"হস্তান্তর ৩" বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা: রাজনৈতিক সাংবাদিকের জীবনে বহু দেশনেতা, বহু তুখােড় কূটনীতিবিদ, আন্তর্জাতিক স্তরে খ্যাতিমান রাষ্ট্রনেতাদের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযােগ আসে। তাঁদের সঙ্গে সেই সংবাদদাতার অন্তরঙ্গ সম্পর্ক গড়ে ওঠাও বিচিত্র নয়। এমনও হতে পারে, তাঁর জীবনে সেই চেনামুখের মিছিল অন্তহীন। বিশিষ্ট রাজনৈতিক সংবাদদাতা শংকর ঘােষ আজ প্রবীণ। তিনি যখন ফেলে-আসা-অতীতের দিকে তাকান তখন ইতিহাস জীবন্ত হয়ে ওঠে। ‘হস্তান্তর’-এর এই তৃতীয় ও শেষ পর্বের কালসীমা ১৯৬৩ থেকে ১৯৯৭। তবে কাল বহতা নদীর মতাে। ফলে হস্তান্তরের আগের কিছু ঘটনা থেকে যেমন ভারতের স্বাধীনতাপ্রাপ্তিকে বিচ্ছিন্ন করা যায়নি, তেমনই ১৯৯৭-এর পরের কিছু ঘটনাও প্রসঙ্গক্রমে এইপর্বে এসে গেছে। এই কালসীমায় ঘটে গেছে বহু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। যেমন যুক্তফ্রন্টের উত্থান ও পতন, নকশাল আন্দোলনের ইতি, জরুরি অবস্থা জারি, ইন্দিরা গান্ধীর হত্যা, পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতায় বামফ্রন্ট, সন্ত্রাসের শিকার রাজীব গান্ধী ইত্যাদি। তবে এই পর্বের সবচেয়ে উল্লেখযােগ্য ঘটনা পূর্ব পাকিস্তানে গণ-অভ্যুত্থান ও স্বাধীন বাংলাদেশের উৎপত্তি। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে বাংলাদেশের জন্ম একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। ওই দেশের মুক্তিযুদ্ধে শুধু পাকিস্তানের পরাজয় হয়নি, পরাজিত হয়েছিল। মার্কিন কূটনীতি ও দক্ষিণ এশিয়ায় তার রাষ্ট্রনীতি। আবার এই সময়সীমার সবচেয়ে কৌতুককর ঘটনা আজীবন কমিউনিস্ট, অশীতিপর নেতা জ্যোতি বসুর হাতে এদেশের শাসনভার তুলে দেওয়ার প্রচেষ্টা। জ্যোতি বসু হয়তাে সম্মত ছিলেন, কিন্তু তাঁর দল এই পদ গ্রহণে আপত্তি জানায়। যে কমিউনিস্টরা ১৯৪৭ সালের ক্ষমতা হস্তান্তরকে ঝুটা আজাদি বলে ধিক্কার দিয়েছিলেন, তাদেরই কাছে অর্ধশতক পরে সেই ঝুটা স্বাধীন দেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব ইতিহাসেরই নির্মম কৌতুক। প্রবীণ সাংবাদিকের বিশ্লেষণী বীক্ষণে নড়ে চড়ে উঠেছে অর্ধশত বছর আগেকার সেই অতীত অনতীতের সেই ইতিহাস। তিনটি পর্ব মিলিয়ে ‘হস্তান্তর’ এক সুদীর্ঘ রাজনৈতিক ইতিহাসের অনুসন্ধান।