mega fest banner
bornomala bike
জহির রায়হানের বইয়ের রকমারি কালেকশন (৮টি বই) image

জহির রায়হানের বইয়ের রকমারি কালেকশন (৮টি বই) (হার্ডকভার)

by জহির রায়হান

TK. 1,090 Total: TK. 935

(You Saved TK. 155)
  • Look inside image 1
  • Look inside image 2
  • Look inside image 3
  • Look inside image 4
  • Look inside image 5
  • Look inside image 6
  • Look inside image 7
  • Look inside image 8
  • Look inside image 9
  • Look inside image 10
  • Look inside image 11
  • Look inside image 12
  • Look inside image 13
  • Look inside image 14
  • Look inside image 15
  • Look inside image 16
  • Look inside image 17
  • Look inside image 18
  • Look inside image 19
জহির রায়হানের বইয়ের রকমারি কালেকশন (৮টি বই)
Clearance Image

Ends in

00 : Day
00 : Hrs
00 : Min
00 Sec

জহির রায়হানের বইয়ের রকমারি কালেকশন (৮টি বই) (হার্ডকভার)

বরফ গলা নদী, আর কতদিন, হাজার বছর ধরে, একুশে ফেব্রুয়ারি, কয়েকটি মৃত্যু, আরেক ফাল্গুন, শেষ বিকেলের মেয়ে, বরফ গলা নদী,গল্প সমগ্র

576 Ratings  |  341 Reviews
wished customer count icon

112 users want this

TK. 1,090 TK. 935 You Save TK. 155 (14%)

বর্তমানে প্রকাশনীতে এই বইটির মুদ্রিত কপি নেই। বইটি প্রকাশনীতে এভেইলেবল হলে এসএমএস/ইমেইলের মাধ্যমে নোটিফিকেশন পেতে রিকুয়েস্ট ফর রিপ্রিন্ট এ ক্লিক করুন।

book-icon

বই হাতে পেয়ে মূল্য পরিশোধের সুযোগ

mponey-icon

৭ দিনের মধ্যে পরিবর্তনের সুযোগ

আখেরি অফার image

Package Details

No. Product Name Category MRP Discount Current Price
01 Borof Gola Nodi image বরফ গলা নদী Classic Novel 250.0 Tk. 28.0% 180.0 Tk.
02 Areak Falgun image আরেক ফাল্গুন Classic Novel 200.0 Tk. 28.0% 144.0 Tk.
03 Koyekti Mritu image কয়েকটি মৃত্যু Classic Novel 80.0 Tk. 14.0% 69.0 Tk.
04 Akushe February image একুশে ফেব্রুয়ারি Classic Novel 120.0 Tk. 28.0% 86.0 Tk.
05 Hazar Bosor Dhore image হাজার বছর ধরে Classic Novel 180.0 Tk. 14.0% 155.0 Tk.
06 Ar Kotodin image আর কতদিন Classic Novel 80.0 Tk. 14.0% 69.0 Tk.
07 Golpo Somoggro image গল্প সমগ্র Story Compilation 350.0 Tk. 28.0% 252.0 Tk.

Total :955 Tk.

You can save 155 Tk.

Customers Also Bought

Product Specification & Summary

এতে আছেঃ ১/ শেষ বিকেলের মেয়ে
২/ হাজার বছর ধরে
৩/ আরেক ফাল্গুন
৪/ বরফ গলা নদী
৫/ আর কত দিন
৬/ কয়েকটি মৃত্যু
৭/ একুশে ফেব্রুয়ারী
৮/ গল্প সমগ্র

