Sort

Reset Sort

Filter

Reset Filter

Shop by Categories

By Publishers

Price

Languages

Discount

Ratings

Bivutivushon Mukhopadhay books

followers

বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায়

Bibhutibhushan Mukhapadhaya - হাস্যরসের ছোটগল্পের পশরা নিয়ে ১৯৩০-এর দশকে বাংলা সাহিত্যে আবির্ভূত হয়েছিলেন বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায় (১৮৯৬-১৯৮৭)। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই বোঝা গিয়েছিল যে, হাস্যরস তাঁর রচনার মূল উপাদান হলেও তার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে কারুণ্য। জীবনকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেছিলেন তিনি। মানুষের স্বভাবজ খেয়ালিপনা ও আচরণগত অসংগতিতে যেমন তিনি হাসির খোরাক পেয়েছেন, তেমনি জীবনের নানা ক্ষেত্রে বিচিত্র দ্বন্দ্ব-সন্ধি থেকে উচ্ছ্বসিত বেদনারও সন্ধানলাভ করেছেন। তার রচনায় তাই হাস্য ও করুণের এমন মেশামেশি। তাঁর অবিস্মরণীয় চরিত্র রাণু যেমন পড়াশোনায় ফাঁকি দেওয়ার নিত্যনতুন ফন্দি এঁটে আমাদের হাসির উদ্রেক করে, তেমনি তার বাল্যবিবাহের কালে শৈলেনকাকার কাছে আত্মশুদ্ধির অঙ্গীকার করে আমাদের চোখ অশ্রুসজল করে দেয়। নীলাঙ্গুরীয় (১৯৪২) বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায়ের প্রথম উপন্যাস। এর রচনাপ্রণালি কিন্তু সম্পূর্ণতই ভিন্ন। উপন্যাসটির উপজীব্য প্রেম। কিন্তু উপন্যাসের প্রথমেই নায়কের জবানিতে লেখক প্রশ্ন উত্থাপন করেন: ‘ভালবাসা কি সব সময়েই তাহার সেই চিরন্তন রূপেই দেখা দিবে?Ñসেই আবেগ-বিহ্বল কিংবা অশ্রুসজল? ঘৃণা কি সব সময়েই ঘৃণা?’ তারপর কাহিনির কথক জানিয়ে দেন: ‘ভালবাসায় গরল থাকিতে পারে। অন্তত আমার বেলা তো ছিল।’ উপন্যাসটি এই গরলামৃতের কাহিনি। বস্তুত অন্যত্রও বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায় প্রেমকে দেখেছেন একটি জটিল বৃত্তিরূপে। তার সঙ্গে ঈর্ষা, বিদ্বেষ, ঘৃণা, পীড়নস্পৃহাÑসবই জাড়িয়ে থাকতে পারে। প্রায় সকল বিষয়ে উদাসীন ব্যারিস্টার রায়ের কনিষ্ঠ কন্যা তরুর গৃহশিক্ষকরূপে এই অভিজাত পরিবারে শৈলেনের আশ্রয়লাভ ঘটে। তরুর দিদি মীরার তত্ত্বাবধানের মধ্যে প্রভূ-ভৃত্যের সম্পর্ক আভাসিত হলে শৈলেনের মন বিদ্রোহ করে। কিন্তু অচিরেই সে মীরার রহস্যপরায়ণ আচরণের মধ্যে প্রেমের দ্যোতনা উপলব্ধি করে এবং মীরার প্রতি নিজের আকর্ষণও সবিস্ময়ে আবিস্কার করে। দুজনের সনামাজিক অসমকক্ষতা সম্পর্কে দুজনেই সচেতন। তার উপরে মীরার প্রকৃতিরমধ্যে আছে আভিজাত্যের অভিমান আর শৈলেনের চারপাশে রয়েছে নিজের অবস্থা বৈগুণ্যজনিত আত্মরক্ষা প্রবৃত্তির স্বরচিত দেওয়াল। ফলে আবেগ ও উচ্ছ্বাসের জায়গা প্রায়ই নিয়ে নেয় দ্বন্দ্ব ও সংঘাত। নায়ক-নসায়িকার অসাধারণ সংযম ও আত্মমন উভয়ের মধ্যে চিরবিচ্ছেদ ঘটিয়ে উপন্যাসকে সম্পূর্ণ ভিন্নরূপ দান করে। মীরার সঙ্গে তার সম্পর্ককে শৈলেন বারংবার ‘ঘৃণায়-মেশানো ভালবাসা’ বলে উল্লেখ করেছেনÑতা নীলকান্তমণির মতোই নীল, তার মতোই খাঁটি। সে এই গরলামৃত পান করেছে, জন্মজন্মান্তর ধরে সেই গরলামৃত পান করার কামনাই ব্যক্ত করেছেÑমীরার সঙ্গে মিলনের আকাক্সক্ষা প্রকাশ করেনি। মীরার আচরণের ব্যাখ্যায় তার মা বংশগতির প্রভাবের কথা বারবার বলেছেন। সেটাই হয়তো সব নয়। তার হৃদয়াবেগ ও ঔচিত্যবোধের স্পষ্ট দ্বন্দ্বের মধ্যে অনেকখানি দুর্জ্ঞেয়তা রয়ে গেছে। শৈলেনকে সে কেমনভাবে দেখেছে, তা আমরা জানতে পারি না। কেননা গোটা উপাখ্যানই শৈলেনের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা। উপন্যাসটির তিনটি ভাগ: ‘মীরা’, ‘মীরা-সৌদামিনী’ ও ‘সৌদামিনী’। সৌদামিনী অনিল ও শৈলেনের বাল্যবন্ধু। দুজনের একজনের সঙ্গে তার সম্পর্কটা গভীরতর হতে পারত। অনিল যে তাকে কামনা করেছিল, তা বোঝা যায়। শৈলেন বরঞ্চ ছিল কিছুটা উদাসীন। কিন্তু উদাসীনের প্রতিই সৌদামিনীর আকর্ষণ ছিল অধিক। একমাত্র অভিভাবক দিদিমার মৃত্যুর পরে ভগবত হালদার উপযাচক হয়ে সৌদামিনীকে নিজের বাড়িতে নিয়ে আসেÑতা কেবল পরোপকারবৃত্তির বশবর্তী হয়ে নয়। পরে সে সৌদামিনীর বিয়ে দিয়ে দেয় তার বৃদ্ধ কুটুমের সঙ্গে। অনিল তখন স্ত্রীপুত্র নিয়ে সংসারী, কিন্তু সৌদামিনীকে ভোলেনি। সে তার বৈধব্য কামনা করে এবংমীরার প্রতি শৈলেনের ভালোবাসা নিষ্ফল হবে ধরে নিয়েইসে শৈলেনকে বলে বিধবা সৌদামিনীকে বিয়ে করতে, নইলে তাকে আবার ভাগবতের নরকেই ঢুকতে হবে। সৌদামিনীর সঙ্গে আলাপে শৈলেন টের পায় যে, তার প্রতি সৌদামিনীর আকর্ষণ এখনো অটুট। সৌদামিনী যথার্থই বিধবা হয়, ভাগবতের আশ্রয় থেকে উদ্ধার হয় না, পরে সে চলে যায় সিনেমার জগতে অনিলের কাছে তা মরণসমান। শৈলেন বলেছে, সৌদামিনী তাকে খাঁটি সোনা দিতে চেয়েছিল, কিন্তু সে তা নিতে পারেনি, কেননা নিখাদ সোনা নিতে হয় নিখথাদ সোনা দিয়েই, শৈলেনের সুবর্ণ তো আগেই দেওয়া হয়ে গিয়েছিল মীরাকে। মীরার ভখালোাবাস যে কী, সে-ব্যাখ্যা তো আগই দেওয়া হয়েছে। মীরা শৈলেনের কাছে অনুযোগ করেছিল: ‘বলুন... আমার সর্বনাশের মধ্যে থেকে আমায় কেন জোর ক’রে টেনে নিলেন না?... কেন? এই প্রশ্নের উত্তর হয়তো শৈলেন আগে দিয়েছিল: ‘আমি তোমায় সুখী করতে পারতাম না, কিন্তু আমি দুর্বল, মন স্থির করে উঠতে পারছিলাম না।’ সৌদামিনীও হয়তো একই প্রশ্ন করতে পারতো শৈলেনকে। শৈলেন হয়তো তাকে রক্ষা করার চেষ্টা না করার অপরাধ স্বীকার করে নিতো মাত্র। নীলাঙ্গুরীয় তবু ত্রিভুজ প্রেমের উপন্যাস নয়, একান্তই মীরা-শৈলেনের প্রেমের কাহিনি। সৌদামিনীর মধ্য দিয়ে প্রেমের অন্য একটি রূপ প্রকাশিত হয়েছে। মাত্র। নায়ক-নায়িকা ছাড়াও সৌদামিনী, অলি, অম্বুরী, সরমা, তরুর চরিত্রাঙ্কণে সিদ্ধহস্তের ছাপ বিদ্যমান। মিস্টার রায় কতকটা ছাঁচে ঢালা, তবে সর্বত্র অসাধারণত্বের পরিচয় পাওয়া যায় অপর্ণ রায়ের চরিত্রে। উপন্যাসের বর্ণনা আগাগোড়াই সংযত। তবে আবেগের যথাযথ স্থানও আছে এতে। প্রায় নিরুদ্দিষ্ট পুত্রকে নিয়ে অপর্ণা দেবীর আবেগ, বৃদ্ধা ভুটানির মর্মন্তুদ হাহাকার, শৈলেনের অন্তর্জগতের কোলাহল অনিলের অসহাত্ববোধ এসব তার উদাহরণ। শৈলেনের মর্মভেদী কৌতুক উপন্যাসের ট্রাজেডিকে গভীরতা দিতে সাহায্য করেছে। নীলাঙ্গুরীয় কেবল বিভুতিভূষণ মুখোপাধ্যায়ের নয়, বাংলা সাহিত্যের একটি শ্রেষ্ঠ উপন্যাস। আনিসুজ্জামান, বাংলা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায় এর বই সমূহ

(Showing 1 to 29 of 29 items)

Recently Viewed