তিনটি কারণে এই বই। প্রথমত আমার মনে হলো আমি একটি ভালো গল্প লিখে ফেলেছি। আমার লেখালেখি জীবনে আমি অনেক কিছুই লিখেছি। কিন্তু সব লেখাই তো আর মানসম্পন্ন হয় না। চেষ্টা থাকলেও খুব কম লেখাই উতরে যায়। ‘ঊর্মিমালা’ আমার সেই গল্প, যা লেখার পর আমি তৃপ্ত হয়েছি। লেখক হিসেবে নিজেকে ভালোবেসেছি। দ্বিতীয়ত পঞ্চাশটি বই বেরোলেও আমার কোনো বই নিয়ে তেমন কোনো আলোচনা কখনোই হয়নি। আমি অনেক নিরিবিলি ধাঁচের লোক। গত পাঁচ বছরের অধিক সময় ধরে চাকরি বা প্রথাগত আয়-রোজগারের চিন্তা না করে লিখে গেছি। নানা বিষয়ে আমি লিখি। কখনো সিনেমা নিয়ে, কখনো গল্প, কবিতা, উপন্যাসও লিখেছি। আবার চিত্রকলা, বিদেশি গল্প-কবিতা-নাটকের অনুবাদ, কখনো গবেষণাধর্মী লেখা, কখনো শিশুতোষ-মোদ্দা কথায় যখন যা মন চায় আমি লিখেছি। নিজের ভেতরে তাগিদ ছিলো আর কবি সাকিরা পারভীনেরও তাগাদা ছিলো যখন পঞ্চাশ বছর বয়স হবে তখন পঞ্চাশটা বই থাকবে। এটা বলা যায় একধরনের সৃজনশীল পাগলামি। সংখ্যার পাগলামি। ৫০-এ ৫০ মেলানো। কিন্তু পঞ্চাশটি বই হলেও আমার কোনো বই নিয়ে সে অর্থে আলোচনা হয়নি। একেবারে হয়নি তা নয়, অনলাইনে দু-তিনটা গ্রন্থ সমালোচনা হয়েছে। আমাদের গ্রন্থ সমালোচনা কেমন তা আপনারা জানেন। নির্দিষ্ট পত্রিকার মাপে বইয়ে দাম, প্রচ্ছদ শিল্পী, কাহিনি সংক্ষেপ বা বিষয়বস্তু নিয়ে সীমিত আকারের আলোচনা। তো আমার মনে হলো একটা গল্প দিয়েই একটা বই করি। ঊর্মিমালাকে তেমন উপযুক্ত গল্প মনে হলো আমার। গল্পটি ছাপা হয়েছিলো প্রিয় অনুজ তাপস রায়ের কল্যাণে ‘রাইজিংবিডিডটকম’-এ। সেই গল্পের লিংক পাঠিয়ে দিলাম নানাজনকে। মজার বিষয় হলো, এর মধ্যে অধিকাংশজনই সাগ্রহে গল্পটি পড়ে লিখতে চাইলেন, মতামত দিলেন। আমার কাছে মনে হলো, আরে এতো দিনের না-পাওয়া শোধ হয়ে যাবে আমার, যদি মাত্র একটি গল্প নিয়েই কয়েকটি আলোচনা পাওয়া যায়। আমার এই সাধ পূরণ করতেই এ বই। বন্ধু-অনুজ ও প্রিয়জনরা লিখেছেন এই গল্পটি নিয়ে। তাদের সবার কাছেই কৃতজ্ঞতা। অগ্রজদের দু-একজনকে বলেছিলাম লিখতে। হয়তো প্রেরণার অভাবেই তারা লেখেননি। তবু তাদেরকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে রাখি। এ বইয়ের তৃতীয় কারণটি ব্যক্তিগত নয়, বরং সুদূরপ্রসারী। ধরে নিলাম ‘ঊর্মিমালা’ একটি ভালো গল্প অথবা খারাপ গল্প। কিন্তু তাতে কোনো ক্ষতি—লাভ নেই। লাভটুকু হলো সমকালের একজন জীবিত লেখকের একটি ছোটগল্প নিয়ে আলোচনা করেছেন এ কালের আরো বারোজন লেখক। একটিমাত্র গল্প নিয়ে বারোটি আলোচনা সহজ কথা নয়। এই একটি গল্পের বারোটি আলোচনার মধ্যে আদতে রয়ে গেছে তুলনামূলক আলোচনার বীজ। ভবিষ্যতের পাঠক কিংবা তুলনামূলক সাহিত্যের আলোচক একই গল্পের