“বরফ গলা নদী” বইটির প্রথম দিকের কিছু কথাঃ উত্তরের জানালাটা ধীরে ধীরে খুলে দিলাে লিলি। একঝলক দমকা বাতাস ছুটে এসে আলিঙ্গন করলাে তাকে। শাড়ির আঁচলটা কাঁধ থেকে খসে পড়লাে হাতের উপর। নিকষ কালাে চুলগুলাে ঢেউ খেলে গেলাে। কানের দুলজোড়া দোলনের মতাে দুলে উঠলাে। নীলরঙের পর্দাটা দু-হাতে টেনে দিলাে সে। তারপর বইয়ের ছােট আলমারিটার পাশে, যেখানে পরিপাটি করে বিছানাে বিছানার ওপর দু-হাত মাথার নিচে দিয়ে মাহমুদ নীরবে শুয়ে, সেখানে এসে দাঁড়ালাে লিলি। আস্তে করে বসলাে তার পাশে। ওর দিকে ক্ষণকাল তাকিয়ে থেকে মাহমুদ বলল, আমি যদি মারা যেতাম তাহলে তুমি কী করতে লিলি ?
আবার সে কথা ভাবছাে? ওর কণ্ঠে ধমকের সুর। মাহমুদ আবার বলল, বলাে না, তুমি কী করতে ? কাঁদতাম। হলাে তাে ? একটু নড়েচড়ে বসলাে লিলি। হাত বাড়িয়ে মাহমুদের চোখজোড়া বন্ধ করে দিয়ে বলল, তুমি ঘুমােও। প্লিজ ঘুমােও এবার। নইলে শরীর খারাপ হয়ে যাবে যে। আজ ক-রাত ঘুমােওনি সে খেয়াল আছে ?
মাহমুদ মুখের ওপর থেকে হাতখানা সরিয়ে দিলাে ওর, কী বললে, লিলি ! তুমি কাঁদতে তাই না ? না, কাঁদবাে কেন, হাসতাম। কপট রাগে মুখ কালাে করলাে লিলি। তারপর উঠে দাঁড়িয়ে পাকঘরের দিকে চলে গেলাে সে। মাহমুদ নাম ধরে বারকয়েক ডাকলাে, কিন্তু কোনাে সাড়া পেলাে না। পাকঘর থেকে থালা-বাসন নাড়ার শব্দ শােনা গেলাে। বােধ হয় চুলােয় আঁচ দিতে গেছে লিলি। চোখজোড়া বন্ধ করে ঘুমােতে চেষ্টা করলাে সে। ঘুম এলাে না। বারবার সেই ভয়াবহ ছবিটা ভেসে উঠতে লাগলাে ওর স্মৃতির পর্দায়। যেন সবকিছু দেখতে পাচ্ছে সে। সবার গলার স্বর শুনতে পাচ্ছে। মা ডাকছেন তাকে—মাহমুদ বাবা, বেলা হয়ে গেলাে। বাজারটা করে আন তাড়াতাড়ি।
চমকে উঠে চোখ মেলে তাকালাে সে। সমস্ত শরীর শিরশির করে কাঁপছে তার। বুকটা দুরুদুরু করছে। ভয় পেয়েছে মাহমুদ। তবু আশেপাশে একবার তাকালাে সে। মাকে যদি দেখা যায়। কিন্তু কেউ তার নজরে এলাে না। এলাে একটা আরশুলা, বইয়ের আলমারিটার ওপর নিশ্চিন্তে হেঁটে বেড়াচ্ছে সেটা। তার দিকে একদৃষ্টে চেয়ে রইল মাহমুদ।
একটু পরে পাকঘর থেকে একগ্লাস গরম দুধ হাতে নিয়ে এ ঘরে এলাে লিলি। ওকে দেখতে পেয়ে কিছুটা আশ্বস্ত হলাে মাহমুদ। একটুকাল নীরব থেকে বললাে, আমি মরলাম না কেন, বলতে পারাে লিলি ? সে কোনাে জবাব দিলাে না। বিছানার পাশে গােল টিপয়টার ওপর গ্লাসটা নামিয়ে রাখল।
মাহমুদ আবার জিজ্ঞাসা করলাে, কই আমার কথার জবাব দিলে না তাে ? লিলি বললাে, দুধটা খেয়ে নাও, ঠাণ্ডা হয়ে যাবে। আগে আমার প্রশ্নের উত্তর দাও।

