ব্যাঙাচি আর ক্যাঙাচি। ব্যাঙাচি না হয় বুঝলাম। ব্যাঙছানা। কিন্তু ক্যাঙাচিকে চিনলাম না। ক্যাঙাচি হলো কাছিমছানা। মানে কচ্ছপের ছানা। কচ্ছপের ছানা ক্যাঙাচি? হিঃ হিঃ হিঃ। ক্যাঙাচি নাম কেন হলো? পরে বলছি। ব্যাঙাচি বাস করে পানিতে। একটি হাজামলা পুকুরে। সারাবেলা সাঁতার কাটে। ইচ্ছেমতো ডোবে-ভাসে। তার আনন্দের শেষ নেই। জন্ম নিয়েছে বর্ষাকালে। ক্যাঙাচি জন্ম নিয়েছে মাটিতে। একটি অন্ধকার গর্তে। তার দুঃখের শেষ নেই। ডিম পাড়ার সময় মা-কাছিম গর্ত খোঁড়ে মাটিতে। সেই গর্তে ডিম পাড়ে। সেখানেই জন্ম হয় ক্যাঙাচির। দুই মাস পর। নিজেই দাঁত দিয়ে ডিমের খোলস কাটে। তারপর বেরিয়ে আসে। একদিন মা-কাছিম সেই গর্তের কাছে গেল। ক্যাঙাচিকে পিঠে নিল। হাঁটতে হাঁটতে পানিতে নামল। সেই হাজামলা পুকুরে। ডাঙার ক্যাঙাচি পানিতে থাকবে? থাকবেই তো। কাছিম যে উভচর প্রাণী। ডাঙায় বাস করতে পারে। আবার পানিতেও বাস করতে পারে। ক্যাঙাচিকে দেখে ব্যাঙাচির রাগ হলো। ভয়ও পেল। যদি তাকে খেয়ে ফেলে? সে একলাফে ডাঙায় উ ঠল। বলল, সে আর পানিতে নামবে না। ব্যাঙাচি ডাঙায় থাকবে কী করে? থাকতে পারবে না কেন? ব্যাঙও যে উভচর প্রাণী। পানিতে বাস করতে পারে। আবার ডাঙায়ও বাস করতে পারে। ব্যাঙ বনে-জঙ্গলে বাস করতে পারে। আবার গাছেও বাস করতে পারে। বাহ্! মজা তো! ওদের জীবনটাই মজার। কত স্বাধীন। ক্যাঙাচি পানিতে নেমে ভীষণ খুশি। কিন্তু একা সাঁতার কাটতে মজা লাগছে না। সে ব্যাঙাচিকে ডাকল। বন্ধু হতে চাইল। ব্যাঙাচি মুখ ভেঙচিয়ে বললÑ। কী বলল? বলল, তোমার বন্ধু হতে পারব না। কেন? কেন আবার? তোমার মুখ একবার বাইরে, একবার ভেতরে। এই ভেতরে, এই বাইরে। কখনো কথা বলবে, কখনো বলবে না। এটা কি ভালো লাগবে? ক্যাঙাচি হাসল। হাসতে হাসতে বলল, ওÑ এই কথা! আমি ভেবেছি তুমি আমাকে হিংসে করো। ব্যাঙাচি আরেক লাফে পানিতে নামল। বলল, হিংসে করব কেন? তুমি কি আমার খাবার খাবে? তা তো ঠিক। ক্যাঙাচি তার খাবার খাবে কেন? আর ব্যাঙাচিই বা ক্যাঙাচির খাবার খাবে কেন? তাহলে একসাথে পানিতে বাস করতে অসুবিধা কী? ব্যাঙের প্রধান খাদ্য পোকামাকড়। কাছিমের খাদ্য ঘাস, পাতা, ফুল, কীটপতঙ্গ ইত্যাদি। সুতরাং ব্যাঙাচির খাবার ক্যাঙাচি খাবে না। ক্যাঙাচির খাবার ব্যাঙাচি খাবে না। তারা দুজন ভালো বন্ধু হয়ে গেল। ব্যাঙাচি হাসলে ক্যাঙাচি হাসে। ক্যাঙাচি হাসলে ব্যাঙাচি। ক্যাঙাচি কাঁদলে ব্যাঙাচি কাঁদে। ব্যাঙাচি কাঁদলে ক্যাঙাচি। ক্যাঙাচি সাঁতরালে ব্যাঙাচি সাঁতরায়। ব্যাঙাচি সাঁতরালে