ইন্টারভিউয়ার: আপনি তো আপনার ফিকশনে “অফিশিয়াল” বা পলিটিকাল ভাষার উপর ভালোই নজর দেন- যেমন দা গড অফ স্মল থিংস এ পুলিস লিস্টটা, মিনিস্ট্রিতে যেমনে আঞ্জুম হিজড়া শব্দটা ব্যবহার করে আবার সাঈদা এমটিএফ (মেইল টু ফিমেইল), এফটিএম (ফিমেইল টু মেইল), আর সিসজেন্ডারের মত শব্দ বুইঝা নেয়, “আনটাচেবলস” বা “শিডিউল্ড কাস্ট” (সনাতন ধর্মের যে মেইন চারটা কাস্ট, ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শূদ্র- এই চার কাস্টের বাইরের কাস্টরে শিডিউল্ড কাস্ট বলে) এর মত লেবেলগুলা। রায়: এইটা নিয়ে যতই ভাবি, রিয়েলাইজ করি যে এইটা আমার কাছে কত ইম্পর্ট্যান্ট – পাবলিক ভাষা নিয়া কনশাস থাকা, সেই সাথে নিজের একটা প্রাইভেট ভাষা খুঁজতে থাকা। যখন ইন্ডিয়াতে নাইন্টিজের দিকে নিউক্লিয়ার টেস্ট হইছিল, তখন পাবলিক ভাষা পুরা বদলে গেছিল। ইন্ডিয়া নিজেরে নিউক্লিয়ার পাওয়ার ঘোষণা করার পরে কথাবার্তায় একটা নতুন ধরণের এগ্রেসিভ হিন্দু ন্যাশনালিজম আসছিল, মানুষজনরে “রিয়েল” বা “সহী” ইন্ডিয়ান বলা, রিলিজিয়াস মাইনরিটি – বিশেষ কইরা মুসমানদের আলাদা কইরা দেখা জায়েজ হয়া গেল। ওপেনলি ইসলামোফোবিক হওয়া নিয়ম হয়া গেল। ভাষার এই শিফটটা দেইখাই আমি “দা এন্ড অফ ইমাজিনেশন” লিখছি – ইন্ডিয়ার নিউক্লিয়ার টেস্টের উপর আমার এসে। তারপর আমি যখন নর্মদা ভ্যালি গিয়া অ্যান্টি ড্যাম মুভেন্ট নিয়া লিখলাম, ওইটার ভাষা অন্যরকম ছিল। মানুষ নিজেদের প্যাপ (pap) ডাকত- প্রোজেক্ট অ্যাফেক্টেড পারসনস। আপনি কি একজন প্যাপ? না, লিস্টে আমার নাম নাই। এখন ন্যাশনাল রেজিস্টার অফ সিটিজেন্সের জন্য আসামে নতুন ভোকাবুলারি হইছে। দূরের দ্বীপগুলাতে জেলেরা ডাউটফুল ভোটারস, ডিক্লেয়ারড ফরেনারস, জেনুইন সিটিজেনের মত ইংলিশ শব্দ ব্যবহার করে, আর লিগেসি ডকুমেন্ট গুছানো নিয়া চিন্তা করে। কাশ্মিরে মিলিটারি দখলের কারণে আলাদা একটা ভোকাবুলারি হইছে। মিনিস্ট্রি অফ আটমোস্ট হ্যাপিনেস-এ তিলোর কাশ্মিরি-ইংলিশ ডিকশনারিতে দেখানো হইছে। তারপর কাস্টের ভাষা আছে – বাজে ট্র্যাডিশনাল ব্যবহার, জঘন্য অফিশিয়াল টার্মগুলা। যেভাবে বেশ কয়েকটা লোকাল ভাষায় শূদ্র আর দলিত মহিলাদের এবং মানুষকে ডিজরেস্পেক্টফুল ভাবে রেফার করা হয়, এই ডিজরেস্পেক্টটা ভাষাটার মধ্যেই ঢুইকা বইসা আছে।
বুকারজয়ী ঔপন্যাসিক, রাজনৈতিক লেখক, মানবাধিকারকর্মী ও মাঠপর্যায়ের অ্যাকটিভিস্ট অরুন্ধতী রায়ের আলাপচারিতার সংকলন দানবের রূপরেখা। আলাপচারিতার সময়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ-২০০১-২০০৮। এর মধ্যে নির্ণীত হয়েছে বিশ্বব্যবস্থার নতুন রূপ, রাষ্ট্র থেকে শুরু করে ব্যক্তিমানুষ প্রত্যেকেই প্রভাবিত হয়েছে নতুন ব্যবস্থায়। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ারে হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ ঘোষণা, আফগানিস্তান দখল, ইরাক যুদ্ধের সূচনার পাশাপাশি করপোরেট বিশ্বায়নের বিস্তার ঘটেছে। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক দেশ বলে খ্যাত ভারতে হিন্দুত্ববাদের উত্থান, কৃষি, খনিজ ও প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর মানুষের অধিকার হারানো, অহিংস আন্দোলনের কার্যকারিতা হারিয়ে সশস্ত্র প্রতিরোধের বিস্তারও এ সময়ের ঘটনা। এই প্রসঙ্গগুলো নিয়েই কথা বলেছেন অরুন্ধতী রায়। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে বর্ণবাদ ও ভারতে হিন্দু ফ্যাসিজমের পুনরুত্থান, পৃথিবীর অপরাপর দেশজুড়ে দুঃশাসন ও কর্র্তৃত্বপরায়ণতা, পরিবেশ বিপর্যয়, সাধারণ মানুষের অধিকার হ্রাস, নারীর ওপর সহিংসতা বৃদ্ধি-বর্তমান বিশ্বের এই প্রবণতাগুলোও উঠে এসেছে এই আলাপচারিতায়। তাঁর সাহস, বক্তব্যের তীক্ষ্ণতা ও তীব্রতা আপনাকে ক্ষুব্ধ, উদ্বুদ্ধ আর আগ্রহী করে তুলবে।