সন্দেহবাতিক স্ত্রীর ক্রমাগত এবং অযৌক্তিক সন্দেহে একসময় বিক্ষুব্ধ হয়ে একজন অবসরপ্রাপ্ত চিকিৎসক একদিন খুব ভোরে সকলের অজান্তে সাময়িক নিরুদ্দেশে গিয়ে মহেশখালী দ্বীপ থেকে কক্সবাজার আসার পথে কালবৈশাখি ঝড়ে স্পিডবোট ডুবি হয়ে একসময় অচেতন অবস্থায় নিজেকে আবিস্কার করেন বঙ্গোপসাগরের অচেনা এক নির্জন দ্বীপের সৈকতে। খাবার পানি, খাদ্য, আশ্রয়বিহীন ঐ দ্বীপে পাঁচ সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে বেঁচে থাকার আপ্রান চেষ্টা শেষে একদিন এক মাছ ধরা ট্রলারের লোকজনের সহযোগিতায় তিনি উদ্ধার পেয়ে অনেক আশা নিয়ে ঢাকায় নিজ গৃহে ফিরে এসে টের পান ঐদিনই তাঁর মৃত্যুর চল্লিশ দিন পূর্তি উপলক্ষ্যে আয়োজন হচ্ছে চল্লিশার। সীমাহীন মনোকষ্ট, হতাশা ও অভিমান নিয়ে এবার তিনি দীর্ঘস্থায়ী নির্বাসনে অজানার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়েন। হঠাৎ করেই খাগড়াছড়ি শহর থেকে বেশ কিছুটা দূরে আদিবাসীদের ছোট এক পল্লী এবং সেখানকার সহজ সরল মানুষের আন্তরিকতা ভালো লেগে যাওয়ায় স্থায়ীভাবে সেখানে বসবাস করার ইচ্ছে নিয়ে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর চিকিৎসা ও তাঁদের শিশুদের লেখাপড়ায় বিশেষ অবদান রাখেন। নিজের ছেলেমেয়ে হারিয়ে এখানে আবার মমতা ও ভালবাসায় জড়িয়ে পড়েন আদিবাসী তরুনী রুক্মিণী ও তাঁকে উদ্ধার করা ট্রলারের সদস্য রুবেল নামে এক তরুনের। একসময় ওরা দু'জন দখল করে নেয় তাঁর সন্তানের জায়গা। কিন্তু ওদের পেয়েও তিনি কি আদৌ ভুলতে পেরেছেন নিজের আত্মজ ও আত্মজাকে? তাদের জন্য বুকের ভিতর লুকিয়ে রাখা ক্ষত থেকে এখনও কি রক্তক্ষরণ হয়? নিঃস্বার্থ পরোপকারী শফিক সাহেবের পরিচয় একসময় স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মাঝে এমনভাবে ছড়িয়ে পড়ে যে সবাই তাঁকে একজন সাধু পুরুষ মনে করে সেইভাবে ভক্তি শ্রদ্ধা করতে থাকে। জীবনের পড়ন্ত বেলায় অসংখ্য মানুষের ভালবাসা অর্জন করেও ভিতরে ভিতরে তিনি ছিলেন ভীষণ একা। তাঁর মন পড়ে থাকতো স্ত্রী সন্তান সহ এক নিরিবিলি গৃহকোনে। অনেককিছু পেয়েও সর্বহারা একজন মানুষ জীবনসায়াহ্নে কি ফিরে যেতে পেরেছিলেন তাঁর পরিবারের কাছে? পেয়েছিলেন তাঁদের সান্নিধ্য? পেশাগত জীবনে সফল কিন্তু দাম্পত্য জীবনে অসুখী একজন মানুষের জীবনের চড়াই-উৎরাইয়ের গল্প এই ক্ষত উপন্যাস যা পাঠককে একইসাথে মনে করিয়ে দেবে দেশীয় প্রেক্ষাপটে রবিনসন ক্রুসো-র কাহিনি এবং পরিচয় করিয়ে দিবে পাহাড়ি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অকৃত্রিম সরলতার সাথে।