বাঙালি জাতির হাজার বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হলো মহান মুক্তিসংগ্রাম এবং সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন । বর্তমান শতাব্দীর প্রথমার্ধে বহু রাজনৈতিক উত্থান-পতনের ভেতর দিয়ে ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির মাধ্যমে পূর্ব বাংলা পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হয় । শুরু হয় পাকিস্তানের এই অঞ্চলে পাঞ্জাবিদের শাসন-শোষণের প্রক্রিয়া । বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাসে প্রবহমান ধারায় ১৯৭১ সালের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ সর্বশ্রেষ্ঠ ঘটনা । জাতিগত, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিকাশ প্রক্রিয়ার সুদীর্ঘ পথ অতিক্রমের পর স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতি সারা বিশ্বের নিকট একটি আত্মমর্যাদাসম্পন্ন জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে । ১৯৪৭-৭১ কালপর্ব আমাদের হাজার বছরের ইতিহাসের মহত্তম অধ্যায় । এই অধ্যায়ের প্রারম্ভিক পর্বে (১৯৪৭-৫৮) বাঙালি জাতীয়তাবাদের উন্মেষ ঘটেছিল । এই সময়কালে বাঙালি জাতীয়তাবাদী সংগ্রামের তথা আমাদের ভাষা, সংস্কৃতি, ইতিহাস ও ঐতিহ্যের লড়াই সুনির্দিষ্টরূপ পরিগ্রহ করে । এই পর্যায়ে এ – দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল ও সংগঠন সমূহের বিকাশ ঘটে । ১৯৪৭ সালের ধর্মভিত্তিক ভারত বিভক্তির ডামাডোলের ঘন অন্ধকারাচ্ছন্ন বৈরী পরিবেশের বিরুদ্ধে আমাদের সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক মুক্তির লড়াই শুরু হয় । বাঙালি জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক ধারার প্রাণপুরুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য নেতৃত্বে বাঙালির মুক্তিসংগ্রাম এক উত্তাল অগ্নিঝরা আন্দোলনের ভেতর দিয়ে চূড়ান্ত পর্যায়ে উপনীত হয় । পরিশেষে নয়মাস সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয় স্বাধীনতা । এই স্বাধীনতা সংগ্রামের উল্লেখযোগ্য তথ্য, ঘটনা পরিস্থিতি, অবস্থা এবং সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক বহু বিষয় নিয়ে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে খ্যাতিমানদের মননশীল, প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতালব্ধ রচনার এক ঋদ্ধ সংকলন এ – গ্রন্থ । ব্যক্তিগত ও যে কোন ধরনের পাঠাগারের জন্য একটি আকর্ষণীয় ও অনন্য গ্রন্থ– ‘সম্মুখ সমরে বাঙালি’ ।
রফিকুল ইসলাম (১৯৪৩-) চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর উপজেলার কলাকান্দা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। রফিকুল ইসলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে লেখাপড়া করেন। ভাষাতত্ত্বে উচ্চতর প্রশিক্ষণ ও গবেষণা সম্পাদনা করেন আমেরিকার কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়, মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়, মিশিগান-অ্যান আরবর বিশ্ববিদ্যালয় এবং হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইস্ট ওয়েস্ট সেন্টরে। তিনি ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন ও একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর বন্দীশিবিরে নির্যাতিত হন। ১৯৫৮ সাল থেকে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা ও নজরুল গবেষণায় নিয়োজিত রয়েছেন। ‘নজরুল নির্দেশিকা’, ‘ভাষাতত্ত্ব’, ‘নজরুল জীবনী’, ‘শহীদ মিনার’, ‘বাংলা ভাষা আন্দোলন’, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮০ বছর’, ‘অ্যান ইন্ট্রোডাকশন টু কলোকোয়্যেল বেঙ্গালি’ প্রভৃতি তাঁর উল্লেখযোগ্য বই। স্বাধীনতা পুরস্কার, একুশে পদক এবং বাংলা একাডেমি পুরস্কারসহ তিনি আরো অসংখ্য সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন।