"সাতদিনের আমেরিকা" বইটির প্রথম ফ্ল্যাপ-এর লেখাঃ পঞ্চান্ন বছর আগে সাহিত্যের আঙ্গিনায় হাসনাত আবদুল হাই-এর আবির্ভাব হয়েছিল ভ্রমণকাহিনী দিয়ে। ফরিদপুর জেলা স্কুলের প্রথম বার্ষিক সাহিত্য পত্রিকায় তিনি তাঁর ভ্রমণ অভিজ্ঞতা নিয়ে লিখেছিলেন ভারতের রাজধানী দিল্লীতে কয়েকদিন। এরপর তার সুদীর্ঘ সাহিত্য-চর্চায় ভ্রমণকাহিনী স্থান পেয়েছে গুরুত্বের সঙ্গে। কলেজে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় তিনি দেশীবিদেশী লেখকদের ভ্রমণকাহিনী পড়েছেন আগ্রহের সঙ্গে। অন্যের বই পড়তে পড়তেই তিনি গড়ে তুলেছেন ভ্রমণকাহিনী লেখার নিজস্ব শৈলী। কেবল ভ্রমণের অভিজ্ঞতা নয়, এই সম্পর্কে পঠন-পাঠন। তাঁর লেখায় এনেছে বৈচিত্র্য এবং সজীবতা। তিনি ভ্রমণকাহিনী লেখেন পাণ্ডিত্য দেখাবার জন্য নয়, পাঠককে তার সঙ্গে ভ্রমণের সঙ্গী করার উদ্দেশ্যে। ‘সাতদিনের আমেরিকা’ একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ভ্রমণকাহিনী। এর সঙ্গে আগে বা পরে তার লেখা অন্য কোন লেখার সম্পর্ক নেই। বইটিতে যেসব বিষয় নিয়ে আলােচনা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে সম্পূর্ণতার বৈশিষ্ট্য। পড়ার পর পাঠক আলােচিত কোনাে কোনাে বিষয় নিয়ে অতিরিক্ত পড়ার প্রতি আকৃষ্ট হতে পারেন। কিন্তু বিষয়গুলি সংক্ষেপে বলা হলেও তার মধ্যেই প্রায় মূল তথ্য পাওয়া যায়। বইটির সবচেয়ে উল্লেখযােগ্য দিক হলাে, প্রায় প্রতি অধ্যায়ে নতুন বিষয়ের অবতারণা। বিষয়ের এই বিভিন্নতার মধ্যে কাজ করে এক ঐক্য যার পেছনে রয়েছে ন্যারেটিভের কুশলতা। উত্তর আমেরিকায় বসবাসকারী প্রবাসী বাঙালিদের বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চা নিয়ে লেখা। এটিই প্রথম বই।
Hasnat Abdul Hye জন্ম ১৯৩৯ সালের সেপ্টেম্বরে, কলকাতায় । পৈত্রিক নিবাস ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা থানার সৈয়দাবাদ গ্রামে। স্কুল শিক্ষা কলকাতা, যশোর, ফরিদপুর শহরে। কলেজ শিক্ষা ঢাকায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়, লন্ডন স্কুল অব ইকনোমিকস এবং ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিষয়ে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর শিক্ষা লাভের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে শিক্ষকতা । ১৯৬৫ সালে সিভিল সার্ভিসে যোগদানের পর প্রাক্তন পাকিস্তান সরকার এবং পরবর্তীকালে বাংলাদেশ সরকারের অধীনে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন এবং সচিব পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন। হাসনাত আবদুল হাই ছাত্র জীবন থেকে সাহিত্যচর্চা শুরু করেন। ১৯৫৮ সালে ছোটগল্প রচনার মাধ্যমে। ছোটগল্প, উপন্যাস, ভ্রমণ-কাহিনী, শিল্প ও সাহিত্য সমালোচনা এবং নাটক এই সব শাখায় স্বচ্ছন্দে বিচরণ করেছেন চার দশকের অধিককাল ।বাংলা এবং ইংরেজিতে একটি কবিতার বই লিখেছেন জাপানে প্ৰবাস জীবনে। প্ৰকাশিত ছোটগল্প গ্রন্থের সংখ্যা পাঁচ, উপন্যাস পঁচিশ এবং ভ্ৰমণ-কাহিনী ছয় । সাহিত্যে অবদানের জন্য পেয়েছেন অলক্ত পুরস্কার, মোহাম্মদ আকরম খাঁ বাংলা একাডেমী পুরস্কার এবং সাহিত্যে অবদানের জন্য তিনি ১৯৯৬ সালে ‘একুশে পদক’ লাভ করেন। তাঁর লেখা উপন্যাস সুলতান ডাবলিন আন্তর্জাতিক সাহিত্য পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়।