ঈমান মুমিনের পাথেয় - ছেলেবেলার সাধারণ বাংলা স্কুলে বা অভিভাবকগনের কাছে বাসায় ধর্ম শিক্ষা গ্রহণ বলতে যা পড়েছি বলে মনে পরে সেটা মূলত কিছু সূরা মুখস্ত করা আর বড় জোর হরফে হরফে সাওয়াব লাভের উদ্দেশ্যের সাথে সালাত আদায় করার প্রয়োজনে কুরআন তেলাওয়াত শিক্ষা করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। যে তরুনের নিজের ইচ্ছা , বা তার অভিভাবকের ইচ্ছা - তরুনটি নিজে বা তার অভিভাবক তাকে বিজ্ঞান বা কমার্স বা অধ্যাপনাকে পেশা হিসেবে বেছে নিবে বা নেওয়াবে তাদের কাছে ধর্ম শিক্ষাটা শুধু আনুষ্ঠানিকতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। দ্বীন শিক্ষা গ্রহনের ক্ষেত্রে পারিপার্শ্বিক অবস্থাটাও এর থেকে এতটুকু বেশী সহায়ক ছিল না ।
বড় হয়ে ছেলেটা বৈজ্ঞানিক, চাটার্ড একাউন্ট্যান্ট বা ভাষাবিদ যাই হোক না কেন ধর্মজ্ঞানটা তার কাছে ধোঁয়াশার মতই থেকে গেছে আজীবন। পরিনত বয়সে সে ইসলামের পক্ষের খেলোয়াড় হতে না পেরে নিজেই প্রতিপক্ষকে বল তৈরী করে দিয়ে ইসলামের গোল পোস্টে গোল করতে ঈমান নামের বলটি অবলীলায় পাঠিয়ে দেয় ইয়াহুদী-নাসারা-মুশরিক-সন্দেহবাতিক-নাস্তিকদের পায়ে, ফলে ৮০ বছর বয়সে মোটামোটিভাবে সালাত-সিয়াম-যাকাত-হজ্জ্ব পালন করেও সে দোষারোপ করে (অযাচিত প্রশ্নবানে জর্জরিত করে , সন্দেহবাতিক হয় , ঈমানের ভিত্তি নড়বড় থাকে) চলে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলাকে আর সেখানে নবী মুহাম্মদ সাঃ , সাহাবী রাঃ-গন তো তার কাছে ধর্তব্যের কোন বিষয়ই নয় ! শেখার আওতা বা গন্ডি যত ছোট হোক সেটা যদি নিয়মতান্ত্রিকভাবে না এগোয় তবে ঈমানের ভেলা যে তিমিরে ছিলো সেই তিমিরেই রয়ে যায় মৃত্যু অবধি। তাই সর্বাগ্রে নেয়া দরকার ঈমান-আকীদা-মানহাজ বিষয়ক শিক্ষা যেগুলোর উৎস হ’ল আল-কুরআনের বিশুদ্ধ বাংলা তরজমা , অন্তত প্রয়োজনীয় আয়তসমূহের প্রসিদ্ধ তাফসীর সমূহ , নবী মুহাম্মদ (সাঃ) সহ অন্যান্য নবী-রাসূল (সাঃ)-গনের জীবনী , সাহবায়ে কেরাম আজমাঈন গনের জীবনচরিত , ইসলামের ইতিহাস , সহীহ্ হাদীস , ফিকাহ শাস্ত্র ইত্যাদি ।
ব্যাকরণ বা আরবী ভাষার চুলচেরা বিশ্লেষণে না গিয়ে সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত বা সাধারণ স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য ইসলামি আকীদার উপর লিখিত সহজবোধ্য একটি বই - "ইসলামিক দাওয়াহ পাবলিকেশন্স"-র প্রথম প্রকাশ মামুন বিন ইসমাঈল রচিত "ঈমান মুমিনের পাথেয়"। নিজে পড়ুন, সংগ্রহে রাখুন, প্রিয়জনকে উপহার দিন, ভবিষ্যতে ত্রুটিমুক্ত বা আরও উন্নত করতে সুপারিশমালা পেশ করুন, সর্বাত্মক সহযোগিতা করুন। আমাদের পরবর্তী দ্বীন প্রচার কার্যক্রমকে বেগবান করতে আমাদের সাথেই থাকুন।
