আনন্দমোহন রক্ষিত সত্তর দশকের একজন উল্লেখযোগ্য আলোচিত কবি। যদিও তিনি লেখালেখি শুরু করেন ষাট দশকের শেষের দিকে। তাঁর কবিতার মূল প্রতিপাদ্য বিষয় মুক্তিযুদ্ধ, দেশাত্মবোধ, প্রকৃতির প্রতি গভীর অনুরাগ ও আন্তর্জাতিক ঘটনাপ্রবাহ। তাঁর কবিতার সহজবোধ্যতা পাঠকপ্রিয়তা বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়েছে। মানুষের প্রতি ভালোবাসা ও মানধিক উপলব্ধিজাত অনুপ্রেরণার সাথে দুঃখবোধ ও বেদনাসঞ্জাত অভিজ্ঞতা তাঁর কবিতায় আশ্রয়লাভ করেছে। মুক্তিযুদ্ধ ও দেশাত্মবোধের চেতনা তাঁকে যেভাবে আলোড়িত করে আন্তর্জাতিক দুঃখজনক ঘটনাপ্রবাহও সমভাবে তাঁকে ব্যথিত করে, অনুতাপে দগ্ধ করে। তাই তিনি যেমন লেখেন ফিলিস্তিনি যুবক যোদ্ধার প্রতি ইসরায়েলি নৃশংসতার কথা, তেমনিভাবে দেশীয় রাজনৈতিক ও সাম্প্রদায়িক সংঘাতের বিরুদ্ধেও সমভাবে সোচ্চার হন। আনন্দ-উচ্ছ্বাস যেমন তাঁর কবিতায় দেখতে পাওয়া যায়, তেমনি সাম্প্রতিক অস্থিরতা-বিমর্ষতা তাঁর কাব্যভাবনায় বড়ো স্থান দখল করে রেখেছে। কবি শামসুর রাহমান ও সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় সম্পাদিত দুই বাংলার ভালবাসার কবিতা, কবি শ্যামল দাশ ও বিমল গুহ সম্পাদিত হাজার কবির হাজার কবিতা, লিটলম্যাগ প্রগতি (কলকাতা), টাঙ্গাইল থেকে মাহমুদ কামাল সম্পাদিত অরণী-সহ দুই বাংলার লিটলম্যাগ, স্থানীয় ও জাতীয় দৈনিকে নিয়মিত লিখে যাচ্ছেন তিনি। ডালো বিষ ঢালো অমৃত (১৯৯৭), তুমিও ফেরালে চোখ (২০০১), মানুষের দ্রোহ মানুষ (২০০৬), অনুরাগে ভেজা চোখ (২০০৯) নামে ইতোমধ্যে তাঁর চারটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়াও শোণিত গালিচা পাতা জনপদ (১৯৭৪) এবং নবান্ন (২০১২) তাঁর সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়। তিনি ১৯৭৭ সালে কর্ণফুলি সাহিত্য পুরস্কার, ২০০৭ সালে জগৎপুর আশ্রম চট্টগ্রাম থেকে শ্রদ্ধা ও স্মৃতি স্মারক এবং ২০০৯ সালে কবিয়াল ফণী বড়ুয়া স্মৃতিপদক, ২০১৩ সালে অবসর সাহিত্য সম্মাননা পদক, ২০১৯ সালে কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে 'শৃণ্বন্তু' কর্তৃক আয়োজিত আন্তর্জাতিক কবিতা সম্মেলনে সম্মাননা স্মারক লাভ করেন।