"প্রাচীন ভারতের অর্থনৈতিক ইতিহাসের সন্ধানে" বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা: ভারতীয় উপমহাদেশে প্রায় সাড়ে তিন হাজার বছর ধরে (খ্রিস্টপূর্ব ২৩০০-খ্রিস্টাব্দ ১২০০) যে সব অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপ চলছিল, তার একটি রূপরেখা এবং গতিপ্রকৃতি দেখানাে ইতিহাস-গ্রন্থমালার এই দ্বিতীয় গ্রন্থের উপজীব্য। সুদূর অতীতে ভারতে কীভাবে কৃষিপ্রধান অর্থনীতির পত্তন হল, তার আলােচনা যেমন এখানে, একইসঙ্গে নজর দেওয়া হয়েছে ফসলের বৈচিত্র্য, কৃষিকাজের উপকরণ, সেচব্যবস্থা, ভূমিব্যবস্থা, সাধারণ কৃষক, ভূস্বামী প্রভৃতি জরুরি বিষয়ের উপরেও। যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে কারিগরি শিল্পোৎপাদনের নানা দিকের উপর, যার অন্তর্গত কারিগরি বৃত্তি ও বিভিন্ন পেশার বিকাশ, কারিগরি দক্ষতা ও কৃৎকৌশলের উন্নতি, ধাতুর ব্যবহার, কারিগরি সংগঠনগুলির রীতিচরিত্র ইত্যাদি। উৎপাদনের নানা দিকের মতােই মনােযােগ দেওয়া হয়েছে প্রাচীন ভারতের ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রতি। বণিক ও বাণিজ্যকেন্দ্রের প্রকারভেদ, পণ্যসামগ্রী, আমদানি-রফতানির গতিপ্রকৃতি, যাতায়াত ও পথঘাট, মুদ্রা ও বিনিময়ের অন্যান্য মাধ্যম—এই আলােচনার অন্তর্ভুক্ত। আরেক আকর্ষক বিষয় হল, প্রাচীন ভারতের নগর, নগরজীবন ও নগরায়ণের গতিপ্রকৃতি। অর্থনৈতিক জীবনের আলােচনায় সমকালীন সমাজ ও রাজনীতির প্রসঙ্গও এসেছে। ফলে, সমাজ ও রাজনীতির পরিপ্রেক্ষিতে অর্থনৈতিক জীবনযাত্রা অনুধাবন করা সম্ভব হবে। এই বইয়ের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য, প্রাচীন ভারতের অর্থনৈতিক ইতিহাসের পরিবর্তনশীল চরিত্রের সন্ধান ও উপস্থাপন। প্রাচীন ভারতের আর্থ-সামাজিক অবস্থা-ব্যবস্থা ছিল পরিবর্তন-বিমুখ, সনাতন ও অটল—এমন একটি ধারণা আমাদের দীর্ঘলালিত। পরম্পরাকে অস্বীকার না করেও প্রাচীন ভারতের অর্থনৈতিক জীবনের ওঠাপড়া, অবক্ষয়-বিকাশ ও ভাঙাগড়ার নানান নজির তুলে ধরে সেই ধারণাকেই নতুন আলােয় নেড়েচেড়ে দেখেছেন রণবীর চক্রবর্তী। তার ফলে, অর্থনৈতিক জীবনে অন্তত আটটি পর্বের নির্দেশ রয়েছে এই গ্রন্থে। অর্থনৈতিক জীবনে গতিপ্রকৃতির পরিবর্তনের নিরিখে দেখিয়েছেন বিভিন্ন পর্যায়। এই পরিবর্তনের গতি ও ছন্দ হয়তাে মন্থর, প্রায় অনতিলক্ষ; তবু পরিবর্তনের সম্ভাবনাকে স্বদক্ষতায় মূর্ত করেছেন লেখক। পরিমার্জিত দ্বিতীয় সংস্করণে যুক্ত হয়েছে একটি দীর্ঘ সংযােজন। সাম্প্রতিকতম তথ্য ও গবেষণার সন্নিবেশ ঘটেছে এতে। সঙ্গে উপযুক্ত নতুন গ্রন্থপঞ্জি।