ভূমিকা গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ সম্ভবত পুরো পৃথিবীতে সবচেয়ে জনপ্রিয় লেখক। তাঁর অধিকাংশ বই-ই বাংলা ভাষায় অনূদিত হয়েছে। ‘সহস্র বছরের নিঃসঙ্গতা’ পড়ার পরে এক সমালোচকের লেখায় ‘কর্নেলকে কেউ চিঠি লেখে না’ বিষয়ে একছত্র লেখা পড়ে মূল বইটি পড়তে খুব কৌতুল বোধ করি। কিন্তু বইটির বঙ্গানুবাদ যোগাড় করতে অসমর্থ হই। শেষ পর্যন্ত আমার পিতৃদেব কলকাতা থেকে বাংলা ভাষার নয় ইংরেজি ভাষার ছোট উপন্যাসিকাটি এনে দেন। বইটি পড়ে এমন তাড়না অনুভব করি যে মনে হয় সব দেশে সবকালে আত্মমর্যাদাবোধ ও বাস্তবতার সঙ্কটে জর্জরিত কর্নেলরা ছিলেন, আছেন, থাকবেন। তাই বইটির ভাষান্তর শুরু করি।
অনুবাদ শেষ হবার পর মনে হয় শুধু এই উপন্যাসিকা কেন, মার্কেজের যারা নতুন পাঠক তাঁদের জন্য কয়েকটা গল্পও সন্নিবেশিত করে দেয়া যেতে পারে এক মলাটে। মার্কেজের উপন্যাসিকা এবং গল্পগুলোর মধ্যে ভাষাগত ব্যবধান বিস্তর। একটা গল্প ‘বালথাজারের চমৎকার বিকেল’ গল্পটি পেয়ে যাই ল্যাটিন আমেরিকান গল্প সংকলনের মধ্যে, যদিও এটা ‘নো ওয়ান রাইট টু দ্যা কলোনেল এন্ড আদার স্টোরিজ’ বইটিরই একটি গল্প যেটা ল্যাটিন আমেরিকান গল্পসংগ্রহে সংকলিত করা হয়েছে। অন্যগুলো ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোড করেছি। আরো রয়েছে। কিন্তু বইয়ের আয়তনের কথা চিন্তা করে ভিন্ন স্বাদের ভিন্ন মাত্রার ছয়টি গল্প সংকলিত করা হয়েছে।
এ বইটি মার্কেজের প্রথম দিকের গল্প সংকলন ‘নো ওয়ান রাইট টু দ্যা কলোনেল এন্ড আদার স্টোরিজ’-এর সব গল্পগুলোর অনুবাদ নিয়ে নয়। ‘বালথাজারের চমৎকার বিকেল’ গল্পটিতে একটি ছোট শিশুকে খুশি করতে একজন দরিদ্র কাঠ মিস্ত্রির আত্মত্যাগকে রূপকের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে। ‘একটি নীল কুকুরের চোখ’ গল্পে স্বপ্নের মধ্যে দেখা দুজন মানুষ পরস্পরকে আজীবন খুঁজে ফেরে সেটার রূপকে আমরা যে অনেক কিছুই গোপনে করি কিন্তু বাস্তবে তা স্বীকার করার সাহস থাকে না সেই চিত্রই কল্পবাস্তবতায় তুলে ধরেছেন লেখক। ‘বিশাল পাখাওয়ালা বুড়ো ফেরেশতা’ গল্পে প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে মানুষ যেভাবে একসময়ের যত্নের জিনিসও পরিত্যক্ত করে ফেলে সে বিষয়টির নিষ্ঠুরতা ফুটে উঠেছে। উড়োজাহাজের ঘুমন্ত সুন্দরী গল্পে একজন ভিন্নভাষী সুন্দরী রমনীও যে পাশের সীটের বিগতযৌবন পুরুষের মনে কামভাব সৃষ্টি করতে সক্ষম তার জ্বলন্ত উদাহরণ। ‘সে সব দিনগুলোর একটি’ গল্পে লেখক স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কিন্তু ধৈর্যশীল সৎ সহানুভূতিশীল মানুষের কথা এক আচড়ে ফুটিয়ে তুলেছেন। ‘ইভা তার বিড়ালের মধ্যে’ গল্পে জাদুবাস্তবতার নিপুন বুননে পরজন্মের তত্ত্ব বিশ্লেষিত।
অনুবাদের ক্ষেত্রে তথ্যগত বিষয়গুলোতে একনিষ্ঠ থাকার চেষ্টা করা হয়েছে। মার্কেজের জাদুবাস্তবতার দ্বন্দ্ববিহ্বল, স্বপ্নময় সংরক্ত ও জীবনঘনিষ্ট জগতে পাঠককে স্বাগতম।
-বিপাশা মন্ডল
সূচি কর্নেলকে কেউ চিঠি লেখে না বালথাজারের চমৎকার বিকেল একটি নীল কুকুরের চোখ বিশাল পাখাওয়ালা বুড়ো ফেরেশতা উড়োজাহাজের ঘুমন্ত সুন্দরী সে সব দিনগুলোর একটি ইভা মূর্ত বিড়ালের মধ্যে
Title
কর্নেলকে কেউ চিঠি লেখে না ও ছয়টি গল্প (পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখকদের বই)
তিনি তরুণ কবি হিসেবেই সমধিক পরিচিত। সমান দক্ষতা রয়েছে কথাসাহিত্য ও অনুবাদে। প্রথম কাব্যগ্রন্থ সহাস্য বিষন্নতা প্রকাশিত হয় ২০০৭ সালে। প্রথম উপন্যাস আরমান শেখ ও তার শেকড় সংক্রান্ত জটিলতা (২০০৮)-এর জন্য পেয়েছেন খুলনা রাইটার্স্ পদক ২০০৯। তৃণমূল মানুষকে খুব কাছে থেকে দেখেছেন। প্রান্তিক সাংবাদিকতার সুবাদে পেয়েছেন প্রাকৃতজন পুরস্কার ২০০১। তাঁর উপন্যাসের প্রতি পরতে মানুষের জীবনবোধ, দ্বন্ধ, দর্শ্ন, জীবনকে নৈর্ব্যক্তিকভাবে দেখার প্রবণতা লক্ষনীয়। এই সঙ্গে প্রবল আবেগময় ভাষার সহজ সরল বুননে পাঠককে ধরে রাখেন উপন্যাস শেষ না হওয়া পর্য্ন্ত। একাধিক বই পুনঃমুদ্রিত হয়েছে। এ লেখকের প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ২৬টি।