ভূমিকা: পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের আলোকে জীবন গড়ার আহ্বান জানিয়ে ছাত্রজীবন থেকে আমরা যে আন্দোলনের সূচনা করেছিলাম, জীবনের পড়ন্ত বেলায় সরকারের যিন্দানখানায় এসে সেই দুই আলোকস্তম্ভের গভীরে প্রবেশের সুয়োগ পেয়ে আল্লাহপাকের শুকরিয়া আদায় করছি। ফাসির সেলের সংকীর্ণ নির্জন কক্ষে বসে সাক্ষাৎ মৃত্যুকে সামনে রেখে কুরআনে ডুবে যাওয়ার যে আলাদা তৃপ্তি রয়েছে, বাইরের জীবনে তা সহজে অনুভব করা যায় না। সে দিনের সেই লেখাগুলির একাংশ ‘আম্মা পারা’র তাফসীর পরিমার্জিত হয়ে প্রেসে যাওয়ার এ মুহূর্তটি দীন লেখকের জন্য তাই সত্যিই স্মরণীয়। আমরা সর্বান্তঃকরণে আল্লাহর প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি, যিনি এই মহতী খেদমতটি আমাদের মাধ্যমে করিয়ে নিলেন। ফালিল্লাহিল হামদ। বাকী অংশগুলি ধীরে ধীরে প্রকাশিত হবে ইনশাআল্লাহ। তাফসীরে গৃহীত নীতিমালা : (১) প্রথমে সমার্থবোধক কুরআনের অন্যান্য আয়াতসমূহ দ্বারা ব্যাখ্যা করা হয়েছে। অতঃপর (২) ছহীহ হাদীছ দ্বারা। অতঃপর প্রয়োজনে (৩) আছারে ছাহাবা ও তাবেঈনের ব্যাখ্যা দ্বারা, যা বিশুদ্ধভাবে প্রমাণিত। (৪) তাওহীদে আসমা ওয়া ছিফাত অর্থাৎ আল্লাহর নাম ও গুণাবলী বিষয়ে ছাহাবায়ে কেরাম ও সালাফে ছালেহীনের বুঝ ও তাঁদের গৃহীত নীতিমালার অনুপুঙ্খ অনুসরণের সাধ্যমত চেষ্টা করা হয়েছে। যে বিষয়ে প্রাচীন ও আধুনিক বহু মুফাসসিরের পদস্খলন ঘটেছে। (৫) মর্মগত ইখতেলাফের ক্ষেত্রে তাফসীরের সর্বস্বীকৃত মূলনীতি অনুসরণ করা হয়েছে এবং সর্বাগ্রগণ্য বিষয়টি গ্রহণ করা হয়েছে। (৬) তরজমার ক্ষেত্রে কুরআনের উদ্দিষ্ট মর্ম অক্ষুন্ন রেখে তা সাধ্যমত স্পষ্ট করা হয়েছে। (৭) ক্ষেত্র বিশেষে আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়সমূহ তুলে ধরা হয়েছে। (৮) আয়াতের সামাজিক ও বৈজ্ঞানিক দিকগুলি ব্যাখ্যা করা হয়েছে। (৯) তাফসীরের সর্বত্র চরমপন্থী ও শৈথিল্যবাদী আকীদা সমূহের বিপরীতে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা'আত আহলেহাদীছের মধ্যপন্থী আকীদা অক্ষুন্ন রাখা হয়েছে। (১০) বিদ্বানগণের অনিচ্ছাকৃত ভুল এবং প্রবৃত্তিপরায়ণদের স্বেচ্ছাকৃত ব্যাখ্যাসমূহ থেকে প্রয়োজনীয় স্থানসমূহে পাঠককে সতর্ক করা হয়েছে। (১১) আম্মাপারার সূরাসমূহের বিষয়বস্তু, গুরুত্ব, শানে নুযূল, ফযীলত ও সারকথা বর্ণিত হয়েছে। ‘আম্মাপারা কুরআনের সবচেয়ে কঠিন ও সারগর্ভ সূরা ও আয়াতসমূহের সমষ্টি। যেগুলির কলেবর অতীব সংক্ষিপ্ত, অথচ গভীর ভাব ও সূক্ষ্ম তত্ত্ব সমৃদ্ধ এবং আখেরাতের দ্যোতনায় উদ্দীপ্ত। আম্মাপারার গভীরে যে ডুব দিবে, দুনিয়ার এই ক্ষুদ্র পরিসর ছেড়ে জান্নাতের গুলবাগিচায় পাড়ি দেওয়ার জন্য সে পাগলপারা হবে। হিংসা-হানাহানির এই কয়েদখানা ছেড়ে সে তার সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর সান্নিধ্যে পৌছে যাওয়ার জন্য উতলা হয়ে উঠবে। তাই কুরআনের প্রতিটি শব্দ ও বর্ণকে আল্লাহর কালাম হিসাবে দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে পাঠ করা ও তার প্রতি সশ্রদ্ধ আমল করার আবেদন জানিয়ে ‘তাফসীরুল কুরআন পাঠের প্রতি আল্লাহভীরু পাঠকদের আহ্বান জানাচ্ছি। নিঃস্বার্থ এ লেখনীকে আল্লাহ নাচী লেখকের ও তার পরিবারের এবং তার মরহুম পিতা-মাতার জান্নাতের অসীলা হিসাবে কবুল করুন! অনিচ্ছাকৃত ভুল সমূহের জন্য সর্বদা আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থী। পরিশেষে এ তাফসীরগ্রন্থ প্রকাশে সংশ্লিষ্ট ও সহযোগী সকলকে আন্তরিক মুবারকবাদ জানাচ্ছি। আল্লাহ তাদেরকে ইহকালে ও পরকালে উত্তম জাযা দান করুন। আমীন! বিনীত -লেখক