‘শেষ বিকেলের মেয়ে' বইয়ের কিছু কথাঃ আকাশের রঙ বুঝি বারবার বদলায়। কখনো নীল। কখনো হলুদ। কখনো আবার টকটকে লাল। মাঝে মাঝে যখন সাদাকালো মেঘগুলো ইতিউতি ছড়িয়ে থাকে আর সোনালি সূর্যের আভা ঈষৎ বাঁকা হয়ে সহস্র মেঘের গায়ে লুটিয়ে পড়ে, তখন মনে হয়, এর রঙ একটি নয়, অনেক।
এখন আকাশে কোনো রঙ নেই।
আছে বৃষ্টি।
একটানা বর্ষণ।
সেই সকাল থেকে শুরু হয়েছে তবু থামবার কোনো লক্ষণ নেই। রাস্তায় একহাঁটু পানি জমে গেছে। অতি সাবধানে হাঁটতে গিয়েও ডুবন্ত পাথরনুড়ির সঙ্গে বারকয়েক ধাক্কা খেয়েছে কাসেদ।
আরেকটু হলে একটা সরু নর্দমায় পিছলে পড়তো সে। গায়ের কাপড়টা ভিজে চুপসে গেছে। মাথার চুলগুলো বেয়ে ফোঁটাফোঁটা পানি ঝরছে। শীতে কাঁপতে কাঁপতে যখন বাসায় এসে পৌছলো কাসেদ তখন জোরে বাতাস বইতে শুরু করেছে। বোধ হয় ঝড় উঠবে আজ।
প্রচণ্ড ঝড়।
ভেজানো দরজাটা ঠেলে ভেতরে ঢুকতে কাসেদ দেখলো, ছোট্ট একখানা সিঁড়ির ওপরে বসে চুলোয় আঁচ দিচ্ছে নাহার, মা তসবিহ্ হাতে পাশে দাঁড়িয়ে কী নিয়ে যেন আলাপ করছেন ওর সঙ্গে।
ভেতরে আসতে অনুযোগভরা কণ্ঠে মা বললেন, দ্যাখো, ভিজে কী অবস্থা হয়েছে দ্যাখো।কী দরকার ছিলো এই বৃষ্টিতে বেরুবার ?
কাসেদ কোনো উত্তর দেবার আগেই মা আবার বললেন, ঠাণ্ডা লেগে তুমি একদিন মারা যাবে। এই বলে দিলাম দেখো, তুমি একদিন বৃষ্টিতে ভিজেই মারা যাবে।
কেন মিছেমিছি চিন্তা করছো মা। ভেজাটা আমার গা-সওয়া হয়ে গেছে। দেখো কিচ্ছু হবে না।
না হবে না। যেদিন অসুখ করবে সেদিন টের পাবে। সহসা কী মনে পড়তে খানিকক্ষণ চুপ থেকে মা শুধোলেন, ছাতাটা করেছো কি শুনি?
তাইতো মা, ছাতাটা। কাসেদ ইতস্তত গলায় জবাব দিলো, ওটা সেদিন অফিস থেকে এক ভদ্রলোক নিয়ে গেছেন। তার কাছ থেকে আর আনা হয়নি।
যা ভেবেছিলাম, নাহারের দিকে একনজর তাকিয়ে নিয়ে মা বিরক্তির সঙ্গে বললেন, তোর দিন যাবে কেমন করে আমায় বলতো? আজ এটা, কাল সেটা তুই শুধু মানুষকে বিলোতে থাকবি। রাজত্বি থাকতো নাহয় বুঝতাম। টানাটানির সংসার। নিজের ঘরে এসে ভেজা কাপড়গুলো দড়ির ওপর ঝুলিয়ে রাখলো কাসেদ। আলনা থেকে একটা গেঞ্জি টেনে নিয়ে পরলো। তারপর উনুনের পাশে এসে বসে বললো, বিলোচ্ছি কে বললো মা, ছাতাটা ভদ্রলোক কিছুক্ষণের জন্য চাইলেন তাই দিলাম। ওটা তো চিরকালের জন্যে দিইনি, কালই আবার.......

