ফ্ল্যাপে লিখা কথা ফরহাদ মজহার বিশ্বব্যবস্থার আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক রাজনীতির প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক জনগোষ্ঠী হিশেবে আত্মবিকাশের লড়াইয়ে বাংলাদেশের বিপদ-আপদ সম্পর্কে হুশিয়ার হওয়ার তাগিদে লিখছেন দীর্ঘদিন। পরাশক্তির আগ্রাসন ও দখলদারি প্রতিরোধে গণশক্তি বিকাশের উপায় ও তৎপরতা সন্ধানে তিনি নিরলস। পত্রপত্রিকায় তার লেখালেখি গণনজরদারি তীক্ষ্ম ও তীব্র করার প্রচেষ্টায় নিয়োজিত মতাদর্শিক লড়ায়েরই অংশ। সংখ্যাগরিষ্ঠের স্বার্থের জায়গায় দাঁড়িয়ে কৃষক শ্রমিক জনতার বৈপ্লবিক মৈত্রী সম্পন্ন করে বিদ্যমান ব্যবস্থার রূপান্তর সাধনেই তাঁর অভিষ্ঠ।
দুনিয়ার হালহকিকতে ইতোমধ্যে বিস্তর পরিবর্তন ঘটে গিয়েছে। সাম্রাজ্যবাদ ইসলামকে শত্রু গণ্য করে সন্ত্রাসবাদের নামে অনন্ত যুদ্ধ শুরু করেছে। ফিলিস্তিন ইরাক আফগানিস্তানের মতো আমরাও এই যুদ্ধের টার্গেট। রাষ্ট্রের আভ্যন্তরীণ পরিগঠনের সংকট ও শত্রু-মিত্র নির্ধারণের দুর্বলতায় সাম্রাজ্যবাদের নখর-খাবা ক্রমশ বিস্তৃত হচ্ছে আমাদের চোখের সামনে। একদিকে বাংলাদেশের জ্বালানি সম্পদ ও প্রাণবৈচিত্রের উপর শকুনে নজর অন্যদিকে তথাকথিত আধুনিক কিম্বা প্রগতিশীল নামধারী একটা শ্রেণীর যেখানে সেখানে মৌলবাদ আর জঙ্গিবাদের ছায়া দেখে বেড়ানো-চৌদ্দ কোটি মানুষকে অরক্ষিত ও বিপদাপন্ন করে তুলেছে। বাংলাদেশকে একটি ব্যর্থ ও অকার্যকর রাষ্ট্র প্রমাণ করার মধ্যদিয়ে দেশের মানুষগুলোকে ইরাক আফগানিস্তানের মতো ভয়াবহ পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দেওয়ার সাম্রাজ্যবাদী প্রকল্পে সজ্ঞানে বা অজ্ঞানে শরিক হচ্ছে।
সাম্রাজ্যবাদের সঙ্গে প্রত্যক্ষ প্রতিরোধ যুদ্ধেরত ইরাক আফগানিস্তান ও ফিলিস্তিনের মুক্তিকামি মানুষের মজহার ইতিহাসের রঞ্জিতি দেয়াল লিখন থেকে পাঠ করেন। সমসাময়িক কালে বাংলাদেশের ঘটনাঘটন বোঝার চেষ্টা করেন, বিশ্বব্যাপী সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধনীতির গতিপ্রকৃতি, বিভাজন ও স্নায়ু যুদ্ধোত্তর নতুন মেরুকরণের চরিত্র এবং আঞ্চলিক রাজনীতিতে ভারতীয় পররাষ্ট্রনীতির আগ্রাসী ভূমিকা বিচার করে।
ফরহাদ মজহার-এর লক্ষ্য গণঐক্য সৃষ্টির মাধ্যমে বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিকাশের পথ সুগম করা আর গণপ্রতিরক্ষা নীতির আলোকে জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তার সুরক্ষা। লেখকের দৃঢ় বিশ্বাস এটাই বর্তমানে সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমাদের জয়ী হবার ক্ষেত্রে কার্যকর রণকৌশল।
