“নাট্যতত্ত্ব বিচার” বইটির প্রথম দিকের কিছু কথাঃ নাট্যবিচারের গােড়ার কথা। নাটক ও উপন্যাস, নাট্যমঞ্চ, নাট্যলক্ষণ, নাট্যসংজ্ঞা ও নাট্যবিচার সূচনা ও নাটক জীবনের বহুবিচিত্র রূপের এক শক্তিশালী দর্পণ। এমন নিবিড়ভাবে জীবনের প্রত্যক্ষ রূপ আর কোথাও লভ্য নয়। কিন্তু মনে রাখতে হয়, এই নাটক হল মিশ্র চারুকলা (Composite Arts)। নাট্যগ্রন্থ শুধুই পাঠ্য নয়, অভিনেয়ও বটে। এর অভিনয়-সাফল্য নির্ভর করে নাট্যকার, অভিনেতা, প্রযােজক ও দর্শকের আন্তরিক সহযােগিতার ওপর। এ-সমস্তের সহযােগিতায় উপস্থাপ্য নাট্যশিল্পের শ্রেষ্ঠত্ব তাই প্রশ্নাতীত। আচার্য ভরত বলেছেন, “এমন কোনাে জ্ঞান, শিল্প, কলা, যােগ, বিদ্যা ও কর্ম নেই—যা নাটকে মেলে না।” নাটক সভ্যতার প্রথম প্রভাতে একদা জনচিত্তরঞ্জনের জন্যে উদ্ভূত হয়েছিল—গ্রীসে ও ভারতবর্ষে। তারপর হাজার হাজার বছর ধরে চলেছে তার অপ্রতিহত জয়যাত্রা। এখন নাটক শুধুমাত্র অবসর-বিনােদনের সঙ্গীই নয়, মানুষের জীবনের চারদিকে যে অজস্র সমস্যা সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয়–সকল কিছুর প্রকৃত রূপ দেখাতে সে আগ্রহী। অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে মানুষকে সংঘবদ্ধ হওয়ার আহ্বান এবং মানুষের বিবেক ও চৈতন্যকে সদাজাগ্রত করে রাখার গানও নাটক শুনিয়ে চলেছে। নাটকের শেষ লক্ষ্য আনন্দদান একথা ঠিক, কিন্তু সেই লক্ষ্যে পৌঁছতে গিয়ে নাটক যা কিছু আশ্রয় করে থাকে, তার মধ্য দিয়ে জনজাগরণ বা গণচেতনার উদ্বোধনও হচ্ছে। একথা সত্য যে, জীবনকে বাদ দিয়ে সাহিত্য অর্থহীন। জীবন ও তার নানা সমস্যার রূপ নাটকে প্রতিফলিত হয়। চরমতম উৎকণ্ঠা, সংকট ও সংঘাতের মুহূর্তগুলােতে মনুষ্যত্বের যে দীপ্তি, তার অন্তর্নিহিত রূপের যে পরিচয় আমরা নাটকে পাই তা বিস্ময়কর। ১. নাটক ও উপন্যাস ? | কাব্য ও উপন্যাসের মতাে নাটকেরও মূল উপজীব্য মানবজীবন। শব্দ ও অর্থের সহযােগে সৃষ্টিশীল কল্পনায় অনুভূত জীবন-অভিজ্ঞতার রূপায়ণ ও জনচিত্তে তার সঞ্চারণ কাব্য-উপন্যাসের মতাে নাটকেরও অন্বিষ্ট। তথাপি জীবনের রূপ বা জীবনের অভিজ্ঞতার প্রকাশ নাটকে বিশিষ্ট। নানা প্রবৃত্তির সংঘর্ষে, প্রতিকূল প্রতিবেশের সঙ্গে বােঝাপড়ায়, দৃশ্য বা অদৃশ্য বহু বিরুদ্ধ শক্তির সঙ্গে সংগ্রামে, অনির্দেশ্য বা অস্পষ্ট ভাবব্যঞ্জনার সংকেতে, বহু-বিচিত্র সমস্যার আলােচনায়