“আরেক ফাল্গুন”বইটির প্রথম দিকের কিছু কথাঃ
রাত দুপুরে সবাই যখন ঘুমে অচেতন তখন বৃটিশ-মেরিনের সেপাহীরা এসে ছাউনি ফেলেছিলাে এখানে। শহরের এ-অংশটায় তখন বসতি ছিলাে না। ছিলাে, সার-সার ঊর্ধ্বমুখী গাছের ঘন অরণ্য। দিনের বেলা কাঠুরের দল এসে কাঠ কাটতাে আর রাতে হিংস্র পশুরা চরে বেড়াতাে। শহরে তখন গভীর উত্তেজনা। লালবাগে সেপাহীরা যে-কোনাে মুহূর্তে বিদ্রোহ করবে। যে ক’টি ইংরেজ-পরিবার ছিলাে তারা সভয়ে আশ্রয় নিলাে বুড়িগঙ্গার ওপর গ্রিনবােটে।
খবর পেয়ে যথাসময়ে বৃটিশ-মেরিনের সেনারা এসে পৌঁছেছিলাে আর শহরের এঅংশটা দখল করে তাঁবু ফেলেছিলাে এখানে। সে থেকে এর নাম হয়েছিল, আন্ডারগােরা ময়দান। লােকে বলতাে আন্ডারগােরার ময়দান। শেষরাতে, লালবাগ নিরস্ত্র সেপাহীদের ওপর অতর্কিতে আক্রমণ করেছিলাে তারা। মানুষের রক্তে লালবাগের মাটি লাল হয়ে উঠে। কিছু সেপাহী মার্চ করে পালিয়ে যায় ময়মনসিংহের দিকে। যারা ধরা পড়ে, তাদের ফাঁসি দেয়া হয় আন্ডাগােরার ময়দানে। মৃতদেহগুলােকে ঝুলিয়ে রাখা হয় গাছের ডালে ডালে। লােকে দেখুক। দেশদ্রোহীর শাস্তি কত নির্মম হতে পারে, স্বচক্ষে দেখুক নেটিভরা।
এসব ঘটেছিলাে একশাে বছর আগে। আঠারােশো সাতান্ন সালে। আন্ডারগােরার ময়দান এখনাে আছে। শুধু নাম পালটেছে তার। লােকে বলে, ভিক্টোরিয়া পার্ক। সে অরণ্য আজ নেই। মাঝে, একটা প্রচণ্ড ঝড় হয়েছিলাে। সে ঝড়ে কী আশ্চর্য, গাছের ডালগুলাে ফেটে চৌচির হয়ে গেলাে, আর গুঁড়িসুদ্ধ গাছগুলাে লুটিয়ে পড়লাে মাটিতে। লােকে বলতাে, গাছেরও প্রাণ আছে। পাপ সইবে কেন ?
তারপর থেকে আবাদ শুরু হলাে এখানে। ঘর উঠলাে। বাড়ি উঠলাে। রাস্তাঘাট তৈরি হলাে। মহারানির নামে গড়া হলাে একটা পার্ক।
আগে জনসভা হতাে এখানে। এখন হয় না। শুধু বিকেলে ছেলেবুড়ােরা এসে ভিড় জমায়। ছেলেরা দৌড়ঝাঁপ দেয়। বুড়ােরা শুয়ে-বসে বিশ্রাম নেয়, চিনেবাদামের খােসা ছড়ায়। | এ হলাে গ্রীষ্মে অথবা বসন্তে। শীতের মরশুমে লােক খুব কম আসে, সন্ধ্যার পরে কেউ থাকে না।
এবারে শীত পড়েছিলাে একটু বিদঘুটে ধরনের। দিনে ভয়ানক গরম। রাতে কনকনে শীত। সকালে কুয়াশায় ঢাকা পড়েছিলাে পুরাে আকাশটা। আকাশের অনেক নিচু দিয়ে মন্থরগতিতে ভেসে চলেছিলাে একটুকরাে মেঘ। উত্তর থেকে দক্ষিণে। রঙ তার অনেকটা জমাট কুয়াশার মতাে দেখতে।
ভিক্টোরিয়া পার্কের পাশ দিয়ে ঠিক সেই মেঘের মতাে একটি ছেলেকে হেঁটে যেতে দেখা গেলাে নবাবপুরের দিকে। দক্ষিণ থেকে উত্তরে। পরনে তার একটা সদ্য-ধােয়ানাে সাদা সার্ট। সাদা প্যান্ট। পা জোড়া খালি। জুতাে নেই।

