“বঙ্গবন্ধু আজ যদি বেঁচে থাকতেন" বইটির ফ্ল্যাপ এর লেখাঃ একটি পরাধীন জাতিকে একক নেতৃত্বের বলে যিনি বহু কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা এনে দেন তিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, বাংলাদেশ রাষ্ট্রের মহান স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। শেখ মজিবুর রহমান বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা। তাঁর হৃদয় জুড়ে ছিল ছাপ্পান্ন হাজার। বর্গমাইলের সােনার বাংলা আর বাংলাদেশের মানুষ। এদেশের দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চিরদিন লড়াই-সংগ্রাম করে গেছেন হার-মানা এই অকুতােভয় বাঙালিনেতা। এক বুক দুঃসাহস, অনুপম দেশপ্রেম, ক্ষমা ও ঔদার্য ছিল। তার চারিত্রিকভূষণ। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে। দেশ-বিদেশের অনেকেই লিখেছেন এবং এখনও লিখছেন- তবে বরেণ্য লেখক-সাংবাদিক-কলামনিস্ট আবদুল গাফফার চৌধুরী যখন বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখেন তার লেখা সব সময়ই অনন্য আবেদন নিয়ে পাঠকের সামনে হাজির হয়। শেখ মজিব। যদি এ সময় বেঁচে থাকতেন’ গ্রন্থেও আবদুল গাফফার চৌধুরী শেখ মুজিবকে নিয়ে যা লিখেছেন, যেগুলাে পড়লে পাঠক চমৎকৃত হবেন এবং ঘটনার গভীরে ঢুকে উপলব্ধি করতে সক্ষম হবেন অনেক কৌতূহলােদ্দীপক বিষয়। বঙ্গবন্ধু একটি অসাম্প্রদায়িক শ্রেণিবৈষম্যহীন সােনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন, কিন্তু পারেননি। মাত্র পঞ্চান্ন বছরেই ঘাতকদের নির্মম। বুলেটে থেমে যায় তার মহাজীবনের গল্প । বঙ্গবন্ধু যদি আজ বেঁচে থাকতেন, তাহলে কেমন হতাে আমাদের দেশ, এখন তিনি কি ভাবতেন, সে বিষয়গুলােই বিশ্লেষণাত্মক দৃষ্টি দিয়ে পর্যবেক্ষণ করেছেন আবদুল গাফফার চৌধুরী। বিষয়-বৈচিত্র্য, ভাষার মাধুর্য এবং ঐতিহাসিক বাস্তবতার নিরিখে এই গ্রন্থটি বঙ্গবন্ধু বিষয়ক একটি আকরগ্রন্থ হিসেবে বিবেচিত হওয়ার দাবিদার।
আবদুল গাফফার চৌধুরীর জন্ম ১৯৩৪ সালের ১২ ডিসেম্বর বরিশাল জেলার উলানিয়া গ্রামে এক রাজনৈতিক পরিবারে। পিতা হাজী ওয়াহেদ রেজা চৌধুরী অবিভক্ত বাংলার বরিশাল জেলা কংগ্রেস কমিটি ও খেলাফত কমিটির সভাপতি ছিলেন। অসহযােগ আন্দোলনে তিনি কারাবরণ করেন । গাফফার চৌধুরী যখন চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র, তখন কবিতা লেখা শুরু করেন। ষষ্ট শ্রেণীর ছাত্র থাকাকালে কলকাতা থেকে প্রকাশিত দৈনিক নবযুগের ছােটদের পাতায় তার লেখা প্রথম ছাপা হয়। তারপর স্কুলের ছাত্র থাকা কালেই তার লেখা কলকাতার। সওগাত, ঢাকার সােনার বাংলা (অধুনালুপ্ত) পত্রিকায় ছাপা । শুরু হয় । এসএসসি পাশের পর তিনি ঢাকায় আসেন এবং সওগাত, মােহাম্মদী, মাহে লও, দিলরুবা প্রভৃতি মাসিক পত্রিকায় তার গল্প উপন্যাস ছাপা হতে থাকে। বাজারে তার বেশ কয়েকটি গল্প ও উপন্যাস, ছােটদের এডভেঞ্চার কাহিনী, প্রবন্ধ সংগ্রহ, স্মৃতিকথা রয়েছে এবং পাঠক সমাজে আদৃত হয়েছে। তিনি বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার, ইউনেস্কো পুরষ্কার, শেরেবাংলা পদক, বঙ্গবন্ধু পদক এবং একুশের পদক পেয়েছেন এবং বিদেশেও নানা সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। তিনি অমর একুশের গান-‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানাের’ রচয়িতা। বঙ্গবন্ধু-হত্যার উপর লেখা নাটক ‘পলাশি থেকে ধানমন্ডি’ দারুন জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। তিনি বহু সাহিত্য মাসিক, সাপ্তাহিক ও দৈনিক পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন । বেতার ও টেলিনাটক লিখেছেন। তবে বর্তমানে তিনি একজন সার্বক্ষণিক কলামিষ্ট । ঢাকায় চারটি জাতীয় দৈনিকে এবং লন্ডন ও নিউইয়র্কে একাধিক সাপ্তাহিক পত্রিকায় তার রাজনৈতিক বিষয়ে লেখা কলাম নিয়মিত প্রকাশিত হয়। তার কলাম দেশে-বিদেশে বাংলাভাষাভাষী পাঠকের কাছে দারুন জনপ্রিয়। গাফফার চৌধুরী এখন লন্ডনে বাস করেন। তিনি এক ছেলে চার মেয়ের পিতা। বঙ্গবন্ধুর জীবন নিয়ে একটি পূর্ণ দৈর্ঘ্য ছবি নির্মাণের কাজে তিনি এখন ব্যস্ত।