বাংলাদেশের অন্যতম প্রসিদ্ধ ইসলামী চিন্তাবিদ মুহাম্মদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব। ১৯৪৮ সালের ১৫ জানুয়ারী সাতক্ষীরার বুলারাটি গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মাওলানা আহমাদ আলী বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের একজন বিখ্যাত আহলে-হাদিস আলেম ছিলেন। তাঁর শিক্ষাজীবনের শুরু সাতক্ষীরার কাকডাঙ্গা সিনিয়র মাদরাসা থেকে। এই প্রতিষ্ঠান থেকে তিনি দাখিল, আলিম ও ফাযিল এবং জামালপুর থেকে ১৯৬৯ সালে কামিল পরীক্ষা কৃতিত্বের সাথে পাশ করেন। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে মাদরাসা বোর্ডে আলিম ও কামিল পরীক্ষায় অসাধারণ কৃতিত্ব দেখান যথাক্রমে ১৬তম ও ৫ম হয়ে। অতঃপর তিনি কলারোয়া সরকারি কলেজ থেকে আইএ এবং খুলনার সরকারি মজিদ কলেজ থেকে বিএ পাশ করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগ থেকে মাস্টার্স পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন এবং প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অর্জন করেন। পিএইচডি গবেষণার জন্য ইংল্যান্ডে কমনওয়েলথ স্কলারশিপ অর্জন করলেও পরবর্তীতে আর যাননি। অতঃপর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯২ সালে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৮০ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব মডার্ন ল্যাঙ্গুয়েজে খন্ডকালীন লেকচারার হিসেবে যোগদান করেন। একই বছর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি ও ইসলাম শিক্ষা বিভাগে লেকচারার হিসেবে যোগ দেন। এই বিভাগ থেকেই ২০১৬ সালে অবসর নেন। তিনি লেখালেখি করেন রাজনীতি, অর্থনীতি্ সাহিত্য, রাষ্ট্রনীতি, ধর্ম প্রভৃতি বিষয়ে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পত্রিকায় তাঁর প্রকাশিত প্রবন্ধ-নিবন্ধের সংখ্যা প্রায় ৫ শতাধিক ছাড়িয়েছে। তিনি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ‘আহলে-হাদীস আন্দোলন-বাংলাদেশ’ এর প্রতিষ্ঠাতা ও বর্তমান আমীর। মুহাম্মদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব এর বই সমূহ মূলত ধর্মীয় বিভিন্ন বিষয়, আহলে-হাদীস আন্দোলন, নবী-রাসূলদের জীবনী, ইসলামি খেলাফতের প্রাচীন ও বর্তমান অবস্থার দিকে বেশি গুরুত্ব দেয়। এই ইসলামি চিন্তাবিদ ও গবেষক পেশাগত কাজে দেশে-বিদেশে ভ্রমণ করেছেন। আরবি, ফার্সি, উর্দু ও ইংরেজি ভাষায় তাঁর দক্ষতা রয়েছে। পাঠক সমাদৃত মুহাম্মদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব এর বই সমগ্র হলো ‘আহলে হাদীস আন্দোলন কী ও কেন’, ‘জীবন দর্শন’, ‘ইনসানে কামেল’, ’ছালাতুর রাসূল (ছাঃ), ‘তিনটি মতবাদ’ ইত্যাদি। ২০০০ সালে সৌদি সরকারের রাজকীয় মেহমান হিসেবে হজব্রত পালন করেন তিনি।