“কয়েকটি মৃত্যু”বইটির প্রথম দিকের কিছু কথাঃ
গলিটা অনেকদূর সরলরেখার মতাে এসে হঠাৎ যেখানে মােড় নিয়েছে, ঠিক সেখানে আহমদ আলী শেখের বসতবাড়ি।
বাড়িটা এককালে কোনাে এক বিত্তবান হিন্দুর সম্পত্তি ছিলাে। দেশ ভাগ হয়ে যাওয়ার পর তাঁদের চব্বিশ পরগণার ভিটেবাড়ি, জমিজমা, পুকুর সবকিছুর বিনিময়ে এ দালানটার মালিকানা পেয়েছেন। মূল্যায়নের দিক থেকে হয়তাে এতে তার বেশকিছু লােকসান হয়েছে, তবু অজানা দেশে এসে মাথাগোঁজার একটা ঠাই পাওয়া গেলাে সে-কথা ভেবে আল্লাহর দরগায় হাজার শােকর জানিয়েছেন আহমদ আলী শেখ।
সেটা ছিলাে উনিশশাে সাতচল্লিশের কথা। এটা উনিশশাে আটষট্টি। মাঝখানে একুশটা বছর পেরিয়ে গেছে। সেদিনের প্রৌঢ় আহমদ আলী শেখ এখন বৃদ্ধ। বয়স তার ষাটের কোঠায়। বড় ছেলে সাঁইত্রিশে পড়লাে। মেজো’র চৌত্রিশ চলছে। সেজো আটাশ। ছােট ছেলের বয়স একুশ হলাে।
বড় তিন ছেলের ভালাে ঘর দেখে বিয়ে দিয়েছেন তিনি। বউরা সব পরস্পর মিলেমিশে থাকে। একে অন্যের সঙ্গে ঝগড়া করে না, বিবাদ করে না। তাই দেখে আর অনুভব করে কর্তা-গিন্নির আনন্দের সীমা থাকে না। মনে মনে তারা আল্লাহকে ডাকেন। আর বলেন তােমার দয়ার শেষ নেই।
আহমদ আলী শেখের নাতি-নাতনীর সংখ্যাও এখন অনেক। বড়র ঘরে পাঁচজন। মেজোর দুই ছেলেমেয়ে। সেজো পরে বিয়ে করলেও তার ঘরে আটমাসের খুকিকে নিয়ে এবার তিনজন হলাে।
মাঝে মাঝে ছেলে, ছেলের বউ আর নাতি-নাতনীদের সবাইকে একঘরে ডেকে এনে বসান আহমদ আলী শেখ। তারপর, চেয়ে-চেয়ে তাদের দেখেন। একজন চাষি যেমন করে তার ফসলভরা ক্ষেতের দিকে চেয়ে থাকেন তেমনি সবার দিকে তাকিয়ে দেখেনে আহমদ আলী শেখ, আর মনে মনে আল্লাহর কাছে মােনাজাত করেন। ইয়া আল্লাহ, এদের তুমি ঈমান-আমানের সঙ্গে দীর্ঘদিন বাঁচিয়ে রেখাে।
এখন রাত। আহমদ আলী শেখ বিছানায় আধশােয়া অবস্থায় রােজকার অভ্যেসমতাে খবরের কাগজ পড়েন।
রাজনৈতিক খবরাখবরে তার কোনাে উৎসাহ নেই। দল গড়ছে। দল ভাঙছে। দফার পর দফা সৃষ্টি করছে। আর বক্তৃতা দিচ্ছে। ভিয়েতনামে ত্রিশজন মরলাে। রােজ মরছে। তবু শেষ হয় না। আইয়ুব খানের ভাষণ। আর কাশ্মির। কাশ্মির। কাশির পড়তে পড়তে মুখ ব্যথা করে উঠে।

