মধ্যযুগে বাইরে থেকে আসা শাসক গোষ্ঠী রাজবংশের পত্তন করে এবং অবশেষে জেঁকে বসে ভারতবর্ষে। তাদের অভ্যাস, আচার-আচরণ, রীতিনীতি এবং ব্যক্তিগত জীভনযাত্রা গড়পড়তা ভারতীয়দের সরল ও সংযমী জীবন থেকে একেবারেই আলাদা ছিল। তাদের অনেক অভ্যাস এবং প্রথা ভারতীয় সমাজে অগ্রহণযোগ্য এবং বিরক্তিকর ছিল। তারা জাঁকজমক আর বিলাসব্যসনপূর্ণ জীবন যাপন করতেন। তাদের হারেমে থাকত শত শত সুন্দরী। যার হারেমে যত সুন্দরী তার মর্যাদা তত বেশি। বিভিন্ন জায়গা থেকে বাছাই করে আনা হত সুন্দরীদেরকে হারেমকে সমৃদ্ধশালী করে তোলার জন্যে। মুঘলদের প্রথা অনুযায়ী, পারিবারিকভাবে যাকে বিয়ে করা হত তিনি হতেন বেগম এবং প্রধান স্ত্রী। বাকিরা, যারা হারেমে থাকতেন, তাদের মর্যাদা ছিল গৌন। তারা পরিচিত হতেন দ্বিতীয় স্ত্রী বা উপপত্নী হিসেবে। হারেমের সুন্দরীদেরকে চার দেয়ালের মাঝে বন্দী থাকতে হত। বিশ্বস্ত খোজারা পাহারা দিত তাদেরকে। হারেম সুন্দরীদের পুরুষ বা বহিরাগত কারো সঙ্গে মিলিত হবার সুযোগ ছিল না। হারেমের অত্যন্ত কঠিন নিয়ম-নীতির মাঝে প্রায় নির্বাসিত ওইসব মেয়েদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠত। হারেমের মালিক হারেমের অসংখ্য সুন্দরীদের সবার প্রতি সমান নজর দিতে পারতেন না। শারীরিক চাহিদা মিটে গেলে মালিক অনেককেই নিতান্ত অবহেলায় দূরে সরিয়ে রাখতেন। অনেকেই অসম্মান আর দুর্দশার মধ্যে মানবেতর জীবন-যাপন করতে বাধ্য হত। অনেক মেয়ের বুকের গোপন বাসনা থাকত একদিন বিয়ে করে কারো বউ হবে, সন্তানের মা হবে, সম্মানের সাথে বাস করবে সমাজে। কিন্তু বেশিরভাগের স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যেত। উপপত্নীর দুঃসহ জীবনের বেড়াজাল ছিন্ন করার সুযোগ তারা পেত না। কঠিন নিয়ম-শৃঙ্খলার মাঝে থাকলেও হারেম ছিল গুজব-গুঞ্জনের প্রধান উৎস। হারেমে বসে চলত প্রাসাদ ষড়যন্ত্র, জন্ম নিত ভয়ঙ্কর সব স্ক্যান্ডাল। অনেক উপপত্নীকে দেখা গেছে পারিবারিক দ্বন্দ্বে সরাসরি জড়িয়ে পড়তে। তারা বহু প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত ছিল। তবে কেউ কেউ হারেমে থেকেই শীর্ষ অবস্থানে উঠে গেছে। একথা ভুলে গেলে চলবে না তারাও রক্তমাংসের মানুষ। তাদেরও সাধ-আহ্লাদ-কামনা-বাসনা ছিল। কাজেই তাদের স্ক্যান্ডালে জড়িয়ে পড়া বিচিত্র কিছু নয়। আর অতৃপ্ত এবং হতাশ মানুষ তো কত কিছুই করতে পারে। এ বইয়ে মুঘল বেগম, শাহজাদী এবং উপপত্নীদের ব্যক্তিগত জীবন যাপন, রাজনীতিতে তাদের প্রভাবসহ হারেমের অভ্যন্তরে যেসব ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটত, সে ব্যাপারে বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে। এই বেগম, শাহজাদী এবং উপপত্নীদের বেশিরভাগই প্রচণ্ড প্রভাব রাখতেন সম্রাট ও নবাবদের ওপর। এদের কারো কারো কারণে রাজনীতিতে সৃষ্টি হয়েছে নতুন ইতিহাস। এ বইয়ে উল্লিখিত চারজন শাহজাদী রাজনীতি, প্রশাসন ও সমাজে যে কি বিরাট ভূমিকা রাখতেন তা জেনে অবাক হয়ে যাবেন। মোট পনেরোজন শাহজাদী, বেগম ও উপপত্নীদের নিয়ে লেখা এ বং ইতিহাসের অজানা অধ্যায়কে উন্মোচিত করবে আপনাদের সামনে।
পাঠকনন্দিত অনুবাদক অনীশ দাস অপু ১৯৬৯ সালের ৫ ডিসেম্বর বরিশাল জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা প্রয়াত লক্ষ্মী কান্ত দাস। ১৯৯৫ সালে এই কৃতি লেখক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে সম্মানসহ স্নাতকোত্তর পাস করেন। ছাত্রাবস্থায়ই তিনি দেশের জনপ্রিয় ও শীর্ষস্থানীয় সাপ্তাহিক, পাক্ষিক ও মাসিক পত্রিকাগুলোতে অনুবাদক হিসেবে কাজ করতে শুরু করেন, এবং ফিচার, গল্প ও উপন্যাস অনুবাদ করতে থাকেন। অনীশ দাস অপু এর বইগুলো সাধারণত থ্রিলার ও হরর ধাঁচেরই হয়ে থাকে। তবে ক্লাসিক ও সায়েন্স ফিকশনেও অনুবাদেও পিছিয়ে নেই তিনি। অনীশ দাস অপু এর বই সমূহ এর মাঝে উল্লেখযোগ্য হলো থিংক অ্যান্ড গ্রো রিচ, আ স্ট্রেঞ্জার ইন দ্য মিরর (সিডনি শেলডন), দ্য স্কাই ইজ ফলিং (সিডনি শেলডন), সিলেক্টেড মিস্ট্রি স্টোরিজ (আলফ্রেড হিচকক), শ্যাডো অফ দ্য ওয়্যারউলফ (গাই এন স্মিথ), ইলেভেন মিনিটস (পাওলো কোয়েলহো), প্রেত, শাঁখিনী, কিংবদন্তীর প্রেত, আয়নাপিশাচ, পিশাচবাড়ি ইত্যাদি। এ পর্যন্ত তাঁর অনূদিত গ্রন্থের সংখ্যা প্রায় চার শতাধিক। অনীশ দাস অপু এর বই সমগ্র বাংলাদেশের থ্রিলার ও হরর পাঠকদের কাছে তুমুল জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। বাংলাদেশে পাশ্চাত্য ধারার হরর গল্প ও উপন্যাস লেখার ক্ষেত্রে তিনি যোগ করেছেন এক নতুন মাত্রা, পেয়েছেন তুমুল পাঠকপ্রিয়তা। নিজের মূল পেশা হিসেবে লেখালেখি বেছে নিলেও অনীশ দাস অপু যুক্ত আছেন সাংবাদিকতার সাথেও। ‘দৈনিক যুগান্তর’ পত্রিকার সিনিয়র সাব-এডিটর হিসেবে কাজ করেছেন এই কৃতি অনুবাদক ও লেখক।