"তাফহীমুল কুরআন ১ম খণ্ড "বইটির ভূমিকা : এই নিবেদনের শিরােনামে ‘ভূমিকা’ শব্দটি দেখে আমি কুরআন মজীদের ভূমিকা লিখতে বসে গেছি বলে ভুল ধারণা করার কোনাে কারণ নেই। এটা কুরআনের নয়, বরং তাফহীমুল কুরআনের ভূমিকা। দু’টি উদ্দেশ্য সামনে রেখে আমি এ ভূমিকা লেখায় হাত দিয়েছি। এক, কুরআন মজীদ অধ্যয়ন শুরু করার আগে আগে একজন সাধারণ পাঠককে এমন কিছু কথা উত্তমরূপে জেনে নিতে হবে যেগুলাে শুরুতেই জেনে নিলে তার পক্ষে কুরআনের বক্তব্য অনুধাবন করা সহজ হয়ে যায়। অন্যথায় কুরআন অধ্যয়নের মাঝখানে বারবার একথাগুলাে তার মনে সন্দেহ সঞ্চার করতে পারে। অনেক সময় শুধুমাত্র এগুলাে না বুঝার কারণে মানুষ কুরআনের অন্তরনিহিত অর্থের কেবলমাত্র উপরিভাগে ঘােরাফেরা করতে থাকে বছরের পর বছর ধরে। ভেতরে প্রবেশ করার কোনাে পথই সে খুঁজে পায় না। দুই. কুরআন বুঝার চেষ্টা করার সময় মানুষের মনে যে প্রশ্নগুলাের উদয় হয় সর্বপ্রথম সেগুলাের জবাব দিতে হবে। এ ভূমিকায় আমি কেবলমাত্র এমন প্রশ্নের জবাব দেবাে যেগুলাে প্রথম প্রথম আমার মনে জেগেছিলাে অথবা পরে আমার সামনে আসে। এছাড়াও যদি আরাে কিছু প্রশ্নের উত্তর দেয়ার প্রয়ােজন বাকি থেকে যায় তবে সেগুলাে যেনাে আমাকে অবহিত করা হয় । ইনশাআল্লাহ পরবর্তী সংস্করণে এই ভূমিকার মধ্যে তার জবাব সংযােজন করা হবে। কুরআন পাঠকের সংকট সাধারণত আমরা যেসব বই পড়ে থাকি তাতে থাকে একটি নির্দিষ্ট বিষয়বস্তু। একটি বিশেষ রচনাশৈলীর আওতায় এ বিষয়বস্তুর ওপর ধারাবাহিকভাবে তথ্য সরবরাহ এবং বিভিন্ন মতামত ও যুক্তির অবতারণা করা হয়। এজন্য কুরআনের সাথে এখনাে পরিচয় হয়নি এমন কোনাে ব্যক্তি যখন প্রথমবার এ কিতাব অধ্যয়ন করতে যান তখন তিনি একটি চিরাচরিত আশা নিয়েই এগিয়ে যান। তিনি মনে করেন, সাধারণ বই-পুস্তকের মতাে এ কিতাবেও প্রথমে বিষয়বস্তু নির্ধারিত থাকবে, তারপর মূল আলােচ্য বিষয়কে অধ্যায় ও অনুচ্ছেদে বিভক্ত করে বিন্যাসের ক্রমানুসারে এক একটি বিষয়ের ওপর আলােচনা করা হবে। এভাবে জীবনের এক একটি বিভাগকে আলাদা আলাদাভাবে নিয়ে সে সম্পর্কে পূর্বোক্ত বিন্যাসের ক্রমানুসারে বিধান ও নির্দেশাবলী লিপিবদ্ধ থাকবে। কিন্তু কিতাবটি খুলে পড়া রু করার পর তিনি দেখেন সম্পূর্ণ ভিন্ন এক চিত্র। তিনি এখানে দেখেন এমন একটি বর্ণনাভংগী যার সাথে ইতিপূর্বে তার কোনাে পরিচয় ছিলাে না। এখানে তিনি দেখেন আকীদাবিশ্বাস সম্পর্কিত বিষয়াবলী, নৈতিক বিধি-নির্দেশ, শরীয়তের বিধান, দাওয়াত, উপদেশ, সতর্কবাণী, সমালােচনা-পর্যালােচনা, নিন্দা-তিরস্কার, ভীতি প্রদর্শন, সুসংবাদ, সান্ত্বনা, যুক্তি-প্রমাণ, সাক্ষ্য এবং ঐতিহাসিক কাহিনী ও প্রাচীন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের প্রতি ইংগিত। এগুলাে বার বার একের পর এক আসছে। একই বিষয়বস্তুকে বিভিন্ন পদ্ধতিতে বিভিন্ন শব্দের মােড়কে পুনর্ব্যক্ত করা হচ্ছে। একটি বিষয়বস্তুর পর আর একটি এবং তারপর আকাংখিতভাবে তৃতীয় আর একটি বিষয়বস্তু শুরু হয়ে যাচ্ছে । বরং কখনাে কখনাে একটি বিষয়বস্তুর মাঝখানে দ্বিতীয় একটি বিষয়বস্তু অকস্মাৎ লাফিয়ে পড়ছে। বাক্যের প্রথম পুরুষ ও দ্বিতীয় পুরুষের দিক পরিবর্তন হচ্ছে বারবার এবং বক্তব্য বারবার মােড় পরিবর্তন করছে । বিষয়বস্তুগুলােকে অধ্যায় ও অনুচ্ছেদে বিভক্ত করার কোনাে চিহ্নও কোথাও নেই। ইতিহাস লেখার পদ্ধতিতে কোথাও ইতিহাস লেখা হয়নি। দর্শন ও অতিপ্রাকৃতিক বিষয়াবলীকে ন্যায়শাস্ত্র ও দর্শনের ভাষায় লেখা হয়নি। মানুষ ও বিশ্ব-জাহানের বস্তু ও পদার্থের আলােচনা করা হয়েছে, | কিন্তু জীববিদ্যা ও পদার্থ বিজ্ঞানের পদ্ধতিতে করা হয়নি। সভ্যতা, সংস্কৃতি, রাজনীতি, অর্থনীতি ও সমাজ নজীবনের বিভিন্ন বিষয়ের ওপর আলােচনা করা হয়েছে, কিন্তু তাতে সমাজ বিজ্ঞানের পদ্ধতি অনুসরণ