“হাজার বছর ধরে” বইটির প্রথম দিকের কিছু কথাঃ মস্ত বড় অজগরের মতাে সড়কটা এঁকেবেঁকে চলে গেছে বিস্তীর্ণ ধানক্ষেতের মাঝখান দিয়ে। মােগলাই সড়ক।
লােকে বলে, মােগল বাদশাহ আওরঙ্গজেবের হাতে ধরা পড়বার ভয়ে শাহ সুজা যখন আরাকান পালিয়ে যাচ্ছিলাে তখন যাবার পথে কয়েক হাজার মজুর খাটিয়ে তৈরি করে গিয়েছিলাে এই সড়ক।
দু-পাশে তার অসংখ্য বটগাছ। অসংখ্য শাখা-প্রশাখা বিস্তার করে সগর্বে দাঁড়িয়ে রয়েছে সেই দীর্ঘকাল ধরে। ওরা এই সড়কের চিরন্তন প্রহরী। কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রাম। চট্টগ্রাম থেকে কুমিল্লা।
মাঝে মাঝে ধানক্ষেত সরে গেছে দূরে। দু-ধারে শুধু অফুরন্ত জলাভূমি। অথৈ পানি। শেওলা আর বাদাবন ফাকে ফাকে মাথা দুলিয়ে নাচে অগুনতি শাপলা ফুল।
ভাের হতে আশেপাশের গায়ের ছেলে-বুড়ােরা ছুটে আসে এখানে। একবুক পানিতে নেমে শাপলা তােলে ওরা। হৈ-হুল্লোড় আর মারামারি করে কুৎসিত গাল দেয় একে অন্যকে। বাজারে দর আছে শাপলার। এক আঁটি চার পয়সা করে।
কিন্তু এমনও অনেকে এখানে শাপলা তুলতে আসে, বাজারে বিক্রি করে পয়সা রােজগার করা যাদের ইচ্ছে নয়। মন্তু আর টুনি ওদেরই দলে।
ওরা আসে ধল-পহরের আগে, যখন পুব আকাশে শুকতারা ওঠে। তার ঈষৎ আলােয় পথ চিনে নিয়ে চুপিচুপি আসে ওরা। রাতের শিশিরে ভেজা ঘাসের বিছানা মাড়িয়ে ওরা আসে ধীরে ধীরে। টুনি ডাঙায় দাঁড়িয়ে থাকে। মন্তু নেমে যায় পানিতে। তারপর, অনেকগুলাে শাপলা তুলে নিয়ে, অন্য সবাই এসে পড়ার অনেক আগে সেখান থেকে সরে পড়ে ওরা।
পরীর দীঘির পারে দুজনে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেয়। শাপলার গায়ে লেগে থাকা আঁশগুলাে বেছে পরিষ্কার করে।
মন্তু বলে, বুড়া যদি জানে তােমারে আমারে মাইরা ফালাইবাে। টুনি বলে, ইস, বুড়ার নাক কাইটা দিমু না। নাক কাইটলে বুড়া যদি মইরা যায়।
মইরলে তাে বাঁচি। বলে ফিক করে হেসে দেয় টুনি। বলে, পাখির মতাে উইড়া আমি বাপের বাড়ি চইলা যামু। বলে আবার হাসে সে, সে হাসি আশ্চর্য এক সুর তুলে পরীর দীঘির চার পাড়ে প্রতিধ্বনিত হয়।
এ দীঘি এককালে এখানে ছিলাে না। আশেপাশের গায়ের ছেলে-বুড়ােদের প্রশ্ন করলে তারা মুখে-মুখে বলে দেয় এ দীঘির ইতিহাস। কেউ চোখে দেখেনি, সবাই শুনেছে। কেউ শুনেছে তার বাবার কাছ থেকে।

