নৈঃশব্দ্যের কবি ও কথাসাহিত্যিক অধ্যক্ষ ড. শাহনাজ পারভীন একজন নিভৃতচারী লেখক। সব্যসাচী এই লেখকের গল্পগুলোতে মূলত সমাজের পোড় খাওয়া পরিশ্রমী মানুষদের অন্তর্গত জীবন কাহিনী জড়িয়ে থাকে। জড়িয়ে থাকে শহর, নগর, বন্দর এবং এদেশ ছাড়িয়ে বিদেশ অতঃপর বিশ্বের নানান কাহিনীর দশ দিগন্ত। তিনি তাঁর গল্পের মাধ্যমে সমাজের নানান অসংগতি তুলে এনেছেন নিখুঁত নিপুণতায়। গ্রাম থেকে উঠে আসা জীবন নানা আবর্তে যখন শহরের ঝলকানিতে ঠিকরে ওঠে, তখন তাদের চোখে নানা বর্ণিল আলোর চৈতন্য জীবনের ফাঁক ফোকর গলিয়ে নিভৃতে উঁকি দেয়। তারা সহজ পথ হারিয়ে অন্ধকার গুহায় হাবুডুবু খেতে খেতে এক সময় মিলিয়ে যায় অতল গহ্বরে। গ্রাম থেকে উঠে আসা লাবন্য এবং তাজুল তেমন দুটি চরিত্র। যাদের একজন এই সমাজের শিক্ষক নামের কলংক। আর একজন শহরে এসে চোখ খুলে যাওয়া মেধাবী শিক্ষার্থী। ‘ফোর্থ ইয়্যার, ফিলোসোফী, লাবণ্য, স্যার’Ñ কি করে তার মেধার দাপটে বিপথগামী শিক্ষককে নিজের জালে আটকে ফেলে যথার্থ বিচারের আওতায় এনে একটি মানুষখেকো মানুষে রুপান্তর করেÑসেই রকম একটি সাহসী গল্প ‘মানুষ খেকো মানুষ’। গ্রন্থাবদ্ধ সতেরোটি গল্পের একটি মানুষ খেকো মানুষ। এই গল্পটিকে কেন্দ্র করেই গ্রন্থের শিরোনাম নির্বাচন করা হয়েছে মানুষ খেকো মানুষ। বর্তমান সময়ের নানাবিধ ঘটনা, রটনা এবং কাহিনীকে কেন্দ্র করে লিখিত প্রতিটি গল্পই স্বতন্ত্র। যা পাঠের মাধ্যমে কথাসাহিত্যিক শাহনাজ পারভীন এর গল্প বলার পারঙ্গমতা, কঠিন জীবনবোধ এবং তাঁর লেখার সাহিত্যিক গুণ সম্পর্কে পাঠক স্বচ্ছ ধারণা পাবেন। তাঁর প্রায় প্রতিটি গল্পেই নারীকে প্রধান চরিত্র হিসেবে নারীর শিক্ষা, কর্ম ও ব্যক্তিত্বের মাধ্যমে এক উচ্চ অবস্থানে উপস্থাপন করা হয়েছে। লেখক ও গবেষক শাহনাজ পারভীন এর সমকালীন ভাষা, জীবন্ত সংলাপ এবং প্রাণবন্ত উপস্থাপনা সহজেই একজন পাঠককে অবলীলায় পাঠের গভীরে নিয়ে যায়। যা একজন কথাসাহিত্যিকের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য।
শাহনাজ পারভিন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ থেকে বিএ (সম্মান), এমএ এবং পিএইচ.ডি ডিগ্রি লাভ করেন। বর্তমানে তিনি রাজশাহী নিউ গভ. ডিগ্রি কলেজের ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। তিনি জয়পুরহাট জেলার আক্কেলপুর স্থায়ী বাসিন্দা। শাহনাজ উপজেলা সদরের স্থায়ী বাসিন্দা। পারভিনের গবেষণার ক্ষেত্র প্রধানত নারী ও মুক্তিযুদ্ধ হলেও তিনি আঞ্চলিক ইতিহাস নিয়েও গবেষণা ও লেখালেখি করেন। ইতোমধ্যে তাঁর সাতটি গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে ।