ফ্ল্যাপে লেখা কিছু কথা আজ তিনদশক পরেও, কোনো-না কোনোভাবে মুক্তিযুদ্ধ রয়ে গেছে বাংলাদেশের কেন্দ্রে। বাংলাদেশের সমাজ, অর্থনীতি, রাজনীতি-সব কিছুর পর্যালোচনা করতে গেলে কোনো-কোনো সময় নিরিখটা হয়ে দাঁড়ায় মুক্তিযুদ্ধ। তা’হলে কি মুক্তিযুদ্ধে ছিল যে আশা তা এখনো অপূর্ণ, নয়তো ঘুরে ফিরে কেন নিরিখটা দাঁড়াবে মুক্তিযুদ্ধ। গত তিনদশ ধরে ড. মুনতাসীর মানুন ঐসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছেন তার বিভিন্ন প্রবন্ধ ও গ্রন্থে। এই ধারাবাহিকতায় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক তাঁর নতুন গ্রন্থ। মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১। বর্তমান গ্রন্থটি ড. মামুনের গ্রন্থিত ও অগ্রন্থিত ১০টি প্রবন্ধের সংকলন। ১০টি প্রবন্ধ বিভিন্ন হলেও িএক ধরনের ধারাবাহিকতা আছে। মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি, মুক্তিযুদ্ধ প্রত্যয়, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের বক্তৃতা ও ২৬ মার্চের ওয়ারলেস বার্তা প্রাক ১৯৭১ পটভূমিতে রচিত। পরবর্তীকালে বুদ্ধিজীবী সৈনিকরা কী ভাবে মুল্যায়ন করেছেন মুক্তিযুদ্ধ তা নিয়ে রচিত অবশিষ্ঠ পাঁচটি প্রবন্ধ। বিশিষ্ট লেখক ও ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বাংলাদেশে স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও চেতনা অক্ষুণ্ন রাখার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে নির্ভীকভাবে ও নিরলসভাবে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষণা ও লেখালেখি করে আসছেন। তাঁর বলিষ্ট লেখনিতে উঠে এসেছে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কিত নানান ধরনের মননশীল লেখা যা আমাদের সাহিত্যকে করেছে ধন্য। বর্তমান সংকলনে গ্রন্থিত প্রবন্ধগুলি তার প্রমাণ।
সূচিপত্র *মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি : সিভিল সমাজের সংগ্রামের ২৫ বছর *মুক্তিযুদ্ধ *মুক্তিযুদ্ধের সংস্কৃতি বনাম আপোসের সংস্কৃতি *মুক্তিযুদ্ধের বই *দৈনিকে একাত্তর *সাময়িকপত্রে ১৯৭১ : বামপন্থীদের দৃষ্টিতে *বাঙালি রমণীর পাকিস্তানী সৈন্যপ্রীতি *৭ মার্চ ছিল অনিবার্য *বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার সেই ওয়ারলেস বার্তটি *জেনারেল জে এফ আর জ্যাকবের সাক্ষাৎকার
মুনতাসীর মামুনের পৈতৃক বাড়ি চাঁদপুর জেলার গুলবাহার গ্রামে, কিন্তু তিনি ঢাকার ইসলামপুরে নানাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার বেড়ে ওঠা চট্টগ্রামে। সেখানেই পোর্ট ট্রাস্ট প্রাইমারি ও হাই স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা নেন। পরে ভর্তি হন চট্টগ্রাম কলেজে। অতঃপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ থেকে স্নাতক, স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন এবং একই বিভাগ থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। শিক্ষাজীবনে সাংবাদিকতার সাথে যুক্ত ছিলেন, কাজ করেছেন ‘দৈনিক বাংলা বিচিত্রা’য়। এছাড়াও স্বাধীনতার পর প্রথম ডাকসু নির্বাচনের সম্পাদক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক সংসদের সভাপতি হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। ১৯৭৪ সালে প্রভাষক পদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। এরপরই তার বিভিন্ন অনুবাদগ্রন্থ, চিত্র সমালোচনা এবং ইতিহাস বিষয়ক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। ইতিহাসের প্রতি তার ভালোবাসা এবং দায়িত্ববোধ থেকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে 'মুক্তিযুদ্ধ বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ গবেষণা ইন্সটিটিউট' প্রতিষ্ঠা করেন। বাংলার ইতিহাসকে তিনি প্রান্তিক মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে চান- এই উদ্দেশ্যেই মুনতাসীর মামুনের বই লেখা। একজন শিক্ষক হওয়ার পাশাপাশি তিনি একজন ইতিহাসবিদ ও সাহিত্যিক। ঢাকা শহর নিয়ে তার রয়েছে গবেষণাপত্র। গড়ে তুলেছেন ‘সেন্টার ফর ঢাকা স্টাডিজ’ নামের ইতিহাস চর্চার একটি প্রতিষ্ঠান, যেখান থেকে মুনতাসীর মামুন এর বই সমগ্র তথা ১২টি গবেষণামূলক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। মননশীল এই লেখক দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে লিখে যাচ্ছেন নানা বিষয়ে। মুনতাসীর মামুন এর বই সমূহ এর বিষয় বহুমাত্রিক। তার গ্রন্থের সংখ্যা ২২০, যাতে স্থান পেয়েছে গল্প, প্রবন্ধ, গবেষণা এবং অনুবাদ সাহিত্য। শিশু-কিশোরদের নিয়েও তার লেখা গ্রন্থ প্রশংসা কুড়িয়েছে। গণতান্ত্রিক আন্দোলনেও তার সক্রিয় উপস্থিতি লক্ষ্যণীয়। বর্তমানে এই ইতিহাসবিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিষয়ের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।