মুখবন্ধ এই সংকলনে অনেকগুলি ঋজুদা কাহিনীই সংকলিত হল। এর মধ্যে গােয়েন্দা কাহিনী যেমন আছে তেমন আছে অ্যাডভেঞ্চার ও শিকার কাহিনীও।
‘ডেভিলস আইল্যান্ড’ আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে ঋজুদা ইন ফুল-স্ট্রেন্থ, অর্থাৎ রুদ্র, তিতির এবং ভটকাইকে সঙ্গে নিয়ে গিয়ে পৌঁছেছেন। সেখানে, একসময়ের জলদস্যুদের ডেরা ‘ডেভিলস আইল্যান্ড’ ও অ্যাডভেঞ্চার কাহিনী।
‘ঋজুদা এবং ডাকু পিপ্পাল ভাঁড়ে’ ঝাড়খণ্ড-এর হাজারিবাগ জেলার সীমারিয়া-টুটিলাওয়ার জঙ্গলে এক ডাকাতের সঙ্গে ঋজুদাদের এনকাউন্টারের কাহিনী। | ‘ঝিঙ্গাঝিরিয়ার মানুষখেকো মধ্যপ্রদেশের দুর্গমতম অঞ্চল ‘ব্যায়রান’-এর কাছে ঝিঙ্গাঝিরিয়াতে একটি মানুষখেকো বাঘ শিকারের গল্প। সেখানে ঋজুদার সঙ্গে শুধুমাত্র রুদ্রই ছিল।
‘জুজুমারার বাঘ’ এবং হুলুক পাহাড়ের ভালুক’ ঋজুদার নিজের বলা শিকার কাহিনী। এতে তার চেলাদের প্রত্যক্ষ ভূমিকা নেই। জুজুমারা, ওড়িশার সম্বলপুরের সম্বলপুর-রেঢ়াখােলের পথের পাশে একটি জঙ্গলাবৃত জায়গা আর হুলুক পাহাড় ঝাড়খণ্ডের পালামৌ জেলার মারুমারের একটি উঁচু পাহাড়।
‘অরাটাকিরির বাঘ’ ওড়িশার কালাহান্ডি জেলার অরাটাকিরি গ্রাম-সংলগ্ন এলাকাতে বিচরণকারী একটি মানুষখেকো বাঘ শিকারের গল্প। সেখানে তিতির যেতে পারেনি।
‘মােটকা গােগােই’ আসামের কাজিরাঙ্গা অভয়ারণ্যের মধ্যে একশৃঙ্গ গণ্ডার-মারা চোরা শিকারিদের সঙ্গে ঋজুদা, রুদ্র এবং ভটকাই-এর টক্করের কাহিনী
একটি কথা জোর দিয়ে বলা দরকার যে ঋজুদাকাহিনীর একটিও পটভূমি কল্পিত নয়। এগুলির একটিও যাকে বলে, কষ্ট-কল্পিত গাল-গল্প, তা নয়। এগুলি পড়লে ভারতের নানা রাজ্যতাে বটেই বিদেশের নানা জায়গাতে বেড়ানাে যেমন হয় তেমন স্বদেশের প্রতি ভালবাসা, ন্যায়বােধ এবং সাহসও জন্মায়। কিশাের কিশােরীদের রুচি উন্নত হয়, সুন্দর হয় এবং তারা শেখেও অনেক কিছু। তাদের চরিত্র এবং রসবােধ গড়ে ওঠে।
বুদ্ধদেব গুহ একজন ভারতীয় বাঙালি ঔপন্যাসিক ও সংগীতশিল্পী। তিনি ১৯৩৬ সালের ২৯ জুন কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। বন, অরণ্য ও প্রকৃতিবিষয়ক লেখার মাধ্যমে পাঠকহৃদয় জয় করে নেওয়া এই লেখকের জীবন অভিজ্ঞতা ও বৈচিত্র্যে পরিপূর্ণ। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে তিনি পড়াশোনা শেষ করেন। এরপর নিয়মিত লেখালেখি শুরু করেন। তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘জঙ্গলমহল’। রচনাশৈলীর অনন্যতা ও স্বাতন্ত্র্য তাকে বাঙালি পাঠকের অন্যতম প্রিয় লেখকে পরিণত করেছে। বুদ্ধদেব গুহ কবিতা, ছোটগল্প ও উপন্যাস রচনা করেছেন, যা তাকে খ্যাতির চূড়ায় নিয়ে গিয়েছে। তাঁর সৃষ্ট বিখ্যাত চরিত্র ঋজুদা যেন তাঁর মতোই পরিব্রাজক। সে বনে-জঙ্গলে ঘুরে বেড়ায় তার সঙ্গী রুদ্রকে নিয়ে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করে আসা এই লেখক অরণ্যকে যেমন তাঁর লেখার এক মূল আধেয় হিসেবে ধরে নিয়েছেন, তেমনই তাঁর লেখাগুলোর পটভূমিও ছিল পূর্ব বাংলার গহীন অরণ্য। এর সাথে তিনি সমাজের উচ্চ-মধ্যবিত্ত শ্রেণীর জীবনযাপন তাঁর লেখনীতে তুলে ধরেছেন, যা তাকে খুব সহজেই খ্যাতির পাত্রে পরিণত করে। বুদ্ধদেব গুহ প্রেমের উপন্যাস রচনা করেছেন বেশ কয়েকটি। এর মাঝে ‘হলুদ বসন্ত’ অন্যতম। বাংলা কথাসাহিত্যে এমন রোমান্টিসিজমের সংযোজন খুব কম লেখকই করতে পেরেছেন। পাঠকনন্দিত বুদ্ধদেব গুহ এর উপন্যাস সমগ্র হলো ‘মাধুকরী’, ‘একটু উষ্ণতার জন্য’, ‘নগ্ন নির্জন’, ‘অববাহিকা’, ‘পরদেশিয়া’, ‘সবিনয় নিবেদন (পত্রোপন্যাস)’, ‘আলোকঝারি’ ইত্যাদি। ছোটদের জন্য লিখেছেন ‘ঋজুদা’ সিরিজ। তাঁর রচিত ‘মাধুকরী’ উপন্যাস একইসাথে বিতর্কিত ও তুমুল জনপ্রিয়। বুদ্ধদেব গুহ এর বই সমগ্র শুধু উপন্যাস হিসেবে নয়, নগর ও অরণ্যের স্তুতি হিসেবে পাঠকের কাছে ভালোবাসার স্থান পেয়েছে। লেখালেখির পাশাপাশি তিনি একজন চার্টার্ড একাউন্ট্যান্ট এবং একজন নামকরা সঙ্গীতশিল্পীও বটে। বুদ্ধদেব গুহ এর বই সমূহ থেকে নির্মিত হয়েছে একাধিক টিভি অনুষ্ঠান ও চলচ্চিত্র। ১৯৭৭ সালে তিনি আনন্দ পুরস্কার পান। তাঁর রচনার জন্য তিনি বাংলা কথাসাহিত্যে এক মাইলফলক তৈরি করেছেন।