বাংলার লোকসংস্কৃতি অঙ্গনের কৃতী গবেষক ড. মুহম্মদ আবদুল জলিল। শেকড় সন্ধানী সংস্কৃতির ধারক-বাহক হিসেবেই তাঁর অধিকতর পরিচিতি। মৃত্তিকা সংলগ্ন জনজাতির পরিচয় সন্ধানে তাঁর জুড়ি মেলা ভার। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। নতুন এই বিদ্যাশৃঙ্খলাকে সমৃদ্ধ করার উদ্দেশ্যে তিনি একের পর এক ফোকলোর বিষয়ক গবেষণা গ্রন্থ প্রণয়ন করেছেন। এক্ষেত্রে তাঁর উল্লেখযোগ্য অবদান হিসেবে রয়েছে লোকসাহিত্যের নানা দিক (১৯৯৩), বাংলাদেশের উত্তর অঞ্চলের মেয়েলীগীত (১৯৯৩), লোকসংস্কৃতির নানা প্রসঙ্গ (১৯৯৫), উত্তরবঙ্গের লোকসঙ্গীত (২০০১), লোকসংস্কৃতির অঙ্গনে (২০০১), লোকচিকিৎসায় তন্ত্রমন্ত্র (২০০১), বাংলার ফোকলোর মণীষা (২০০৬), বাংলার লোকায়ত সংস্কৃতি (২০১২), বাংলার লোকায়ত সংস্কৃতি : লালন-রবীন্দ্রনাথ (২০১৩), রংপুর অঞ্চলের লোকছড়া (২০১৩) প্রভৃতি গ্রন্থ। তিনি শুধু লোকসাহিত্যের মধ্যেই তাঁর কর্মড়্গত্রে সীমাবদ্ধ রাখেননি লোকশিল্পের অবরুদ্ধ গবেষণার দ্বারকেও উন্মোচিত করেন। লোকবিজ্ঞান ও লোকপ্রযুক্তি (২০০৪), রাজশাহী অঞ্চলের মৃৎশিল্প : সখের হাড়ি (২০০৬) বস্তুধর্মী ফোকলোর জগতের অসামান্য সংযোজন। লালনের মনের কথা (২০১৯) মূলত তাঁর হৃদয়উৎসারিত অনির্বচনীয় বাণীর ব্যাখ্যা-বিশেস্নষণ সমৃদ্ধ দুর্লভ গ্রন্থ। কোনো সাধনাই যে বৃথা যেতে পারে না ড. মুহম্মদ আবদুল জলিল তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। ফোকলোরে সামগ্রিক অবদানের জন্য জাতীয় প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমি ২০২২ সালে তাঁকে পুরস্কারে ভূষিত করেন। জাতীয় পুরস্কার উত্তর তাঁর প্রথম গ্রন্থ ‘লোকসংস্কৃতির বিচিত্র ভুবনে’। এ গ্রন্থে তিনি বাংলার বিচিত্রমুখী সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বরূপ সন্ধানে তৎপর হয়ে উঠেছেন। সর্বোপরি বাংলার অধ্যাত্ববাদী সাধক লালন ফকির, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিশ্বনন্দিত নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই তিন বিখ্যাত মণীষীকে সাংস্কৃতিক সাজুয্যে অভিন্নসূত্রে বন্ধনপ্রয়াসী হয়েছেন। তাঁর এই মহত্তর প্রয়াস ব্যতিক্রমধর্মীতার গুণে অসামান্যতা লাভ করেছে। আমাদের বিশ্বাস গ্রন্থখানি ফোকলোর অনুরাগী পাঠক-গবেষকদের কিছুটা হলেও কর্মপ্রেরণায় উৎসাহিত ও অনুপ্রাণীত করবে।