ক্যাঙাচি। ক্যাঙাচি ব্যাঙাচিÑ ব্যাঙাচি ক্যাঙাচি। দুজন মিলেমিশে একাকার। তাদেরকে দেখে মা-ব্যাঙ বেজায় খুশি। বেজায় খুশি মা-কাছিম। মা-কাছিম হাসে। মা-ব্যাঙ হাসে। মা-ব্যাঙের কোলে ক্যাঙাচি। ব্যাঙাচি ওঠে মা-কাছিমের কোলে। মা-কাছিম মা-ব্যাঙ মিলেমিশে একাকার। ব্যাঙাচি তাদেরকে বলল, আমরা বড় হলে কী হব? ক্যাঙাচিও জিজ্ঞেস করল, আমরা বড় হলে কী হব? মা-ব্যাঙ বলল, একজন ব্যাঙ হবে একজন কাছিম। ব্যাঙাচি-ক্যাঙাচি বলল, দুজনের মধ্যে শুধুই পার্থক্য? কোনো মিল থাকবে না?
মা-কাছিম বলল, একটাই মিল। সবাই মা-কাছিমের দিকে তাকায়। কী মিল? কী মিল? মা-কাছিম বলল, দুজনেই মানুষের খাদ্য তালিকায়।
Sa. Mo. Shamsul Alam ১৯৬২ সালের ২৫ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন। পৈতৃক নিবাস রাজবাড়ী জেলার কালুখালী উপজেলাধীন শিকজান গ্রামে। পিতা প্রয়াত এস. এম. শাহজাহান আলী এবং মাতা সালেহা শাহজাহান। তিনি ১৯৭৯ সাল থেকে লেখালেখি শুরু করেন এবং সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় তাঁর অবাধ বিচরণ। প্রকাশিত গ্রন্থ প্রায় অর্ধশত। শিশুকিশোরদের জন্য লেখা গ্রন্থের সংখ্যা বেশি। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছেÑ আমার মনের আকাশ জুড়ে, মায়ের অলংকার, হেসে ফাটে দম, আব্বুর ফিরে আসা, আমার দেশের মনের সাথে, বাবার কবর, মিরধা ভাইয়ের মজার কীর্তি, শব্দরম্য, নতুন রঙে আঁকা, গল্প নাচে ছড়ার গাছে, ছড়াসমগ্র, কিশোর কবিতা সমাহার, কিশোর গল্প সমাহার প্রভৃতি। ২০১৬ সালে প্রকাশিত ‘আমার বঙ্গবন্ধু’ বইটি পাঠক-সমাজে সমাদৃত হয়েছে।
স.ম. শামসুল আলম বেশ কিছু সংগঠন থেকে সংবর্ধনা-সম্মাননা পেয়েছেন। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে, শিশুসাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য অতীশ দীপঙ্কর গবেষণা পরিষদ কর্তৃক আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা সম্মাননাÑ২০১৪, কবিতায় বিশেষ অবদানের জন্য কবি ওমর আলী সাহিত্য পদকÑ১৪২২, ছড়াসাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম স্মৃতি পদকÑ২০১৬, বাংলাদেশ শিশুসাহিত্য একাডেমি কর্তৃক মায়ের অলংকার গ্রন্থের জন্য কিশোরকবিতা সম্মাননাÑ২০১৬, কিশোর কবিতা ও গদ্যে বিশেষ অবদানের জন্য মোহাম্মদ নাসির আলী শিশুসাহিত্য পুরস্কার-২০১৭ প্রভৃতি। বর্তমানে তিনি নির্মাণ ও আবাসন ব্যবসার সাথে জড়িত। শিশু-কিশোর সংগঠন আনন ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি।