‘শুভ্রার চুপকথা হবার গল্প’ কোনো গল্পগ্রন্থ নয়। এটি মরিয়ম জাহানের একটি কাব্যগ্রন্থ। ৬৪ পৃষ্ঠার এই বইটিতে রয়েছে ৫০ টি কবিতা। বাংলা কবিতায় কবি থেকে কবিতা চর্চাকারীর সংখ্যা অগণিত। আর এটাই একটি বড় বৈশিষ্ট্য বাংলা কবিতার। নিজের ভাষায় নিজের উপলব্ধিকে প্রকাশের কোন বাধা নেই। আসলে মানুষ যে কথা মুখে বলতে পারে না, সে কথা অনায়াসে লিখে বলতে পারে। লেখাটি একটি টেকনিক। বর্ণমালা শেখা, বাক্যগঠন করতে শেখা, ব্যাকরণ শেখা মতোই কবিতা লেখাও শেখার একটি বিষয়। কিন্তু ভাব চিন্তা যার যার। এই ভাব চিন্তার উৎকর্ষতার জন্য চাই নিরবিচ্ছিন্ন সাধনা। কবি তো তার চোখের অশ্রু দিয়ে লেখে কবিতা। মুহুর্তেই তা পড়ে নিতে হয় পাঠককে না হলে শুকিয়ে যায় বাতাসে, রোদের তাপে। রাজকুমার চুপককথাদের প্রণয়ের গল্প কখনো মিথ্যে হয়ে যায় না, মিথ্যে তারা হতেই দেবে না! মিথ্যে হয় না তাদের স্বপ্নগুলো। একজনের অনুভূতি ঠিক বিদ্যুৎগতিতে, ছুঁয়ে যায় অপরজনকে। কেন না আজন্ম তারা যে এক আত্মা।’ শুভ্রার চুপকথা হবার গল্প-পৃষ্ঠা-৮ বইটির নাম কবিতা এটি। দীর্ঘ এ কবিতার মধ্যে উঠে এসেছে জীবনের অভ্যন্তরীণ আলো অন্ধকার। প্রেমের কি জয় পরাজয় আছে? তবু প্রেমিক বা প্রেমিকা নিজেকে পরাজিত ভাবে বিচ্ছেদে, বিরহে। স্মৃতির বালুচর এমনই যে ঢেউয়ের পড়ে ঢেউ এসে আছড়ে পড়ে কিন্তু বালুচর ভেসে যায় না। ‘চুপকথা’ শব্দ-বন্ধের মধ্য দিয়ে এ বইটির কবিতাগুলো একই সাথে রহস্যময় ও রসাত্মক হয়ে উঠেছে। ছোট ছোট রাগ অভিমান অভিযোগ এ কবিতাগুলোকে করেছে অনেক বেশি আবেগী। ‘চুপকথা বলেছিল, আমায় ব্যথা দিও না কাছাকাছি থাকতে দাও। বলে, আর মিনতি করব না সারাটা দিন জ্বালাতন করব না। আমার খোঁজ নিও বলে। রোজনামচার আমার প্রণয় প্যাড়া হঠাৎ থমকে যাবে, সব সুনসান হবে। সেদিন চকিত পেছন ফিরে একবার দেখো চুপকথা তোমার চিরতরে চুপ হয়েছে।’ কবিতা সৃষ্টির কারণ অনেক। কবিরা অকারণে শব্দ ব্যয় করেন না। শব্দ সঞ্চয় আর উপযুক্ত প্রয়োগের মধ্য দিয়েই একজন কবির জীবনযাপন। নিজেকে নিজেরই তৈরি করে নিতে হবে। মরিয়ম জাহান আশা করা যায় সে বিষয়ে আরো সচেতন হবেন। কবিতা এমনই এক শিল্প মাধ্যম যেখানে কবির স্থান নেই কবিতাই শেষ কথা। কবিতা যাত্রা অব্যহত থাকুক মরিয়ম জাহানের তার পাঠকদের জন্য।
মরিয়ম জাহান। জন্ম ফেনী শহরে। জন্মের পর থেকেই বড় হয়েছেন ঢাকা শহরের এলিফ্যান্ট রোডে। পড়াশোনা ও কর্মজীবনের সূচনাও ঢাকাতেই। হাবিবুল্লাহ বাহার ইউনিভার্সিটি কলেজ থেকে এমএ সম্পন্ন করেছেন। বর্তমানে লেখালেখির পাশাপাশি ঠিকানা ফাউন্ডেশন নামক একটি আত্মমানবতার সেবায় নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানে যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক হিসেবে কর্মরত আছেন। লেখালেখির অনুপ্রেরণা পেয়েছেন তার বড় ভাই কবি মরহুম জাবেদ সারোয়ার (তার ছদ্মনাম ছিল বিহায়ন মেঘোডম্বরম) এর কাছ থেকে। মানব প্রেম, সম্পর্ক, স্নেহ-ভালোবাসা, হৃদয়ের একান্ত আবেগ-অনুভূতির চমৎকার প্রকাশ লক্ষ্য করা যায় মরিয়ম জাহান-এর লেখায়। অত্যন্ত স্বাভাবিক ভঙ্গিতে কাব্যে তিনি তুলে আনার চেষ্টা করেছেন চারপাশে ঘটে যাওয়া জীবন বাস্তবতার নানান প্রতিকীচিত্র। মরিয়ম জাহান-এর কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হবে রাজকথা সিরিজ নামে। এ সিরিজের প্রথম বই রাজকথা-১। বইয়ের নাম থাকছে শুভ্রার চুপকথা হবার গল্প।