‘ফুলিদের বাঘ’ বইয়ের ফ্ল্যাপের কথাঃ অনেকদিন আগে আমেরিকার অরিগন। স্টেটে একটা সাফারী পার্কে আমরা খুব হাসিখুশী একটা বাঘ দেখেছিলাম। যে কেউ তাকে কোলে নিয়ে ছবি তুলতে পারতো- আমরাও তুলেছিলাম। এই বইয়ের শেষ পৃষ্ঠায় সেই ছবিগুলো দিয়ে দিয়েছি! সেই বাঘটি দেখে আমার মনে হয়েছিল হাসিখুশী একটা বাঘ নিয়ে গল্প লিখলে কেমন হয়? সেজন্যে লেখা হলো, ফুলিদের বাঘ। মুহম্মদ জাফর ইকবাল বইয়ের কিছু অংশঃ সুন্দরবনের গহীন জঙ্গলে থাকত এক বাঘিনী মা, তার ছিল তিনটি বাচ্চা। বাঘের বাচ্চাগুলো যখন একটু বড় হলো তখন একদিন বাঘিনী মা তাদেরকে ডেকে বলল, “তোরা তো এখন বড় হয়েছিস। তোদের এখন হরিণ শিকার করা শিখতে হবে। হরিণের মাংস হচ্ছে আমাদের সবচেয়ে প্রিয় খাবার। যখন দেখবি হরিণের পাল হেঁটে যাচ্ছে তখন পেছন থেকে তাদের ওপর ঝাপিয়ে পড়তে হবে, ঘাড়ের মাঝে কামড় দিতে হবে” বাঘের ছোট বাচ্চাটা বলল, “না, না আম্মু ওইভাবে বলো না। হরিণ কত সুন্দর, দেখতে কী মায়া লাগে আমি কক্ষনো হরিণের ঘাড়ে কামড় দিতে পারব না। কক্ষনো না।” বাঘিনী চোখ কপালে তুলে বলল, “সে কী! হরিণ শিকার করা না শিখলে তুই খাবি কী?” “আমি ফলমূল খাব। মধু খাব। ঘাসের বিচি খাব।” অন্য দুটি বাঘের বাচ্চা চিল্কার করে বলল, “বাঘের বাচ্চা কক্ষনো ফলমূল খায় না। মধু খায় না। ঘাসের বিচি খায় না।” ছোট বাচ্চাটা বলল, “না খেলে নাই। আমি খাব।” ফুলিদের বাঘ • ৫ লেখকের কথাঃ মুহম্মদ জাফর ইকবাল। জন্ম : ২৩ ডিসেম্বর ১৯৫২, সিলেট। বাবা মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ফয়জুর রহমান আহমদ এবং মা আয়েশা আখতার খাতুন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র, পিএইচডি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অফ ওয়াশিংটন থেকে। ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি এবং বেল কমিউনিকেশান্স রিসার্চে বিজ্ঞানী হিসেবে কাজ করে সুদীর্ঘ আঠার বছর পর দেশে ফিরে এসে অধ্যাপক হিসেবে যোগ দিয়েছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। স্ত্রী প্রফেসর ড. ইয়াসমীন হক, পুত্র নাবিল এবং কন্যা ইয়েশিম।
বাংলাদেশের কিশোর-কিশোরী পাঠকদের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় নাম মুহম্মদ জাফর ইকবাল। তিনি মূলত এ দেশের একজন বিখ্যাত লেখক, পদার্থবিদ এবং শিক্ষাবিদ। কিশোর সাহিত্য, শিশুতোষ গ্রন্থ, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী, গণিত বিষয়ক বই এর জন্য খুব অল্প সময়েই জনপ্রিয়তা লাভ করেন তিনি। মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৯৫২ সালের ২৩ ডিসেম্বর সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন। মুক্তিযোদ্ধা বাবা ফয়জুর রহমানের চাকরির সুবাদে দেশের বিভিন্ন জেলাতেই তিনি পড়াশোনা করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করে পিএইচডি ডিগ্রী অজর্নের উদ্দেশ্যে স্কলারশিপ নিয়ে পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ে। পিএইচডি সম্পন্ন করে ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজিতে পোস্ট-ডক্টরাল গবেষণা সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে বিখ্যাত বেল কমিউনিকেশনস রিসার্চ ল্যাবেও গবেষক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৯৪ সালে দেশে ফিরে এসে তিনি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে যোগ দেন। মুহম্মদ জাফর ইকবাল এর বই সবসময়ই এ দেশের কিশোর-কিশোরীদের কাছে বিশেষ আবেদন নিয়ে হাজির হয়েছে। কিশোর সাহিত্য, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী, বিজ্ঞান ও গণিত বিষয়ক অজস্র গ্রন্থ দিয়ে তিনি আলোকিত করে তুলেছেন এদেশের অগণিত কিশোর-কিশোরীর মনোজগত। মুহম্মদ জাফর ইকবাল এর বই সমূহ, যেমন- দীপু নাম্বার টু, আমার বন্ধু রাশেদ, আমি তপু, শান্তা পরিবার, দস্যি ক’জন ইত্যাদি ব্যাপক পাঠকপ্রিয়তা পায়। তার বেশ কিছু গল্প পরবর্তীতে নাটক ও চলচ্চিত্র হিসেবে টিভি পর্দায় স্থান করে নিয়েছে। তিনি একজন বিশিষ্ট কলামিস্টও। বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডও তাঁর ছত্রছায়ায় গড়ে উঠেছে। মুহম্মদ জাফর ইকবাল এর বই সমগ্র সকল বইপড়ুয়াকেই আকৃষ্ট করে। সাহিত্যে অসামান্য অবদানের জন্য তিনি বহুবার পুরষ্কৃত হয়েছেন। বাংলা একাডেমি পুরষ্কার (২০০৪) এবং শ্রেষ্ঠ নাট্যকার হিসেবে মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার (২০০৫) সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও, কাজী মাহবুবুল্লা জেবুন্নেছা পদক (২০০২), শেলটেক সাহিত্য পদক (২০০৩), ইউরো শিশুসাহিত্য পদকসহ (২০০৪) অগণিত পুরষ্কার অর্জন করেছেন গুণী এই সাহিত্যিক।