রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৬১ সালের ৭ মে মোতাবেক ২৫ বৈশাখ ১২৬৮ সনে কলকাতার জোড়াসাঁকোর বিখ্যাত ঠাকুর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও পিতামহ প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর বাল্যকালে ওরিয়েন্টাল সেমিনারি, নর্মাল স্কুল, বেঙ্গল একাডেমি, সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুল প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানে বিদ্যাশিক্ষার জন্যে তাঁকে পাঠানো হলেও তিনি স্কুলের পাঠ শেষ করতে পারেননি। স্কুলের প্রথাগত শিক্ষা তাঁর না হলেও বাড়িতে গৃহশিক্ষকের কাছে জ্ঞানার্জনের কোনো ত্রুটি ঘটেনি । রবীন্দ্রনাথকে মাত্র ১৭ বছর বয়সে ব্যারিস্টারি পড়ার জন্যে বিলাত যেতে হয় । কিন্তু পড়া শেষ না করেই দেড় বছর পর পিতার আদেশে তিনি দেশে ফিরে আসেন। মনোযোগ দেন সাহিত্যচর্চায় । তাঁর প্রথম প্রকাশিত কবিতা ‘হিন্দুমেলা উপহার' । তাঁর প্রথম ছোটগল্প ‘ভিখারিনী' এবং প্রথম উপন্যাস 'করুণা' 'ভারতী' পত্রিকার প্রথম সংখ্যায় ১৮৭৭ সালে প্রকাশিত হয়। ১৮৮২ সালে তিনি ‘স্বারস্বত সম্মেলনে'র সম্পাদক নিযুক্ত হন এবং এ সময়ই ‘নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ' কবিতাটি রচনা করেন। ১৮৮২ সালে ‘সন্ধাসঙ্গীত' প্রকাশিত হবার পর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বঙ্কিমচন্দ্রের কাছ থেকে জয়মাল্য লাভ করেন। ২২ বছর বয়সে জমিদারি সেরেস্তার এক কর্মচারীর কন্যা ভবতারিণী দেবীর সঙ্গে ১৮৮৩ সালে তাঁর বিয়ে হয় । পরে তার নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় মৃণালিনী । ১৮৮৪ সাল থেকে রবীন্দ্রনাথ পিতার আদেশে বিষয়কর্ম অর্থাৎ জমিদারি পরিদর্শনে নিযুক্ত হন। তিনি ১৮৯০ থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে জমিদারি দেখাশোনা করেন। এই সূত্রে শিলাইদহ, সাহজাদপুর, কুঠিবাড়ির নাম বাঙারি পাঠকের কাছে পরিচিত হয়েছে। পুত্র রবীন্দ্রনাথের শিক্ষা-সমস্যা থেকে রবীন্দ্রনাথের বোলপুর ব্রহ্মচর্য আশ্রমের সৃষ্টি ১৯০১ সালে। সেই প্রতিষ্ঠানই আজ বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে রূপান্তরিত হয়েছে। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ প্রস্তাব থেকে দেশের মধ্যে যে রাজনৈতিক আন্দোলন শুরু হয় তাতে তিনিও অংশগ্রহণ করেন। এ উপলক্ষ্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘বাংলার মাটি বাংলার জল' গানটি রচনা করেন। এ বছর বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদে তিনি একটি শোভাযাত্রা পরিচালনা ও রাখী উৎসব প্রচলন করেন। জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের (১৯১৯) প্রতিবাদে তিনি ব্রিটিশ-ভারত সরকারের দেওয়া ‘নাইট’ উপাধি বর্জন করেন ।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন একাধারে ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, ছোটগল্পকার, চিত্রশিল্পী, সংগীতস্রষ্টা, অভিনেতা, কন্ঠশিল্পী, কবি, সমাজ-সংস্কারক এবং দার্শনিক। গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের ইংরেজি অনুবাদের জন্য প্রথম বাঙালি হিসেবে ১৯১৩ সালে তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরষ্কার লাভ করেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৬১ সালের ৭ মে তৎকালীন ব্রিটিশ-শাসিত ভারতে কলকাতার ধনাঢ্য ও সংস্কৃতিমনা জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশব থেকেই তিনি লেখালেখিতে মনোনিবেশ করেন। ভানুসিংহ ঠাকুর ছিল তাঁর ছদ্মনাম। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর বই মানেই এক মোহের মাঝে আটকে যাওয়া, যে মোহ পাঠককে জীবনের নানা রঙের সাথে পরিচিত করিয়ে দেয় নানা ঢঙে, নানা ছন্দে, নানা সুর ও বর্ণে। তাঁর ৫২টি কাব্যগ্রন্থ, ৩৮টি নাট্যগ্রন্থ, ১৩টি উপন্যাস, ৩৬টি প্রবন্ধ ও অন্যান্য গদ্যসংকলন জীবদ্দশায় বা মৃত্যুর কিছুদিন পরই আলোর মুখ দেখে। কাবুলিওয়ালা, হৈমন্তী, পোস্টমাস্টারসহ মোট ৯৫টি গল্প স্থান পেয়েছে তাঁর ‘গল্পগুচ্ছ’ গ্রন্থে। অন্যদিকে ‘গীতবিতান’ গ্রন্থে সংকলিত হয়েছে ১,৯১৫টি গান। উপন্যাস, কবিতা, সঙ্গীত, ছোটগল্প, গীতিনাট্য, প্রবন্ধ, ভ্রমণকাহিনীসহ সাহিত্যের সকল শাখাই যেন ধারণ করে আছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর বই সমূহ। তিনি একাধারে নাট্যকার ও নাট্যাভিনেতা দুই-ই ছিলেন। কোনো প্রথাগত শিক্ষা ছাড়া তিনি চিত্রাংকনও করতেন। তৎকালীন সমাজ-সংস্কারেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন এই গুণী ব্যক্তিত্ব। বিশ্বের বিভিন্ন ভাষাতেই অনূদিত হয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর বই সমগ্র। তাঁর যাবতীয় রচনা ‘রবীন্দ্র রচনাবলী’ নামে ত্রিশ খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছে। ১৯৪১ সালের ৭ আগস্ট জোড়াসাঁকোর বাড়িতেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুর পর এতদিন পেরিয়ে গেলেও তাঁর সাহিত্যকর্ম আজও স্বমহিমায় ভাস্বর। আজও আমাদের বাঙালি জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রেখেছে বিশ্বকবির সাহিত্যকর্ম।