“গল্প সমগ্র" বইটির ফ্ল্যাপের কথাঃ জহির রায়হান শুধু এদেশের শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র নির্মাতা। হিসেবেই নয়, আমাদের কথাসাহিত্যেরও তিনি একজন অগ্রগণ্য ব্যক্তিত্ব। আপাদমস্তক শিল্পী বলতে যা বােঝায় তিনি ছিলেন তাই। সর্বক্ষণ সৃষ্টির প্রেরণায় অস্থির এই মানুষটি চলচ্চিত্র ও সাহিত্য এই দুই অঙ্গনেই ছিলেন সমানভাবে সক্রিয়। আর দুই ক্ষেত্রেই তিনি তাঁর প্রতিভার পরিচয় দিয়েছেন। ছিলেন প্রবলভাবে দায়বদ্ধ একজন মানুষও। আমাদের ভাষা। আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত সংগ্রামী অভিযাত্রার প্রতিটি পর্যায়ে তিনি কেবল আলাে হাতে জাতিকে পথই দেখাননি, ইতিহাসের বাঁকগুলাে বাজয় হয়ে উঠেছে তার রচনায়। স্বাধীনতা যুদ্ধে বিজয়ের অব্যবহিত পর তাঁর বিয়ােগান্ত অন্তর্ধানের ঘটনাটি জাতিকে কেবল হতবাক ও বেদনায় মুহ্যমানই করেনি, যেমন আমাদের চলচ্চিত্রশিল্প তেমনি কথাসাহিত্যকেও তিনি অনেকখানি রিক্ত করে দিয়ে গেছেন। তারপরও মাত্র ৩৭ বছরের পরমায়ু নিয়ে চলচ্চিত্র ও সাহিত্য উভয় ক্ষেত্রে তিনি তার প্রতিভার যে স্বাক্ষর, সৃষ্টিশীলতার যে ফসল রেখে গেছেন, নিঃসন্দেহে তাই তাঁকে অমর করে রেখেছে। যদিও বাস্তব কারণেই চলচ্চিত্রকার পরিচয়ের আড়ালে কথাসাহিত্যিক হিসেবে তাঁর অবদান হয়তাে বা কিছুটা ঢাকাই পড়ে গেছে।
আমাদের বর্তমান প্রয়াসের লক্ষ্য হল দেশের, বিশেষ করে নবীন প্রজন্মের পাঠকদের কাছে জহির রায়হানের সাহিত্যিক অবদানের পূর্ণাঙ্গ পরিচয় তুলে ধরা। আর সেই লক্ষ্য থেকেই তাঁর গল্পসমগ্র, উপন্যাসসমগ্র, রচনাসমগ্র এবং আলাদা আলাদাভাবে সবগুলাে গ্রন্থ আমরা প্রকাশ করেছি। আশা করি পাঠক আমাদের মহান এক কথাশিল্পীর প্রতিভার সঙ্গে সম্যক পরিচিত হবার সুযাগ পাবেন।
সূচিপত্র সােনার হরিণ/৯
* সময়ের প্রয়ােজনে/১২
* একটি জিজ্ঞাসা/২২
* হারানাে বলয়/২৪
* বাঁধ/২৯,
* সূর্যগ্রহণ/৩৫
* নয়া পত্তন/৪১
* মহামৃত্যু/৪৬
* ভাঙাচোরা/৫১
* অপরাধ/৫৭
* স্বীকৃতি/৬২
* অতি পরিচিত/৬৯
* ইচ্ছা অনিচ্ছা/৭৩
* জন্মান্তর/৭৯
* পােস্টার/৮৫।
* ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি/৯২
* কতকগুলাে কুকুরের আর্তনাদ/৯৫
* কয়েকটি সংলাপ/৯৬
* দেমাক/১০১
* ম্যাসাকার/১০৬
* একুশের গল্প/১১৯
Title জহির রায়হানের বইয়ের রকমারি কালেকশন (৮টি বই)
Author
Publisher
Number of Pages 436
Country বাংলাদেশ
Language বাংলা

Similar Category Best Selling Books

Sponsored Products Related To This Item

Reviews and Ratings

4.29

576 Ratings and 341 Reviews

sort icon

Product Q/A

Have a question regarding the product? Ask Us

Show more Question(s)
prize book-reading point

Recently Sold Products

Recently Viewed
cash

Cash on delivery

Pay cash at your doorstep

service

Delivery

All over Bangladesh

return

Happy return

7 days return facility

0 Item(s)

Subtotal:

Customers Also Bought

Are you sure to remove this from book shelf?

জহির রায়হানের বইয়ের রকমারি কালেকশন (৮টি বই)