বইটি কেন পড়বেন ? সাধারণ স্কুলে শিক্ষিত মানুষের জন্য বিশেষভাবে সহজ ও সাবলীল ভঙ্গিতে লেখা "ঈমান মুমিনের পাথেয়" বইটিতে যা থাকছে - ১) আক্বীদাহ্ কি ? কেন এর গুরুত্ব উপলব্ধি করা জরুরী এবং কিভাবে এই জ্ঞানে সমৃদ্ধ হওয়া যায় ? ২) তাওহীদ, ঈমান ও রিসালাতের প্রাথমিক শিক্ষা। ৩) তাকদীর ও পুনরুত্থান দিবসের প্রারম্ভিক জ্ঞান। ৪) শিরক, কুফর ও বিদআতের জ্ঞান। ৫) মুসলিমদের মধ্যে বিভিন্ন ফেরকার উৎস কি এবং কিভাবে ফেরকাবন্দী না হয়ে "আহালুস সুন্নাহ্ ওয়াল জামায়াহ্"-র অন্তর্ভুক্ত হওয়া যায়। ৬) দেশীয় বিভ্রান্ত ফেরকার বর্ণনা। ৭) সাম্প্রতিক কালে উদ্ভূত দেশীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনের কিছু ভ্রান্ত বা ইসলাম বিদ্বেষী মতবাদ। বস্তুবাদের যাতাকলে পড়ে বিশ্বাসকে আমরা হারাতে বসেছি । আল্লাহ্ তা’আলার প্রতি বিশ্বাসের দৃঢ়তাই যে আমাদের জীবনে চলার পথের পাথেয় - সেটা ভুলতে বসেছি । সাহাবায়ে কেরাম আজমাঈন রাসূল (সাঃ)-র আদর্শকে পুরোপুরি লালন করে বিশ্বজয় করেছেন , সেই আদর্শকে আমরা অবাস্তব ভাবতে শুরু করেছি । আর কতকাল আমরা বিশ্বাস হারাতে থাকবো ? আর কতকাল বিশ্বজয়ের ভাবনাকে অবাস্তব বলে উড়িয়ে দিব ? আমাদেরকে এখনই বিশ্বাসে দৃঢ়তা সৃষ্টি করে সর্বোত্তম পাথেয় অর্জন করে ঈমানি শক্তিতে বলিয়ান হয়ে বিশ্বজয়ের ভাবনার পালে হাওয়া জোগাতে হবে । এই গ্রন্থ সেই পথের দিশা দিতে ও সেই পথে পরিচালিত করতে সাহায্য করবে , ইনশা আল্লাহ্ ।
মামুন বিন ইসমাঈল , জন্ম – মিরপুর , ঢাকা – ১২১৬ , বাংলাদেশে । পিতা – মুহাম্মদ ইসমাঈল বেপারী । মাতা – হোসনে আরা (রহিঃ) । মিরপুর-১২-তে অবস্থিত দারুল কোরআন মাদ্রাসা থেকে কোরআন হিফজ শেষ করে ঢাকার ঐতিহ্যবাহী জামেয়া আরাবিয়া ইমদাদুল উলূম ফরিদাবাদ মাদ্রাসা থেকে সাফল্যের সাথে সম্পন্ন করেন দাওরায়ে হাদীস , অতঃপর সেখানেই কৃতিত্বের সাথে ইসলামী উচ্চতর আইন ও গবেষণা বিভাগের অধ্যয়ন সমাপ্ত করেন । র্কমজীবন শুরু হয় তুরস্কের প্রখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ ও লেখক বদিউজ্জমান সাঈদ নূরসী (রহিঃ)-র অনবদ্য সৃষ্টি “রিসালায়ে নূর” সমগ্রের অনুবাদ দিয়ে , বিশাল এই কাজে এখনও জড়িত আছেন সিনিয়র অনুবাদক হিসেবে । এছাড়াও করছেন বিভিন্ন গ্রন্থের অনুবাদ , গ্রন্থনা ও সম্পাদনার কাজ । উপরন্তু শিক্ষাদান করছেন মিরপুরে অবস্থিত মারকাযুল উলূমিল ইসলামিয়াহ-র তাখাসসুস ফিল ফিকহি ওয়াল ইফতা-য় ইসলামী আইন বিষয়ে । এযাবৎকৃত অনুবাদর্কম – ইশারাতুল ই’জায , মু’জিযায়ে মুহাম্মাদিয়া , আল্লাহ্ তা’আলা-র অভিনব নির্দশন , স্রষ্টার প্রতি সৃষ্টির মোনাজাত , হৃদয়ে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) , এজীবন কেন কাঁদায় ?, প্রকৃতি : স্রষ্টা নাকি সৃষ্টি ? , সৃষ্টিজগতে আসমাউল হুসনার প্রতিফলন । আরও কাজ এগিয়ে চলছে ।