"ভারত মহাসাগর ভারত-চীন দ্বন্দ্ব" বইটির প্রথম ফ্ল্যাপ-এর লেখাঃ আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ভারত মহাসাগর ক্রমশই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। একদিকে চীন ও ভারত, অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র- মূলত এই তিনটি দেশের গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে। বলা হচ্ছে ভারত মহাসাগরে প্রভাব বলয় বিস্তারের রাজনীতি নতুন করে স্নায়ুযুদ্ধের জন্ম দেবে, যা আন্তর্জাতিক রাজনীতির বিশ্লেষকরা স্নায়ুযুদ্ধ-২ নামে অভিহিত করেছেন। এই প্রভাব বলয় বিস্তারের রাজনীতিতে চীন ও ভারতের মধ্যকার দ্বন্দ্ব একুশ শতকে এ অঞ্চলের রাজনীতিতে বড় প্রভাব ফেলবে। চীন অর্থনৈতিকভাবে অত্যন্ত শক্তিশালী একটি দেশ। চীনের বর্তমান নেতৃত্ব ওয়ান বেল্ট ওয়ান রােড এর এক মহাপরিকল্পনা নিয়ে এ অঞ্চলের দেশগুলােকে এক পতাকাতলে আনতে চাইছে। চীন মূলত তার জ্বালানি চাহিদা নিশ্চিত করার স্বার্থে ভারত মহাসাগরে তার নৌবাহিনীর উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায়। বিশেষ করে ভারত মহাসাগরে বেশ কয়েকটি ‘চেক পয়েন্ট রয়েছে, সেই পয়েন্টগুলাে দিয়ে চীনে জ্বালানি তেল সরবরাহ করা হয়। এটা বিবেচনায় নিয়েই চীন ভারত মহাসাগরের সিসিলিসে একটি নৌ ঘাঁটি প্রতিষ্ঠা করেছে। অন্যদিকে দক্ষিণ চীন সাগর এলাকায় বিপুল তেল ও গ্যাসের রিজার্ভ চীনের সামরিক উপস্থিতি নিশ্চিত করেছে। স্ট্রাটেজিকালী দক্ষিণ চীন সাগরের গুরুত্ব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকেও এ অঞ্চলের ব্যাপারে আগ্রহী করে তুলেছে। চীনের এই উদ্যোগ ভারতকেও চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। ভারত যুক্তরাষ্ট্রের সাথে কৌশলগত সামরিক সম্পর্ক স্থান, করে ও তার প্রাচীন কটন রুটকে পুনরুজ্জীবিত করে চীনের প্রভাবকে সংকুচিত করতে চায়। মূলত চীন ও ভারতের মধ্যকার এই দ্বন্দ্ব, দ্বন্দ্বের পরিণতি, বিভিন্ন তথ্য ও উপাত্তের মাধ্যমে বর্তমান গ্রন্থটিকে আলােচনা করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নিয়ে যারা আরাে জানতে চান, তাদের জন্য গ্রন্থটি সংগ্রহে রাখার মতাে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান এবং অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমান এর বই সমূহ আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও কূটনীতির চমৎকার বিশ্লেষণী পাঠ। ‘বিশ্ব রাজনীতির ১০০ বছর’ তার সবচেয়ে জনপ্রিয় বই। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, বিভিন্ন দেশের পররাষ্ট্রনীতি, বিশ্ব রাজনীতিতে পরাশক্তিগুলোর স্বার্থ ও দ্বন্দ্ব, ভূ-রাজনীতির অতীত ও বর্তমান- এসব বিষয়ে তার বিশ্লেষণাত্মক লেখার তুলনা নেই। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক এ সদস্য গত দুই দশকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, বিভিন্ন দেশের পররাষ্ট্রনীতি, কূটনীতি ও বৈদেশিক সম্পর্কের বিভিন্ন দিক নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সব গবেষণা করেছেন। এসব গবেষণার ভিত্তিতে এ সকল বিষয়ে চমৎকার তথ্যবহুল কিছু বইও রচনা করেছেন তিনি। এছাড়াও তুলনামূলক রাজনীতি নিয়েও দীর্ঘদিন গবেষণা করেছেন, লিখেছেন বইও। তার লেখালেখি কেবল বইয়ের ভেতরেই সীমাবদ্ধ নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা আর অন্যান্য কাজের পাশাপাশি তিনি নিয়মিতই গুরুত্বপূর্ণ দেশীয় ও আন্তর্জাতিক প্রসঙ্গে জাতীয় দৈনিকগুলোতে কলাম লেখেন। গবেষণার কাজে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করে বেড়ানো তারেক শামসুর রেহমানের অভিজ্ঞতার ঝুলিও তাই সমৃদ্ধ, রয়েছে আন্তর্জাতিক নামডাকও। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের আইভিপি ফেলো। ড. তারেক শামসুর রেহমান এর বই সমগ্র একদিকে যেমন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের জন্য মৌলিক পাঠ, অন্যদিকে বিশ্ব রাজনীতি ও কূটকৌশল সম্পর্কে জানতে আগ্রহীদের জন্যও উপযোগী। ‘আন্তর্জাতিক রাজনীতি কোষ’, ‘মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি’, ‘বাংলাদেশের নিরাপত্তা ভাবনা’, ‘নয়া বিশ্বব্যবস্থা ও সমকালীন আন্তর্জাতিক রাজনীতি’, ‘বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি’, ‘দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার রাজনীতি’, ‘বাংলাদেশের পূর্বমুখী রাজনীতি’, ‘রাজনীতি ২০০৯’, ‘নির্বাচিত প্রবন্ধ সংকলন’, ইত্যাদি তার পাঠকপ্রিয় বইগুলোর মাঝে উল্লেখযোগ্য।