সূচি * সাম্রাজ্যবাদ * ইম্পেরিয়ালিজম * গ্লোবালাইজেশন : কয়েকটি অর্থনীতিক পরিসংখ্যান * পুঁজিতান্ত্রিক গোলোকায়ন ও জীবন-জীবিকার সংগ্রাম * গান্ধী, ফিলিস্তিন ও ইসলাম * ইন্তিফাদা জিন্দাবাদ : ফিলিস্তিনি শিশু-কিশোরদের ঢিল আর গুলতি লড়াই * ফিলিস্তিন ও জায়নবাদ বিরোধী লড়াই * মৌলবাদ আতঙ্কের স্বরূপ * উপসাগরীয় যুদ্ধ ও ক্লিনটনের যুদ্ধবাজ অভিষেকের মর্ম * ইরাক, সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধ ও আমরা * ইরাকি জনগণের জয় ও ইতিহাসের অভূতপূর্ণ জাগরণ * তেলের যুদ্ধ বনাম মিলিটারি ইন্ডা্স্ট্রিয়াল কমপ্লেক্স * ইরাকে গেরিলা যুদ্ধে শক্তি বৃদ্ধি * গণমাধ্যম ও গণযুদ্ধ : ইরাক এবং আমরা * ধরা পড়েছে নকল সাদ্দাম * নইলে, ‘আজ শরতের আমন্ত্রণে .. ‘ ইত্যাদি * ‘টিফা’ ও দ্বিপাক্ষিক চুক্তি * সোফা চুক্তি ও পোর্ট কনটেইনার বিরোধিতা : বাম রাজনীতির ইতিবাচক ইস্যু * টিফা ও বাংলাদেশে মার্কিন হস্তক্ষেপ * যুদ্ধাপরাধী কলিন পাওয়েলের ঢাকা সফর, প্রতিবাদ ও আমাদের দাসচুক্তি * ভারতের জ্বালানি চাহিদা ও পররাষ্ট্রনীতি * অকার্যকর রাষ্ট্র ও ভারতের আগ্রাসী নীতির বাস্তবায়ন * ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও ইঙ্গ-মার্কিন হামলা * অকার্যকর ‘রাষ্ট্র’ নিয়ে এখন আমরা কী করি * ‘অকার্যকর’ বা ‘ব্যর্থ রাষ্ট্র’ : হানাদার সাম্রাজ্যবাদী হস্তক্ষেপের অজুহাত * আহমিদিয়াদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস ও বোমাবাজির রাজনীতি * অকার্যকর ‘রাষ্ট্র’ ও উপমহাদেশেল রাজনীতি প্রসঙ্গে কয়েকটি কথা
জন্ম ১৯৪৭ সালে, নোয়াখালী। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা : ঔষধশাস্ত্র ও অর্থনীতি, প্রিয় স্মৃতি : মাইজদী কোর্ট, প্রিয় স্থান : বিভিন্ন এলাকায় গড়ে ওঠা নয়াকৃষির বিদ্যগাঘর। তিনি একজন বাংলাদেশি কবি, কলামিস্ট, লেখক, ঔষধশাস্ত্রবিদ, রাজনৈতিক বিশ্লেষক, বুদ্ধিজীবী, সামাজিক ও মানবাধিকার কর্মী এবং পরিবেশবাদী। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৭ সালে ওষুধশাস্ত্রে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন এবং পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রের দি নিউ স্কুল ফর সোশাল রিসার্চ থেকে অর্থশাস্ত্রে ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সামাজিক অর্থনীতিতেও গবেষণা করেছেন। চিন্তা নামক একটি পত্রিকার সম্পাদক মজহার উবিনীগ এনজিও গঠন করে নয়াকৃষি আন্দোলনও শুরু করেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থসমূহ হল: প্রস্তাব, মোকাবিলা, এবাদতনামা ও মার্কস পাঠের ভূমিকা।