নানা ব্যাখ্যা—বিশ্লেষণ কতোভাবে করেছেন সেটা দেখার, পড়ার একটু সুযোগ রয়ে গেলো। এ ধরনের বই তো বাংলাদেশে আগে আর হয়নি। ফলে সমালোচনা সাহিত্যের একটি দিকও খুলে গেলো এতে। এখানে উল্লেখ করে রাখা দরকার, আমি প্রত্যেক আলোচককে আগেই জানিয়েছিলাম আলোচনাগুলো নিয়ে একটা বই প্রকাশ করা হবে এবং আমি চাই আপনারা আলোচনাটিকে আনুষ্ঠানিক সূচনা অথবা নীরিক্ষা হিসেবেই এটিকে দেখা যায়। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, আলোচকগণ যে যেভাবে, যে ভঙ্গিতে খুশি লিখেছেন। কাউকেই লেখার শব্দসীমা, ধরন কিংবা কোনো বিষয়ক বাধ্যবাধকতা দেয়া হয়নি। সবাই স্বাধীনমতো লিখেছেন। আর আমি কোনো লেখার একটি বাক্যতেও হাত দিইনি। সম্পাদক হিসেবে আমার কাজ কেবলমাত্র বইটির ভাবনা—পরিকল্পনা করা এবং লেখাগুলোর একটা ক্রম তৈরি করা। কাজেই এ বইতে ‘ঊর্মিমালা’ গল্প নিয়ে যে যা লিখেছেন তা একদম হুবহুই প্রকাশ করা হলো। আমার কাছে লেখকের নিজস্ব ভঙ্গি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। সেই গুরুত্বকে আমি একচুলও নষ্ট করিনি। এ বইতে যে বারোজন ব্যক্তি লিখেছেন তারা কেউ কবি, কেউ শিক্ষক, কেউ গবেষক, কেউ কথাসাহিত্যিক। এর মধ্যে অনেকেই স্বনামে বিখ্যাত, আবার দু—একজন একেবারেই নবীন। কিন্তু এরা সবাই আমার বন্ধুজন। আমার আহ্বানে এরা লিখেছেন, কেউ দীর্ঘ লেখা, কেউ সংক্ষিপ্ত। আলাদা করে এদের লেখা নিয়ে কিছু বলার নেই আমার, আলাদা করে ধন্যবাদ দেয়ারও নেই। কারণ এরা তো আপনজন। নিত্য যোগাযোগ হয়। আর আমি তো চেয়েই নিয়েছি এই লেখাগুলো। কাজেই ধন্যবাদের আনুষ্ঠানিকতার চেয়ে অন্তরঙ্গতার আদরই বড়। বন্ধুগণ, তোমাদের সবার প্রতি আমার আদর, ভালোবাসা। প্রিয় পাঠক, ঊর্মিমালার কুদরতি জগতে স্বাগতম। মুম রহমান
মুম রহমান। পুরাে নাম মুহম্মদ মজিবুর রহমান। জন্ম ২৭ মার্চ, ১৯৭১ সাল। বাবা : মাে. মুসলেহ উদ্দিন। মা : তাহেরুন্নেসা। দেশে এবং দেশের বাইরে উল্লেখযােগ্য পত্র-পত্রিকায় অসংখ্য গল্প-উপন্যাস-নাটক-প্রবন্ধ-অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছে। সম্প্রতি ব্যস্ত টিভি নাটক আর বিজ্ঞাপনের স্ক্রিপ্ট নিয়ে। প্রথম রচিত ও অভিনীত টিভি নাটক এক চিলতে আকাশ ১৯৮৮ সালে বিটিভিতে প্রচারিত । কাজ করেছেন মঞ্চ ও বেতারে। নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগ থেকে নাট্য রচনায় এমএ । পত্র-পত্রিকা ও বিজ্ঞাপনী সংস্থায়ও কর্মরত ছিলেন । বর্তমানে ইংরেজি মাধ্যমের এক স্কুলে নাট্যশিক্ষক হিসাবে কর্মরত। সাকিরা পারভীনকে নিয়ে তৈরি করেছেন আর্ট জোন নামের সংস্থা; যেখানে নাট্যরচনা, আবৃত্তি, বনসাই তৈরির মতাে বিষয়ে ভিন্ন ধারার প্রশিক্ষণ কোর্স পরিচালনা করেন তিনি।