"ভারত, মুজিবুর রহমান, বাঙলাদেশের স্বাধীনতা ও পাকিস্তান (অজানা তথ্য)" বইটির ফ্ল্যাপ-এর লেখাঃ ‘ভারত, মুজিবুর রহমান, বাঙলাদেশের স্বাধীনতা এবং পাকিস্তান’ বইটি কেবলমাত্র বাঙলাদেশের ১৯৬২-৭১ কালপর্বের রাজনৈতিক এবং সামরিক ইতিহাস নয়। তৎকালীণ পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ, যারা পাকিস্তানের সামরিক দমন এবং ধর্মীয় গােড়ামী থেকে মুক্তি খুঁজছিল, সেই উদ্দীপ্ত বাঙ্গালীকে একটি অসাম্প্রদায়িক-গণতান্ত্রিক যুদ্ধে সমর্থণ জুগিয়ে কেমন করে ভারত স্বাধীনতা এবং গণতন্ত্রের বাতিঘর হয়ে উঠেছিল, সে বিষয়টি বর্ণনা করা হয়েছে এ বইটিতে। ১৯৭১ সনে বাঙলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্বদানকারী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ভারতীয় সেনাবাহিনীর সহযােগিতা দক্ষিণ এশিয়ায় নতুন রাজনৈতিক বিন্যাসের সূচনা করে। ঠাণ্ডাযুদ্ধের ময়দানে ভারত আলােড়ন তােলে এবং সাফল্য পায়। কিন্তু সেটা একটা পর্যায়ে পৌছানাের পর সেখানে রক্ত আর অশ্রুজলের মূল্য চুকিয়ে দিতে বাধ্য হতে হয় ভারতকে। রক্ত ঝরিয়ে দমন করার লক্ষ্যে পাকিস্তান অসম্ভব রকমের ভয়ঙ্কর একটা সামরিক বাহিনী গড়ে তােলে দুটি দেশের সীমান্তের কথা মাথায় রেখে। তার একটি হচ্ছে ভারত আইএসআই, সন্ত্রাসী লস্কর-ই তৈয়বা, হরকাতুল জিহাদ-ইইসলামী এবং জেইস-ই-মােহম্মদী গড়ে তােলে ভারতের বিরুদ্ধে আর আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে গড়ে তােলে তালিবান-ভিত্তিক আধা-স্থানীয় সন্ত্রাসী দল আল-কায়দা এবং হাক্কানী নেটওয়ার্ক। সম্প্রসারনবাদী পাকিস্তানের লক্ষ্য ভারতের কাছ থেকে কাশ্মীর ছিনিয়ে নেয়া। সে জন্য তাদের দরকার আফগান-কেন্দ্রীক একটি সামরিক কৌশল, যাতে করে ভবিষ্যতে ভারতের সাথে যুদ্ধে পাকিস্তান আফগানিস্তানকে ব্যবহার করতে পারে। ১৯৭১ সনে বাঙলাদেশের যুদ্ধের ময়দান থেকে পাকিস্তানের ভেতর এই পরিকল্পনা সঞ্চারিত হয়েছে, যা এখন মধ্য এশিয়ায় আফপাক যুদ্ধের ক্ষেত্রে পাকিস্তানের চালিকা শক্তি। তবে বাঙলাদেশই পাকিস্তানের জন্য প্যান্ডােরার বাক্সটি খুলে দিয়েছে। পাকিস্তানের বেলুচ, সিন্ধী এবং পশতুনদের সুপ্ত জাতিগত স্বাদেশিকতার তীব্র আবেগের পুনরুত্থান ঘটিয়ে তাতে আগুনের স্ফুলিঙ্গ ছুড়ে দিয়েছে। প্রতিদিন সেখানে বােমাবাজিতে শত শত সাধারণ নাগরিক মৃত্যুবরণ করছে। বাঙলাদেশের স্বাধীনতার পথ ধরেই কি পাকিস্তানে এই পরিস্থিতির সূত্রপাত? ইসলামাবাদ অবশ্যই আজ অভ্যন্তরীণ গভীর সঙ্কটে নিপতিত। কিন্তু নিজেকে ছাড়া দোষারােপ করবার তার অন্য কোনাে জায়গা নেই। পূর্ব পাকিস্তান হারাবার ক্ষতি ভােলা তার পক্ষে সম্ভব নয়। তবু তারা আশা করছে ধর্মের আঠা দিয়ে এই পৃথক জাতি সত্বাগুলােকে জুড়ে রাখা সম্ভব হবে। তাই পাইকারীহারে ইসলামিকরণের সাংঘাতিক বিপজ্জনক বিশ্বাস-ভিত্তিক সূত্র উদ্ভাবন করা হয়েছে সেখানে। ফলে মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা প্রচুর বেড়েছে এবং তার মাধ্যমে ভারতে সন্ত্রাসের বীজ ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এই ইসলামিকরণের নীতির ফলেই পাকিস্তান আজ বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসের অন্যতম একটি উৎপত্তিস্থলে পরিণত হয়েছে। যার শুরুতে রয়েছে দুটি সীমান্ত-রেখা, ভারত আর আফগানিস্তান। কেবলমাত্র বাঙলাদেশ বেরিয়ে এসেছে সর্বাগ্রে।
Title
ভারত, মুজিবুর রহমান, বাঙলাদেশের স্বাধীনতা ও পাকিস্তান (অজানা তথ্য)