পরম শ্রদ্ধেয় কর্নেল মোঃ আফসার আলী (অবঃ) কর্তৃ প্রণীত আত্মজীবনী ‘জীবন নদী’র পা-ুলিপি পড়বার সুযোগ হয়েছে আমার। ব্যক্তি জীবনে লেখক যেমন একটা সহজ সরল মাটির মানুষ, তার লেখাও তেমনি গ্রাম বাংলার সবুজ প্রকৃতির রূপ, রসে সমৃদ্ধ, মাটির ঘ্রাণে ভরপুর। জীবন নদীর বাঁকে বাঁকে আছে নানা চড়াই উৎরাই, কখনো স্রোতের টানে এ জীবন প্রবহমান থেকেছে কখনো বা ভাটার টানে ছুটে গিয়েছে ভাটির দেশে, রেখে গিয়েছে জীবনের পলল। ফলেছে সেখানে জীবনের সোনালি ফসল। লেখক সত্তর বছরের পথ চলায় তাঁর শৈশব, কৈশোর, যৌবন আর কর্মজীবনকে দেখেছেন পেছন ফিরে। বিশেষ করে তার প্রিয়তমা স্ত্রীকে নিয়ে গড়েছেন স্মৃতির তাজমহল। যেখানে গিয়েছেন সেখান থেকেই তুলে আনতে চেষ্টা করেছেন সেই এলাকার প্রকৃতি ও মানুষকে, ইতিহাস ঐতিহ্যকে। নাটোরের একটা প্রত্যন্ত গ্রামে তার জন্ম। কিভাবে সে সময়ে তিনি প্রাথমিক স্কুল শুরু করলেন, মাধ্যমিক পাস করলেন, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করলেন, সত্তর দশকে কিভাবে স্বাধীনতার উন্মত্ত হাওয়া তাদেরকে প্রভাবিত করেছিলÑ এসব তার লেখা একটা ইতিহাস রেখে গিয়েছে। কর্মজীবনে বাসুদেবপুর, শিবগঞ্জ, কুড়িগ্রাম এসবের পর শুরু হলো তার সৈনিক জীবনের এক অসাধারণ স্মৃতিচারণ। স্বদেশের বিভিন্ন সেনানিবাসের জীবন প্রবাহ, দেশের বাইরে জাতিসংঘের হাইতি মিশন, অস্ট্রেলিয়া ভ্রমণ, সর্বোপরি স্ত্রীর অসুস্থতা লেখকের লেখায় বারবার ফিরে এসেছে। আমার বিশ্বাস পাঠক এ লেখা থেকে শুধু স্মৃতিচারণই নাÑ খুঁজে পাবে বাংলাদেশের সামাজিক বিবর্তনের এক সুন্দর ও সোনালি ইতিকথার নির্ভেজাল নির্যাস।