মোগল সাম্রাজ্য ছিল উপমহাদেশের বিশাল অঞ্চল জুড়ে পরিব্যাপ্ত প্রাক আধুনিক যুগের একটি মুসলিম শাসিত এলাকা। একে মুঘল বা মোঘল বানানেও লেখা হয়ে থাকে। এই উপমহাদেশের দীর্ঘকাল মোগলদের শাসনকার্য পরিচালনার ফলে সংস্কৃতিতে, প্রাত্যহিক জীবনাচরণে, পোশাক-আশাক, ভাষা-বৈশিষ্ট্য, খাবার-দাবাড়, পূর্ত কাজকর্মে, বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে বাগান গড়া, মিনা বাজার ও স্থাপত্য নিদর্শনাদি নির্মাণসহ বিভিন্ন কার্যক্রমে ইতিবাচক পরিবর্তনের সূচনা হয়। এসব ঐতিহাসিক নিদর্শন ভারতবর্ষের অমূল্য সম্পদ। ভারতেই বেশি সংখ্যায় এগুলোর অবস্থান বা উপস্থিতি, পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানেও কিছু কিছু নিদর্শন আছে। মোগল সাম্রাজ্য ছিল প্রধানত ভারত উপমহাদেশের একটি সাম্রাজ্য। এর ফারসি নাম ‘গুলকারনিয়ান’ আর উর্দু নাম ‘মোঘলিয়া সালতানাত’। উপমহাদেশের অধিকাংশ অঞ্চলজুড়ে মোগল সাম্রাজ্য বিস্তৃত ছিল। এই সাম্রাজ্য মূলতঃ পারস্য ও মধ্য এশিয়ার ভাষা, শিল্প ও সংস্কৃতি দ্বারা প্রভাবিত ছিল বলে ঐতিহাসিকরা বলছেন। পানিপথের প্রথম যুদ্ধে ইব্রাহিম লোদির বিরুদ্ধে বাবরের জয়ের মাধ্যমে মোগল সাম্রাজ্যের সূচনা হয়। মোগল বাদশাহ বা সম্রাটরা ছিলেন মধ্য এশিয়ার টার্কো-মঙ্গোল বংশোদ্ভূত। তারা চাগতাই খান ও তৈমুরের মাধ্যমে চেঙ্গিস খানের বংশধর। এই বইয়ে আমরা মোগল আমল, তাদের বৈশিষ্ট্য ও বিশেষ করে মোগল অন্তপুরের বিবরণ ও বিশ্লেষণ তুলে ধরেছি। প্রসঙ্গক্রমে মোগল শাসনের ইতিহাস ও শাসকদের বিবরণও দেয়ার চেষ্টা করেছি, যাতে পাঠক এ বিষয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ ধারণা পেতে পারেন। কতটুকু সফল হয়েছি পাঠকরাই এর বিচার করবেন।