাগল। দৃষ্টি বিভ্রম নয়, আমরা সব ভাইবোন দৃশ্যটি দেখে আতংকে জমে গিয়েছিলাম। সেই জ্বীন দেখার গল্পটি লিখতে গিয়ে আমার আপন আঁধার লেখা হল। তবে জ্বীন দেখার গল্পটি বাদ পড়ল। এই গল্প বলার সময় এখনো আসেনি। হুমায়ূন আহমেদ ১/২/৯৩ নিউ এলিফেন্ট রোড ঢাকা সূচীপত্র সমুদ্র দর্শন কবি সাহেব লেখালেখি খেরা শ্বেতপদ্ম শিল্পী সুলতান লাউ মন্ত্র মাসাউকি খাঁতাওরা ইংলিশম্যান হিজ মাস্টারস্ ভয়েস্ নুহাশ এবং সে বটবৃক্ষ ভাইভা হোটেল আহমেদিয়া
বাংলা সাহিত্যের এক কিংবদন্তী হুমায়ূন আহমেদ। বিংশ শতাব্দীর বাঙালি লেখকদের মধ্যে তিনি অন্যতম স্থান দখল করে আছেন। একাধারে ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার ও নাট্যকার এ মানুষটিকে বলা হয় বাংলা সায়েন্স ফিকশনের পথিকৃৎ। নাটক ও চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবেও তিনি বেশ সমাদৃত। বাদ যায়নি গীতিকার কিংবা চিত্রশিল্পীর পরিচয়ও। সৃজনশীলতার প্রতিটি শাখায় তাঁর সমান বিচরণ ছিল। অর্জন করেছেন সর্বোচ্চ সফলতা এবং তুমুল জনপ্রিয়তা। স্বাধীনতা পরবর্তী বাঙালি জাতিকে হুমায়ুন আহমেদ উপহার দিয়েছেন তাঁর অসামান্য বই, নাটক এবং চলচ্চিত্র। চলচ্চিত্রের বদৌলতে মানুষকে করেছেন হলমুখী, তৈরি করে গেছেন বিশাল পাঠকশ্রেণীও। তাঁর নির্মিত প্রথম চলচ্চিত্র ‘আগুনের পরশমনি’ দেখতে দর্শকের ঢল নামে। এছাড়া শ্যামল ছায়া, শ্রাবণ মেঘের দিন, দুই দুয়ারী, চন্দ্রকথা, ঘেটুপুত্র কমলা প্রভৃতি চলচ্চিত্র সুধীজনের প্রশংসা পেয়েছে। অনন্য কীর্তি হিসেবে আছে তাঁর নাটকগুলো। এইসব দিনরাত্র, বহুব্রীহি, আজ রবিবার, কোথাও কেউ নেই, অয়োময়ো আজও নিন্দিত দর্শকমনে। হিমু, মিসির আলি, শুভ্রর মতো চরিত্রের জনক তিনি। রচনা করেছেন নন্দিত নরকে, শঙ্খনীল কারাগার, জোছনা ও জননীর গল্পের মতো সব মাস্টারপিস। শিশুতোষ গ্রন্থ, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক রচনা, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী মিলিয়ে হুমায়ূন আহমেদ এর বই সমূহ এর পাঠক সারাবিশ্বে ছড়িয়ে আছে। হুমায়ূন আহমেদ এর বই সমগ্র পৃথিবীর নানা ভাষায় অনূদিতও হয়েছে। সৃজনশীল কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অর্জন করেছেন বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৮১), একুশে পদক (১৯৯৪), হুমায়ুন কাদির স্মৃতি পুরস্কার (১৯৯০), লেখক শিবির পুরস্কার (১৯৭৩), মাইকেল মধুসূধন দত্ত পুরস্কার (১৯৮৭), জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (১৯৯৩ ও ১৯৯৪), বাচসাস পুরস্কার (১৯৮৮), শিশু একাডেমি পুরস্কার, জয়নুল আবেদীন স্বর্ণপদকসহ নানা সম্মাননা। হুমায়ূন আহমেদ এর বই, চলচ্চিত্র এবং অন্যান্য রচনা দেশের বাইরেও মূল্যায়িত হয়েছে৷ ১৯৪৮ সালের ১৩ই নভেম্বর, তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে, নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলায় কুতুবপুরে পীরবংশে জন্মগ্রহণ করেন হুমায়ূন আহমেদ। কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন থাকার পর নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটনের বেলভ্যু হাসপাতালে তিনি ইহলোক ত্যাগ করেন। গাজীপুরে তাঁর প্রিয় নুহাশ-পল্লীতে তাঁকে সমাহিত করা হয়।