কুন্ডেরার সাহিত্যকর্মগুলো মধ্যে তাঁর উপন্যাস The Unbearable Lightness of Being সবচেয়ে সুপরিচিত। ১৯৮৪ সালে লেখা এই উপন্যাসটির কাহিনি মূলত ১৯৬৮ সালে চেকোস্লোভাকিয়ার সংঘটিত প্রাগ স্প্রিং এর প্রেক্ষাপটে দুইজন নারী, দুইজন পুরুষ এবং একটি কুকুরের জীবনকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে চেকোস্লোভাকিয়ায় অব্যাহত সোভিয়েত নিয়ন্ত্রণকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন ১৯৬৮ সালে সদ্য নির্বাচিত হওয়া চেকোস্লোভাকিয়ার কমিউনিস্ট পার্টি প্রধান অ্যালেক্সান্ডার দুবচেক। তার সংস্কারের সূচনাই সুপরিচিত প্রাগ স্প্রিং (Prague Spring) নামে, যে সংস্কার আন্দোলনকে দমন করতে ১৯৬৮ সালে চেকোস্লোভাকিয়া আক্রমণ করেছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বে ওয়ারশ প্যাক্ট ভুক্ত রাষ্ট্রগুলো। গল্পটির ধারণাগত অনুধ্যান মূলত ফ্রিয়েডরিখ নিচাহর ইটারনাল রিটার্ন (চিরন্তন প্রত্যাবর্তন - Ewige Wiederkunft) ধারণাটিকে চ্যালেঞ্জ করেছে। এই প্রাচীন ধারণাটিকে নিচাহ পুনরুজ্জীবিত করেছিলেন চিন্তার একটি পরীক্ষা হিসেবে, যা দাবি করে, এই মহাবিশ্ব এবং এখানে সংঘটিত প্রতিটি ঘটনা ইতোমধ্যেই ঘটেছে এবং আবার ঘটবে অনন্তকালব্যাপী। কুন্ডেরা একটি ভিন্ন ধারণা প্রস্তাব করেছিলেন, যেহেতু প্রতিটি মানুষ একটি মাত্র জীবন পায় বাঁচার জন্য, এবং জীবনে যা কিছু ঘটে সেটি মাত্র একবারই ঘটে কখনো যার আর পুনরাবৃত্তি হয় না – আর সেই কারণে আমাদের অস্তিত্ব অর্থাৎ বেঁচে থাকার ভারহীনতা বা নির্ভারতা। উপরন্তু এই নির্ভারতা একই সাথে স্বাধীনতাকেও ইঙ্গিত করে। টমাস ও সাবিনা এই নির্ভারতা প্রদর্শন করে, অন্য দিকে তেরেজার চরিত্রে ভারের অস্তিত্ব টের পাই। নিচাহর চিরন্তন প্রত্যাবর্তন কিংবা পুনরাবৃত্তির ধারণাটি জীবনের উপর ভার আরোপ করে, নিচাহর ভাষায় জীবনকে ভারী করে তোলে, “ওজন” যুক্ত করে। নিচাহ মনে করতেন এই ভার হতে পারে দুঃসহ বোঝার মতো কিংবা অনেক উপকারী, আর সেটি নির্ভর করবে ব্যক্তিক দৃষ্টিভঙ্গির ওপর। উপন্যাসে নিচাহর ধারণাটি যুক্ত হয়েছিল একটি জার্মান প্রবাদের ব্যাখ্যার সাথে - einmal ist keinmal - অর্থাৎ একবার যা ঘটে সেটি উল্লেখযোগ্য নয়), হয় সবকিছু নয়তো কিছুই নয়, এই সংজ্ঞানত্মক বিকৃতি, তার বীরোচিত জীবনযাত্রায় যা টমাসকে জয় করতে হয়েছিল। সে প্রথমে বিশ্বাস করেছিল, যদি আমরা একটি মাত্র জীবন পাই বাঁচার জন্য, বলা যায় আমরা সেই জীবনটি আসলেই যাপনই করিনি, এবং বিশেষ করে তেরেজা প্রতি তার প্রতিশ্রুতিবদ্ধতার ক্ষেত্রে, তার কোনো সিন্ধান্তটি উত্তম সেটি পরীক্ষা করে দেখার কোনো উপায়ও তার হাতে নেই, কারণ এই জীবনের নেয়া সিন্ধান্ত পুনরাবৃত্তি হয় এমন জীবনে নেয়া অন্য সম্ভাব্য সিদ্ধান্তগুলোর সাথে তুলনা করে দেখারও উপায় নেই। এছাড়াও সহানুভূতি আর সহমর্মিতার কোনো ভিত্তি থাকে না। উপন্যাসটি মূলত সেই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে, এধরনের একটি জীবনের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধতা এমনকি সম্ভব এবং কাম্য।