প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
follower
সাইফ মাহমুদ এর স্মৃতিকথা 'প্রিয় শিক্ষক
সাইফ মাহমুদ ঢাকা থিয়েটারের একজন নেপথ্য কর্মী। ঢাকা থিয়েটারে সে সাইফু নামে পরিচিত। দীর্ঘ তিন দশকেরও বেশী সময় ধরে এ নাট্যদলের সাথে জড়িত। দলের নেপথ্য কাজের পাশাপাশি সে অভিনয় করতে আগ্রহী ছিলো। কিন্তু 'হাতহদাই' নাটক ছাড়া অন্য কোন নাটকে অভিনয়ের তেমন কোন সুযোগ মেলেনি তার। হাতহদাই নাটকে মঞ্চে তার ব্যর্থতা দলের মধ্য হাস্যরসের বিষয় হয়ে উঠেছিলো। আমিও ব্যক্তিগতভাবে একজন ব্যর্থ অভিনেতা। ১৯৭২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নাট্যচক্রের 'এক্সপ্লোসিভ ও মূল সমস্যা' নাট্যাভিনয়ে আমার চরম ব্যর্থতা ও ঢাকা থিয়েটারের 'কেরামত মঙ্গল নাটকে আমার করুণ অভিনয় আমাকে এ প্রবোধ দেয় যে অভিনয় তোমার স্থান নয়।পরিচালনা তোমার মূল কর্মক্ষেত্র হতে পারে। তো তাই হয়েছে। যাক সে কথা। সাইফ মাহমুদের প্রসঙ্গে ফিরে আসি। অভিনেতা হিসাবে নয় দলের একজন বলিষ্ঠ কর্মী হিসাবে সে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছিলো। তো সাম্প্রতিক সময়ে সাইফ পেশাগত ব্যস্ততার কারণে সরাসরি সাংগঠনিক কাজ করতে না পারলেও নানা ভাবে দলের কর্মকান্ডে সহযোগিতা ও অংশ নিয়ে থাকে। সাইফ মাহমুদ রচনা করেছে ‘প্রিয় শিক্ষক ' স্মৃতিকথা। আমি তার রচনার কথা শুনে একটু বিস্মিত হলাম। কারণ তার বাচিক ভাষারীতি শিল্প সাহিত্যের জন্য সহায়ক নয়। তো লেখ্যটা কেমন হবে! এরকম একটা দ্বিধা আমার ছিলো। কিন্তু 'প্রিয় শিক্ষক' পাঠে সে শঙ্কা কেটে গেছে আমার। ঝরঝরে গদ্য। যদিও কিছুস্থানে কথ্য রীতির প্রভাব লক্ষ্যনীয়। তারপরও ‘প্রিয় শিক্ষক' আমার কাছে একটি সুখপাঠ্য রচনা। প্রথমেই বলতে হয় সাইফের বিচিত্র ঘটনায় ভরপুর শৈশব ও কৈশোর। গতশতকের সাত ও আটের দশকের বাংলাদেশের ছোট্ট একটি প্রাচীন শহর ফেনী'র মানুষ ও তাদের জীবন যাপন এবং সাইফের বেড়ে ওঠা এ কথনের মূল উপজীব্য । শিক্ষক,পরিবার ও আত্মীয় স্বজনদের পারস্পরিক প্রেম-অপ্রেম ও ভালোবাসার সম্পর্ক স্বপ্নজালের মত পাঠককে স্মৃতিকাতর করে তুলবে। সাইফের কৈশোর ও যৌবনের প্রারম্ভিক কালের স্মৃতি তার লেখনী স্বপ্নবাস্তবতার জগতে আমাদের নিয়ে যায়। কঠিন হৃদয়ের পিতা যখন সন্তান শোকে গড়া গড়ি দিয়ে পুত্রের জন্য রোদন করে তখন আমরা উপলব্ধি করবো পিতৃ শাসনতো সন্তানকে মানুষ হিসাবে গড়ে তোলার জন্য। শিক্ষকদের নানা ধরণের আচরণ অকপটে সাইফ লিখতে পেরেছে। যে আচরণ মাঝমাঝে নিষ্ঠুর মনে হয়েছে। কিন্তু শিক্ষকের প্রতি শ্রদ্ধার কমতি ঘটেনা। আমরাও সাইফের মত শিক্ষককে শ্রদ্ধা করি ও ভালোবেসে ফেলি। খালা ও বোনদের সাথে যে মধুর সম্পর্ক সাইফের স্মৃতিগদ্যে উঠে এসেছে তা এক অনাবিল শান্তির প্রলেপ এনে দেয় আমাদের মনে। মা ও পরিবার ভক্ত সাইফ তার ভালেবাসা নিয়ে যে গৌরব করেছে তা বাঙালি মধ্যবিত্তের স্নেহ-মমতার সংস্কৃতিরই প্রকাশ। যৌবনের প্রারম্ভে ফেনীর সংলাপ নাট্যদলের সাথে জড়িত হওয়া রাজনীতির সংস্পর্শে আসা সকল কিছু সংক্ষেপে এ স্মৃতিগ্রন্থে ঠাঁই পেয়েছে। ঢাকা থিয়েটারের সাথে তার সংপৃক্ত হওয়া এবং এখন পর্যন্ত সেই দলের অংশীজন হয়ে থাকা, এ বয়ানও তার মত করে লিখেছে।যদিও সকল কথা লেখেনি হয়তো। সব কথা লেখা যায়না। কিছু কথা আড়াল করতে হয়। সাইফ তাই করেছে। হয়তো অনেকের সাথে এ বয়ান মিলবেনা। কিন্তু স্মৃতি কথাতো ব্যাক্তির অভিজ্ঞতা, আবেগ ও মননের প্রকাশ। আর একেকজন একেক ভাবে একই ঘটনার অভিজ্ঞতা নিয়েছে। সবার অভিজ্ঞতা একরকম হবে তাতো নয়। তাই সাইফের বয়ান সাইফেরই বয়ান।আমি নিজেও দলের অনেক ঘটনা সম্পর্কে জ্ঞাত নই। বা একই ঘটনার ব্যখ্যা আমার কাছে ভিন্ন। তাই দলের বিষয়ে সাইফ মাহমুদের যে আবগ ও অভিজ্ঞতা তা একান্তই তার। তবে সাইফের কৈশোর ও স্কুল জীবন আমাকে আপ্লুত করেছে। তার শিক্ষকদের রুদ্র মূর্তি আমাকে শিক্ষকদের প্রতি বিরাগ করেনি। উল্টো এক ধরণের মায়া ও শ্রদ্ধা জাগিয়েছে আমার হৃদয়ে। যে কৈশোর, যে জীবন আমরা ফেলে এসেছি সে কৈশোর, সে জীবনে আর কোনদিন ফিরে যাওয়া যাবেনা। কিন্তু স্মৃতির ডানায় ভর করে ফেলে আসা দিনগুলি মন দিয়ে স্পর্শ করতে পারি। আর তখনি আমরা আবেগে অশ্রু সজল বা আনন্দে উদ্বেলিত হই। সাইফ মাহমুদ তার লেখনীতে সোনালী কৈশোর হাজির করে পাঠকেকে স্মৃতি কাতর করে তুলছে। স্নেহভাজন সাইফু অর্থাৎ সাইফ মাহমুদের এ স্মৃতিগ্রন্থ পাঠক প্রিয়তা পাবে এ প্রত্যাশা আমার রয়েছে।
ভালেবাসা সহ-
নাসির উদ্দীন ইউসুফ
(Showing 1 to 2 of 2 items)
demo content