"বিশাখার জন্মদিন ও মনোভূমি" বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা: অধ্যাপিকা বিশাখা নন্দী মফসসলের একটি কলেজে এল চাকরি করতে। এ এক নতুন জগৎ তার কাছে। কলকাতায় আছে তার প্রেমিক প্রসিত। সে শিল্পী, নাস্তিক, উদার মনের মানুষ। প্রসিতের জন্য মনটা হু হু করে বিশাখার, তবু সে। প্রসিতকে কাছে আসতে দিতে চায় না। প্রসিতের কাছে ওর ছুটে যেতে ইচ্ছে হয়, কিন্তু যায় না বিশাখা। সেই ইচ্ছেটাকেই দু'হাতে আদর করে। কলেজের কাছে প্রকাশ আঢ্য নামে একজনের বাড়িতে ভাড়া থাকে বিশাখা। এই ভদ্রলােক একদিন ওকে আচমকা ধর্ষণ করল। বিধ্বস্ত, বিপর্যস্ত বিশাখা সব বিশ্বাস হারিয়ে ফিরে এল কলকাতায়। নিদারুণ দ্বিধায় প্রসিতকে সব জানাল। কী আশ্চর্য, প্রসিত ওকে ফিরিয়ে দিল না! বরং বলল, মানুষের শরীর হল অমৃত, তা কখনও উচ্ছিষ্ট হয় না। কিন্তু সংকট শুরু হল এখান থেকেই। প্রসিতের মনের মধ্যে গেঁথে গেল এক অবসেশন। সমস্ত ইচ্ছে যেন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কীভাবে কাটিয়ে উঠল প্রসিত এই সংকট? আপাতশান্ত এক যুবক চন্দন। সে অন্যরকম। সে বৃষ্টি ভালবাসে। চাকরি করে ওষুধের কোম্পানিতে। লেখিকা মুকুলিকার সঙ্গে আলাপ হয় চন্দনের। সেই আলাপ প্রগাঢ় হওয়ার আগেই রাধা নামে একটি পতিতার সঙ্গে চন্দনের পরিচয়। হল ঘটনাচক্রে একদিন রাধাকেই সে বিয়ে করল। সমাজের বিরুদ্ধে গেল চন্দনের এই বিয়ে। চাকরি চলে যায় চন্দনের। রাধাও বােঝে না কেন এই মানুষটা তাকে ভালবাসে। একদিন রাধা নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। মুকুলিকার সঙ্গে ফের দেখা হল চন্দনের। অথচ মুকুলিকা সুখ খোঁজে, চন্দন ভালবাসা। অঝাের বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে হঠাৎ রাধাকে দেখতে পেল চন্দন। তারপর? ভালবাসার দুই দিগন্ত ছুঁয়ে আছে দুটি কাহিনী।
বিশ শতকের শেষাংশে জন্ম নেওয়া সব্যসাচী একজন বাঙ্গালি সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, সম্পাদক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট- এমন বহু পরিচয়ে সাহিত্যের অগণিত ক্ষেত্রে তিনি রেখেছেন তাঁর সুকুমার ছাপ। নীললোহিত, সনাতন পাঠক কিংবা কখনো নীল উপাধ্যায় ছদ্মনামে প্রকাশিত হয়েছে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এর বই সমূহ। অধুনা বাংলাদেশের মাদারীপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন ৭ সেপ্টেম্বর ১৯৩৪। কিন্তু মাত্র চার বছর বয়সেই স্কুল শিক্ষক বাবার হাত ধরে সপরিবারে পাড়ি দিয়েছিলেন কলকাতায়। ১৯৫৩ সালে সাহিত্যে বিচরণ শুরু হয় কৃত্তিবাস নামের কাব্যপত্রিকার সম্পাদনার মধ্য দিয়ে। ১৯৫৮ সালে প্রকাশ পায় প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘একা এবং কয়েকজন’। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এর বই মানেই পাঠকের কাছে আধুনিকতা আর রোমান্টিকতার মেলবন্ধন। তাঁর উল্লেখযোগ্য কয়েকটি কবিতার বই হলো ‘আমি কী রকম ভাবে বেঁচে আছি’, ‘যুগলবন্দী’ (শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে), ‘হঠাৎ নীরার জন্য’, ‘রাত্রির রঁদেভূ’ ইত্যাদি। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের বই সমগ্র ‘পূর্ব-পশ্চিম’, ‘সেইসময়’ এবং ‘প্রথম আলো’ তাঁকে এপার, ওপার আর সারাবিশ্বের বাঙালির কাছে করেছে স্মরণীয়। ‘কাকাবাবু-সন্তু’ জুটির গোয়েন্দা সিরিজ শিশুসাহিত্যে তাকে এনে দিয়েছিলো অনন্য পাঠকপ্রিয়তা। তাঁরই উপন্যাস অবলম্বনে কিংবদন্তী পরিচালক সত্যজিৎ রায় পরিচালনা করেছিলেন ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’ এবং ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’র মতো চলচ্চিত্র। পাঠক সমাদৃত ভ্রমণকাহিনী ‘ছবির দেশে কবিতার দেশে’ কিংবা আত্মজীবনীমূলক ‘অর্ধেক জীবন বই’তে সাহিত্যগুণে তুলে ধরেছিলেন নিজেরই জীবনের গল্প। ২০১২ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত চার দশকে তিনি পরিচিত ছিলেন জীবনানন্দ পরবর্তী পর্যায়ের অন্যতম প্রধান কবি এবং বাংলা সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব হিসেবে।